সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যাকান্ডের রহস্য ৩৫ বছরেও উদ্ঘাটন হয়নি। বিএনপির পক্ষ থেকে কেবল বলা হয়ে থাকে, দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ষড়যন্ত্র করে জিয়াকে হত্যা করা হয়েছে। তবে বিএনপি দু’বার পূর্ণমেয়াদে ক্ষমতায় থাকলেও খুনীদের বিচারের আওতায় আনতে পারেনি। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ একবার উদ্যোগ নিলেও মামলার নথিপত্রের হদিস না মেলায় আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, জিয়াউর রহমান যখন চট্টগ্রাম এসেছিলেন তখন বিএনপিতে গ্রুপিং ছিল। বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে চট্টগ্রামে গ্রুপিং সৃষ্টি হয়। মূলত এ গ্রুপিং দূর করতেই চট্টগ্রাম সফর ছিল জিয়ার। ২৯ মে সকাল ১০টায় বিমানযোগে চট্টগ্রামে যান জিয়া। রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠক ছিল। জিয়ার সঙ্গে ওই রাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে ছিলেন মিসেস আমিনা রহমান, ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী আর বাইরে ছিলেন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাসহ আরও কয়েকজন। রাত সোয়া ১২টায় নগর বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে তিনি রুমে যান। আর ওই রাতেই শুরু হয় জিয়া হত্যার অপারেশন। বিদ্রোহী সেনাদের একটি দল নির্মমভাবে জিয়াউর রহমানকে হত্যা করে।
রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যার পর তার লাশ নিয়ে যাওয়া হয় ফটিকছড়ির দিকে। চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন কাপ্তাই সড়কের পাশে রাঙ্গুনিয়ার নির্জন একটি জায়গায় অত্যন্ত গোপনীয়তায় ৩০ মে বেলা ১১টায় দাফন করা হয়। জিয়াকে দাফন করার পর মেজর জেনারেল মঞ্জুর ত্রিপুরা যাওয়ার জন্য সীমান্তপথের দিকে এগিয়ে যান। কিন্তু পথ ভুলে অন্যপথে চলে যান। হাটহাজারী থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম কুদ্দুসের নেতৃত্বে মঞ্জুরকে ধরার জন্য পেছনে ছোটে পুলিশের একটি দল। শেষ পর্যন্ত কৃষক গণি মিয়ার বাড়ি থেকে তাকে সপরিবারে আটক করা হয়।
সেনাবাহিনীর তৎকালীন ক্যাপ্টেন এমদাদ তার কাছে মঞ্জুরকে হস্তান্তর করতে বলেন। চট্টগ্রাম সেনানিবাসের ব্রিগেডিয়ার আব্দুল আজিজ ও ব্রিগেডিয়ার আব্দুল লতিফের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম কুদ্দুস। তখন লিখিত রসিদ নিয়ে মঞ্জুরকে হস্তান্তর করা হয়। চট্টগ্রামের পুলিশ ফোর্স মঞ্জুরকে সেনানিবাস পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। এরপর বলা হয়, মেজর জেনারেল মঞ্জুর মারা গেছেন। মূলত মঞ্জুরের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে চাপা পড়ে যায় জিয়া হত্যার নেপথ্য কাহিনীও।
১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে জিয়াকে হত্যার এক মাস পর ওই বছরের ১ জুন নগরীর কোতয়ালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয় বলে জানা গেছে। তৎকালীন নগর গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা মোকাররম হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। চট্টগ্রামের তৎকালীন জিওসি মো. আবুল মঞ্জুরসহ ১০ জনকে আসামি করা হয়। বাকিরা হলেন- কর্নেল দেলোয়ার হোসেন, মেজর ফজলে হোসেন, মেজর মোজাফফর আহমেদ, মেজর রেজাউল করিম, মেজর দোস্ত মোহাম্মদ, ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ রফিক, ক্যাপ্টেন জামিউল হক ও ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ইলিয়াস।
মামলা দায়েরের প্রায় দু’বছর পর ১৯৮৩ সালের ১০ এপ্রিল এটি বিচারের জন্য নথিভুক্ত হয়। কোতয়ালী থানার এ মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান তৎকালীন সহকারী কমিশনার আব্দুল হক। কিন্তু বছরের পর বছর গেলেও তদন্ত হয় না। আদালতে একের পর এক শুনানির তারিখ পড়তে থাকে। ১৯৯১ থেকে ’৯৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকলেও মামলার কোনো অগ্রগতি হয়নি।
এর পর ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে এ মামলাটির পুনঃতদন্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। মামলা সিআইডিতে স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তী সময়ে এর নথিপত্রের হদিস না পাওয়ায় মামলাটির কোনো অগ্রগতি হয়নি। থানা থেকে গায়েব হয়ে যায় মামলার নথি। পুলিশের তৎকালীন সহকারী কমিশনার আব্দুল কাদের খান ‘এ বিষয় কিছুই করার নেই’ মর্মে উপর মহলে জানিয়ে দেন। শেষ পর্যন্ত ২০০১ সালের অক্টোবরে পুলিশ চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। তাতে বলা হয়, ‘জিয়াউর রহমান হত্যাকান্ডের বিচার যেহেতু সামরিক আদালতে হয়েছে তাই আর কিছু করার নেই।’
জিয়াউর রহমানের হত্যার বিচার স¤পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘সেনা ট্রায়ালে এ হত্যাকান্ডের বিচার হয়েছে। তবে এটা ঠিক হত্যার রহস্য পুরোপুরি উদ্ঘাটন হয়নি। জিয়াউর রহমান দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের শিকার।’