স্টাফ রিপোর্টার ::
তিন দফায় সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলায় ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায় ক্ষমতাসীন আ.লীগে কোন্দলের কারণে দলীয় প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে। অন্যদিকে দেশের অন্য বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি শক্তিশালী প্রার্থী দিতে না পারায় তাদের ভরাডুবি হয়। পুরো জেলায় জাপা মাত্র ২টি ইউনিয়নে জয়লাভ করে।
জেলার ১১টি উপজেলায় দলীয় প্রার্থী দিতে গিয়ে দলীয় বিপাকে পড়ে ক্ষমতাসীন দল আ.লীগ। ৩১ মার্চ ছাতক উপজেলায় জেলার প্রথম দফার নির্বাচনে ৯টিতে আ.লীগের দলীয় প্রার্থী জয়লাভ করেন। ৩টিতে আ.লীগের বিদ্রোহী ও ১টিতে বিএনপি প্রার্থী জয়লাভ করেন। এই উপজেলায় স্থানীয় এমপি মুহিবুর রহমান মানিক ও পৌর মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী ভাগাভাগি করে দলীয় প্রার্থী পেলেও প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে তাদের সমর্থিত বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। এতে কয়েকটি ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থী হেরে যান। জয়ী হন বিদ্রোহী প্রার্থী।
পরের দফায় সুনামগঞ্জ সদর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় নির্বাচন হয়। এতে সদর উপজেলায় আ.লীগের ভরাডুবি হয়, মাত্র ২টি ইউনিয়নে জয়লাভ করে আ.লীগের প্রার্থী। এছাড়া বিএনপি ৩জন, বিএনপি’র বিদ্রোহী ১, জমিয়তে উলামায়ের ১জন ও জাপার ১জন, স্বতন্ত্র ১জন জয়লাভ করেন।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে বিএনপি’র মাত্র ১জন প্রার্থী জয়লাভ করেন। এছাড়া জামায়াত ঘরানার ১জন জয়লাভ করেন। বাকিগুলো আ.লীগের মনোনীত ও বিদ্রোহীরা ভাগাভাগি করে নেন।
দোয়ারাবাজার উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ১টিতে ক্ষমতাসীন আ.লীগের প্রার্থী জয়লাভ করেন। ৩টিতে আ.লীগের বিদ্রোহী ও বাকিগুলোতে বিএনপি’র প্রার্থী জয়লাভ করেন। এই উপজেলায় স্থানীয় সাংসদ মুহিবুর রহমান মানিক ও উপজেলা আ.লীগের আহ্বায়ক ফরিদ আহমদ তারেক প্রার্থী মনোনীত করা নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে ছিলেন।
দিরাই, শাল্লা ও জগন্নাথপুর উপজেলায় একই দিনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। শাল্লা উপজেলায় বিএনপি’র ভরাডুবি ঘটে। আ.লীগের তিনজন দলীয় ও ১জন বিদ্রোহী প্রার্থী জয়লাভ করেন।
দিরাই উপজেলায় ২টিতে বিএনপি দলীয় প্রার্থী ও ২টিতে দলটির বিদ্রোহী প্রার্থী জয়লাভ করেন। আ.লীগের ২বিদ্রোহী প্রার্থী এই উপজেলায় জয় লাভ করেন। বাকিগুলো আ.লীগের দলীয় প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। দিরাই-শাল্লা উপজেলায় দলীয় মনোনয়ন নিয়ে আ.লীগের স্থানীয় এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও জেলা আ.লীগের সভাপতি মতিউর রহমান বিরোধে জড়িয়ে যান। সুরঞ্জিতের এলাকায় ৩টি ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থী বাগিয়ে নেন মতিউর রহমান। ৩ প্রার্থীর মধ্যে দুই প্রার্থী নির্বাচনে পরাজিত হন। দুটিতে সুরঞ্জিত সেন সমর্থিত বিদ্রোহী প্রার্থী জয়লাভ করেন।
জগন্নাথপুর উপজেলায় সবকটিতে হেরে যায় বিএনপি মনোনীত প্রার্থী। ৭টি ইউনিয়নের ৩টি আ.লীগের বিদ্রোহী জয়লাভ করেন। বাকি দলীয় প্রার্থী জয়ী হন। আ.লীগের দলীয় কোন্দল ও বিএনপি’র শক্তিশালী প্রার্থী না থাকায় দলীয় প্রার্থীদের পরাজয় হয়।
শেষ দফায় জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, ধর্মপাশা, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তাহিরপুর উপজেলায় আ.লীগের ভরাডুবি ঘটে। এই উপজেলায় আ.লীগের ১জন, বিএনপি’র ৪জন ও আ.লীগের বিদ্রোহী ২জন জয়লাভ করেন।
ধর্মপাশা উপজেলায় আ.লীগের ৫জন, আ.লীগের বিদ্রোহী ৪জন, বিএনপি’র ১জন জয়লাভ করেন। বিশ্বম্ভরপুরে ১টিতে আ.লীগ, ২টি আ.লীগের বিদ্রোহী ও ১টিতে বিএনপি’র বিদ্রোহী জয়লাভ করেন। এখানে আ.লীগ ও বিএনপি’র দু’দলের মনোনীতরা বিদ্রোহীদের কাছে কপোকাত হন।
জামালগঞ্জ উপজেলায় আ.লীগের আধিপত্য ছিল চোখে পড়ার মত। ৪টির মধ্যে ৩টি আ.লীগের দলীয় প্রার্থী ও ১টি বিএনপি’র বিদ্রোহী প্রার্থী জয়লাভ করেন। বিএনপি’র দলীয় প্রার্থীরা এই উপজেলায় দাঁড়াতেই পারেনি ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের বিপক্ষে।
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, দলীয় ও বিদ্রোহী মিলিয়ে ছাতক, শাল্লা, জগন্নাথপুর ও জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা উপজেলায় আ.লীগ ভালো করেছে। সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, দিরাই উপজেলায় আশাতীত ফলাফল করতে পারেনি ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা। দলীয় নেতাকর্মীরা মনে করছেন দলীয় কোন্দল ও বিদ্রোহীদের কারণে চারটি উপজেলায় ভালো ফলাফল করতে পারেনি আ.লীগ।
তাহিরপুর ও সুনামগঞ্জ সদর, দোয়ারাবাজার উপজেলায় উপজেলায় বিএনপি’র প্রার্থীরা ভালো ফলাফল করেছেন। ভরাডুবি হয়েছে শাল্লা, জামালগঞ্জ, ছাতক, জগান্নাথপুর, ধর্মপাশা উপজেলায়। দুর্বল প্রার্থী দেয়া প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন বলে মনে করেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।