১৯৯৯ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রতিবেশ ও এর প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের গুরুত্ব বিবেচনা করে সরকার টাঙ্গুয়ার হাওরের ৯,৭২৭ হেক্টর এলাকাকে ‘প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ ঘোষণা করে। ২০০০ সালে যখন হাওরটি দেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট হিসাবে মর্যাদা পায়, তখন হাওরের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করতে সরকারের পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় একটি সমাজভিত্তিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের পক্ষে আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউসিএন, দাতা সংস্থা সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেশন (এসডিসি)-এর আর্থিক সহায়তায় ‘টাঙ্গুয়ার হাওর সমাজভিত্তিক টেকসই ব্যবস্থাপনা’ প্রকল্প পরিচালনা শুরু করে। এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ছিল টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবহারের ক্ষেত্রে এমন একটি কার্যকর সহ-ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করা, যা হাওরপাড়ের বাসিন্দা সকল নারী ও পুরুষের জীবনমান উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি করা। দীর্ঘদিন এই ব্যবস্থাপনা পরিচালিত হওয়ার পরও টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণে প্রাকৃতিক রূপ ও বৈচিত্র্যের পরিবর্তন হয়নি। বরং জীববৈচিত্র্যের বিরাট ক্ষতি হয়েছে। আইইউসিএন এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে টাঙ্গুয়ার হাওরে মাছ কমেছে, কমে গেছে জলজ উদ্ভিদ ও হিজল-করচ গাছ। মিঠা পানির মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির যে উদ্দেশ্য নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওর সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল তা আলোর মুখ দেখতে পায়নি। ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিতরা অনন্য এই প্রাকৃতিক জলাভূমি সংরক্ষণের নামে প্রকৃতি বিনাশ করে সরকারি ও দাতাদের কোটি কোটি টাকা লোপাট করে নিজেদের আখের গুছিয়েছে এমন অভিযোগ রয়েছে।
২০০১ সালে ভূমি মন্ত্রণালয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কাছে হাওরটিকে হস্তান্তর করায় বাতিল হয় ইজারা প্রথা। ২০০৩ সালে জেলা প্রশাসন নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় টাঙ্গুয়ার হাওর রক্ষায় মাঠে নামে। ২০০৬ সালের ডিসেম্বর মাসে আইইউসিএন হাওর রক্ষায় বিভিন্ন কাজে স¤পৃক্ত হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। হাওর রক্ষক ভক্ষককে পরিণত হয়। তাদের অব্যবস্থাপনায় মাদার ফিশারিজ খ্যাত এ হাওরের মাছের উৎপাদন, জলজ উদ্ভিদ রক্ষা, স্থানীয় ও পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমেছে। এমন অবস্থায় সংশ্লিষ্টদের দুর্নীতি ও অনিয়মের শ্বেতপত্র প্রকাশ জরুরি।
অন্যদিকে, আইইউসিএন-এর ব্যর্থতার বিষয়টি তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) কবির বিন আনোয়ারও। টাঙ্গুয়ার হাওর ঘুরে এসে গত ১৩ বছর ধরে চলা টাঙ্গুয়ার হাওর ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত সংস্থা আইইউসিএন ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। প্রকল্পের নানা ত্রুটির সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, যে আশায় এই হাওরের ব্যবস্থাপনা শুরু হয়েছিল তা এখন ব্যর্থ ও হতাশাজনক। তবে হাওরের প্রকৃতি, পরিবেশ ও প্রতিবেশের যা অবশিষ্ট আছে তা রক্ষা করার আহ্বান জানান তিনি।
আমরাও চাই, হাওরের পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হোক। এক্ষেত্রে আইইউসিএন-এর মতো সংস্থাকে নয়, সরকারকেই দায়িত্ব নিয়ে হাওরের প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে।