সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
বৃষ্টিতে মে মাস জুড়েই ছিল তাপমাত্রায় স্বস্তি। নতুন মাস জুন আসতেই বৃষ্টি কেটে গিয়ে আবার রোদের তেজে ভোগান্তি নেমেছে, আবার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা দিয়েছে তাপপ্রবাহ। তবে ভয় পাওয়ার কারণ নেই। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, দু’একদিনে বৃষ্টিতে তাপমাত্রা কমে স্বস্তি ফিরবে।
শুধু তাই নয়, আবহাওয়ার নানা অস্বাভাবিকতার মধ্যে এবার বর্ষাকাল আসছে মোটামুটি নিয়ম মেনেই। আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, জুন মাসের ১৫ তারিখের মধ্যেই মৌসুমী বায়ু (বর্ষা) সারাদেশে বিস্তার লাভ করে প্রকৃতিকে বৃষ্টিমুখর করে তুলতে পারে। ক্যালেন্ডারের হিসাব অনুযায়ী বর্ষা ঋতুর প্রথম মাস আষাঢ়ও শুরু হচ্ছে ১৫ জুন।
গত এপ্রিল মাসে দেশ ছিল প্রায় বৃষ্টিহীন। স্বাভাবিকের চেয়ে ৫২ শতাংশ কম বৃষ্টি হওয়ায় তাপপ্রবাহে জনজীবন হয়ে উঠেছিল দুর্বিষহ।
আবহাওয়া অধিদফতরের একজন পূর্বাভাস কর্মকর্তা শনিবার দুপুরে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রতিবছর মৌসুমী বায়ু (বর্ষা) জুনের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশের ভূখন্ডে মানে টেকনাফ উপকূলে আসে। তবে স্বাভাবিকভাবে এ সময় এক সপ্তাহ পিছিয়ে ধরা হয়। আমরা এবার আশা করি মৌসুমী বায়ু ১৫ জুনের মধ্যে সারাদেশে বিস্তার লাভ করবে। এতে আষাঢ় মাসে সারাদেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হবে।’
মৌসুমী বায়ু শনিবার মিয়ানমার উপকূলের দিকে রয়েছে জানিয়ে এ আবহাওয়াবিদ বলেন, ‘এখনো দেশের কিছু কিছু স্থানে বৃষ্টি হচ্ছে। দু’একদিনের মধ্যে বৃষ্টির প্রবণতা আরও বাড়বে। এতে তাপমাত্রা কমে যাবে।’
শনিবার সকাল ৯টায় আবহাওয়ার পূর্বাভাস প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা, মাদারীপুর, রাজশাহী, ঈশ্বরদী, রংপুর, দিনাজপুর, সৈয়দপুর, খুলনা, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রিকে মৃদু, ৩৮ এর চেয়ে বেশি থেকে ৪০ ডিগ্রিকে মাঝারি ও ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়ে বেশি তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়।
শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৩৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময়ে ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শনিবার সকাল ৯টা থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও খুলনা বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের কিছু কিছু স্থানে বৃষ্টি হয়েছে। এ সময়ে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে শ্রীমঙ্গলে, সেখানে ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া মংলা, সাতক্ষীরা ও কক্সবাজারেও বৃষ্টি হয়েছে।
অপরদিকে দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস দিতে আবহাওয়া অধিদফতরের গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি পূর্বাভাস প্রতিবেদনে জানিয়েছে, জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে সারাদেশে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু (বর্ষা) বিস্তার লাভ করতে পারে।
জুন মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথা জানিয়ে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জুন মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি মৌসুমী নি¤œচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এ মাসে মৌসুমী বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের উত্তর, মধ্য এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কিছু কিছু স্থানে স্বাভাবিক বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতরে বৃহ¯পতিবার কমিটির নিয়মিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অধিদফতরের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ও বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন আহমেদ এতে সভাপতিত্ব করেন।
সামছুদ্দিন আহমেদ জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র প্রভাবে মে মাসে সারাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ২৬ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে এবং ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু গত ২১ মে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে চট্টগ্রামের কাছ দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করেছিল।