সুনামগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত হাওরপাড়ের কৃষকের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে এবং আগামী বোরো ফসল রক্ষায় ও ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে দি ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইইবি)-এর কাছে মঙ্গলবার ১২ দফা প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন। আইইবি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী খন্দকার মঞ্জুর মোরশেদের কাছে ই-মেইলে পাঠানো প্রস্তাবনার বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি।
হাওরের বোরো ফসল রক্ষায় ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে, সুনামগঞ্জে হাওরের বোরো ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে সকল প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন অবশ্যই ২০ নভেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। ঠিকাদার কিংবা পিআইসির কাজ অবশ্যই ১৬ ডিসেম্বর শুরু করতে হবে। যদি কেউ এতে ব্যর্থ হন তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। পিআইসি গঠন ও বাতিল করার প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ক্ষমতা জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে দিতে হবে। প্রকল্পের অর্থ ছাড় ও উপজেলা তদারকি কমিটিতে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলীকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনকে প্রতিটি বাঁধের কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে। এবং সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও পিআইসিকে কাজের জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে জবাবদিহির ব্যবস্থা রাখতে হবে। পিআইসিতে সংসদ সদস্যের প্রতিনিধি তিনজনের বদলে একজন রাখতে হবে। স্থানীয় কৃষক (একেবারে বাঁধের পাশের বাসিন্দা) একজন, উপজেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি একজন রাখতে হবে। পিআইসির সদস্যরা সভা করে যোগ্য একজনকে সভাপতি মনোনীত করবেন। আগে থেকে সভাপতি নির্ধারণ করা যাবে না। বাঁধের কাজে অনিয়ম, অবহেলা, গাফিলতির অভিযোগে পিআইসি বাতিল, বিল উত্তোলন বন্ধের ক্ষমতা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে দিতে হবে। কাজ শুরুর দিন থেকেই সংশ্লিষ্ট বাঁধের পাশে পিআইসির সভাপতি/সম্পাদকের নাম-ঠিকানা, প্রকল্প বরাদ্দ, কাজের সময়সীমা উল্লেখ করে সাইনবোর্ড টাঙাতে হবে। অবশ্যই ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সকল বাঁধের কাজ শেষ করতে হবে। কোনো অজুহাতেই সময় বৃদ্ধি করা যাবে না। যদি কেউ যথাসময়ে কাজ শেষ না করে তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রতিটি কাজের পিআইসি ও ঠিকাদারদের নাম ঠিকানা, যোগাযোগের জন্য মোবাইল নম্বর প্রকাশ করতে হবে। বাঁধ নির্মাণে দরপত্র ও পিআইসি’র সকল কাজে বাংলা ভাষার ব্যবহার চালু করতে হবে। সকল দরপত্র, পিআইসির কাজ এবং কাজের বরাদ্দ স্থানীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকায় প্রকাশ করতে হবে যাতে এলাকার লোকজন কাজ ও বরাদ্দ সম্পর্কে জানতে পারেন। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের কাজে বাঁশ, বস্তা, চাটাই এর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বাঁধের পরিমাণমত ঢালু রাখতে হবে। কোন অবস্থাতেই বাঁধের গোড়া বা নিচ থেকে মাটি তুলা যাবে না। বাঁধ নির্মাণ পরিকল্পনা গ্রহণ, বাঁধ এবং হাওর এলাকা জরিপকালে স্থানীয় বাসিন্দা ও জমির মালিকের (কৃষকদের) মতামত ও পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। স্থানীয়দের মতামতকে বেশী করে গুরুত্ব দিয়ে সকল পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এর আগে এই প্রস্তাবনাটি গত ৩১ আগস্ট জেলা প্রশাসকের কাছে প্রদান করে হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন।
বিগত সময়ে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নিয়ে যেভাবে সুনামগঞ্জে অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে, এবার যাতে এ ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির পুনরাবৃত্তি না হয়, সেদিকে কড়া নজর রেখে এ ১২ দফা প্রস্তাবনার বাস্তবায়ন চাই আমরা। তাই বাঁধের কাজ শুরুর আগে দ্রুত এ প্রস্তাবনাগুলো সংশ্লিষ্টরা বাস্তবায়ন করবেন বলে আমরা আশাবাদী।