কিছু সরকারি কর্মকর্তা আছেন যারা নিজেদের জনগণের সেবক না ভেবে প্রভুর মতো আচরণ করেন। এতে একদিকে জনগণের ভোগান্তি যেমন বাড়ে, তেমনি রাষ্ট্রের সব উন্নয়নপ্রচেষ্টাও বাধাগ্রস্ত হয়। এমনটি কখনোই কাম্য নয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর কার্যালয়ে সকল মন্ত্রণালয় বিভাগ ও দপ্তরের সচিবদের সঙ্গে বার্ষিক কর্মস¤পাদন চুক্তি ২০১৭-১৮ (এনুয়াল পারর্ফমেন্স এগ্রিমেন্ট-এপিএ) স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘আমলাতান্ত্রিক মনোভাব পরিহার করে নিজেদের জনগণের খাদেম বলে বিবেচনা করতে হবে। প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই (যারা ক্ষমতায় যেতে চায়) দেশকে সামনে এগিয়ে নেয়ার জন্য একটি কার্যকর অর্থনৈতিক নীতি থাকা উচিত এবং দেশের আমলাতন্ত্রকেও সেভাবে লক্ষ্য অর্জনে আন্তরিকতার সঙ্গে স¤পৃক্ত থাকতে হবে। আমরা তখনই দেশকে সামনে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হব যখন আপনারা (সরকারি কর্মচারিরা) জনগণের সেবক হিসেবে ঠিকভাবে কাজ করবেন।’
তিনি আরো বলেন, আমাদের সংবিধানের ৩৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হচ্ছেন আপনারা সরকারি কর্মচারীরা। এখানে কিন্তু কর্মচারী বলা আছে। সেক্ষেত্রে আপনাদেরও দায়বদ্ধতা রয়েছে। দায়বদ্ধতা রয়েছে সংবিধানের কাছে, দায়বদ্ধতা রয়েছে জনগণের কাছে। কারণ, জনগণ মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যা কামাই করে সেটা দিয়েই আজকে সকলের বেতন-ভাতা, যা কিছু তা হচ্ছে। জনগণের শ্রমেরই এই ফসল।
প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার বক্তৃতার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘সমস্ত সরকারি কর্মচারীকেই আমি অনুরোধ করি, যাদের অর্থে আমাদের সংসার চলে তাদের সেবা করুন। যাদের অর্থে আজকে আমরা চলছি তাদের যেন কষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। যারা অন্যায় করবে তাদের কঠোর হস্তে দমন করবেন। কিন্তু সাবধান একটা নিরাপরাধ লোকের ওপর যেন অত্যাচার না হয়।’
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই বক্তব্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সময়োপযোগী। প্রধানমন্ত্রী এর আগেও অনেকবার প্রশাসনের প্রতি অনুরূপ আহ্বান জানিয়েছেন। নির্দেশও দিয়েছেন।
সংবিধানেও জনপ্রশাসনে কর্মরতদের কাজ কেমন হবে তার উল্লেখ রয়েছে। সংবিধানের ২১-এর (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সকল সময় জনগণের সেবা করিবার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য।’ অথচ অনেক ক্ষেত্রে এর ভিন্নরূপ দেখা যায়।
সরকার ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের পর্যায়ে উন্নীত করার লক্ষ্য ঘোষণা করেছে। প্রশাসনকে আরো দক্ষ ও গতিশীল করা না গেলে এই লক্ষ্য অর্জিত হবে কি না তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। সেদিক থেকে শুধু পরামর্শ বা আদেশ-নির্দেশ নয়, প্রশাসনকে আরো দক্ষ ও গতিশীল করার জন্য নানামুখী কর্মসূচি নিতে হবে। থাকতে হবে ‘পুরস্কার ও শাস্তির’ যথার্থ উদ্যোগ।
আমরা জানি, কোনো দেশের উন্নয়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছার পর সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে দক্ষ, যোগ্য ও কার্যকর প্রশাসন। রাজনৈতিক সরকারের সব কর্মসূচির সঠিক বাস্তবায়ন প্রায় স¤পূর্ণভাবে নির্ভর করে প্রশাসনের ওপর। তাই সরকারের ঘোষিত লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়ন করতে হলে প্রশাসনে গতিশীলতা নিশ্চিত করতেই হবে। প্রধানমন্ত্রী কিছু মৌলিক বিষয়ের অবতারণা করেছেন। এখন প্রয়োজন প্রধানমন্ত্রীর কথাগুলোর যথার্থভাবে পালন করা। সরকারি কর্মচারীদের জনগণের সেবায় নিজেদেরকে উৎসর্গ করতে হবে এবং জাতীয় স্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে এবং অবশ্যই আমলাতান্ত্রিক মনোভাব পরিহার করে নিজেদের জনগণের সেবক বলে বিবেচনা করতে হবে।