“অচেনা শহরে ঠাঁই দিয়ে ছিলে যারে/সে আজ তোমাকে বড় বেশি মিস করে” অথবা “তোমার চোখের কাজল ছিল বড়ই কালো/সেই চোখেতে ছিল আরো মায়ার আলো” চমকপ্রদ মনমাতানো গানের এই চরণ দুটি কবি ও গীতিকার বাবর বখ্ত-এর “অচেনা শহরে” অ্যালবাম থেকে নেওয়া। সম্প্রতি প্রকাশিত অ্যালবামে বাবর বখ্ত-এর কথায় ও অমিত কর-এর সুর ও সংগীতে গানে কণ্ঠ দিয়েছেন এন্ড্রু কিশোর, সুবীর নন্দী, ফাহমিদা নবী, কাজী শুভ, কিশোর দাস, পুলক, রাজীব ও স্বরলিপি। ৮টি গান এই অ্যালবামটিকে সমৃদ্ধ করেছে। ইতোপূর্বে তাঁর দুটি গীতি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। উড়াল প্রকাশ থেকে “জীবন এক অচেনা নদী” ও চৈতন্য প্রকাশনী থেকে “হাঁটতে হাঁটতে স্মৃতি কুড়াই তুমি কুড়াও ফুল”। দুটি বইই পাঠক মহলে বেশ সমাদৃত হয়েছে।
সুনামগঞ্জ শহরের কাদা-মাটিতে বেড়ে ওঠা তরুণ বাবর বখ্ত। সুনামগঞ্জ শহরস্থ আরপিননগরের ঐতিহ্যবাহী বখ্ত পরিবারের সন্তান বাবর বখত। শৈশব-কৈশোর থেকেই নিজেকে যোগ্য হিসেবেই মেলে ধরেছেন। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হোসেন বখ্ত-এর দশ ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে তিনি সপ্তম। তাঁর প্রজ্ঞা, মেধা ও সৃজনশীল লেখনির মাধ্যমে পারিবারিক পরিচয় ছাপিয়ে নিজের পরিচয়ে হয়েছেন অনন্য, অসাধারণ।
বাবর বখ্ত নব্বইর দশকে কলেজের শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে সুদূর আমেরিকা থিতু হয়েছেন। প্রবাসে থাকলেও মন পড়ে থাকে আশৈশব কাটানো ভালো লাগা, ভালোবাসার শহর সুনামগঞ্জে। এ শহর তাঁকে বেঁধে রেখেছে ভালোবাসার বাঁধনে। এখানে স্কুল, কলেজের সহপাঠী, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, শহরের কূলঘেঁষে বয়ে চলা সুরমা নদী, খুব টানে এই কবিকে। কারণ সুনামগঞ্জের এই নৈসর্গিক সৌন্দর্য, অপরূপ মেঘালয় পাহাড় আর সুরমা নদীই তো বাবর বখ্তকে কবি বানিয়েছে। অসংখ্য আউল-বাউল আর গুণী কবিদের চারণভূমি এই জেলা। মূলত তাঁদেরই উত্তরসূরী তিনি। আশির দশকে সুনামগঞ্জে যে ক’জন কবি, লেখক সাহিত্যাঙ্গনে সরব ছিলেন বাবর বখ্ত তাঁদের অন্যতম।
সদা হাস্যজ্জ্বোল এই গুণী মানুষটি মিশিগান থেকে তাঁর অনুভূতিতে বলেন, কবিতা ও গানবেষ্টিত ছিল আমার শৈশব। পেয়েছিলাম কবিতা ও গানপাগল কিছু বন্ধু। সুনামগঞ্জ সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে সমৃদ্ধ একটি শহর। আমি আশির দশকে কবিতা দিয়ে শুরু করি। আমার গানগুলো যদি মানুষের মনে এতটুকু নাড়া দিতে পারে তাহলে আমার প্রচেষ্টা সফল হবে। গানই আমার জীবন। রলখা ছাড়া আমি শূন্য। গান ছাড়া আমি আমি নই।
জয়তু- বাবর বখ্ত। আপনি লেখনি থেকে দূরে সরে যাবেন না। গানের শূন্যতা যেন আপনাকে স্পর্শ করতে না পারে।