সুনামগঞ্জের সিনেমা হল
ষাটের দশকেরর প্রথম দিকের কথা। আমরা তখন হাফপ্যান্ট পরি। নিরানন্দ মহকুমা শহর সুনামগঞ্জে ছিলনা কোনো সিনেমা হল। সিলেট অথবা ঢাকা যেখানেই বেড়াতে যেতাম সমবয়সীদের কাছ থেকে সিনেমার গল্প শুনে অভিভূত হয়ে যেতাম। তারাও তেল, নুন সহযোগে আমাদের কাছে সিনেমার গল্প করত। তাদের চোখে আমরা পরিপূর্ণ ছিলাম না। কারণ আমাদের এখানে সিনেমা হল নেই।
সে যাই হোক ষাটের দশকের গোড়ার দিকে সুনামগঞ্জ পৌরসভারর চেয়ারম্যান জনাব আবু হানিফা ও নদীর উত্তরপাড়ের স্বনামধন্য ব্যবসায়ী জনাব নছর মিয়া আমাদের ‘কলঙ্ক’ ঘুচাতে যৌথভাবে একটি সিনেমা হল নির্মাণ করেন। তারা মোটামোটি সুন্দরভাবেই হলটি নির্মাণ করেন। কিন্তু তারা সিনেমা দেখানোর মেশিন কিনেন পুরানো। প্রায়ই দেখা যায় কথায় আর ছবিতে মিল নেই। ছবি চলে আগে আগে কথা চলে পেছনে পেছনে। তারপর হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যাওয়া, রিল ছেঁড়া এগুলো ছিল নিত্যসঙ্গী। সুনামগঞ্জবাসীও দুই মালিকের প্রতি ‘কৃতজ্ঞতার নিদর্শন’ স্বরূপ গলা ফাটিয়ে গালাগালি করতেন।
একদিন ভালো একটি ভারতীয় ছবি চলাকালীন সময়ে রিল ছিঁড়ে যায় আর শুরু হয় গালাগালি। প্রথমে মালিকদের নাম ধরে আর পরে…। এহেন পরিস্থিতিতে অন্যতম মালিক আবু হানিফা সাহেবের সারা শরীর কাঁপছিল। তাকে ডাক্তার দেখিয়ে বাসায় পাঠানো হয়। পরদিন তিনি শোবার ঘরেই শয্যা নেন এবং বলেন এই সিনেমা হলের সাথে তার আর কোনো স¤পর্ক নেই। দরকার হলে পানির দামে বিক্রি করবেন বিক্রি না করা পর্যন্ত তিনি এই ঘরেই অবস্থান করবেন। পরবর্তী পর্যায়ে সিনেমা হলের আরেক শরিক নছর মিয়া আবু হানিফা সাহেবের অংশ কিনে নেন। প্রথম ছিল হলটির নাম দিলরুবা পরে হয়েছিল নূরজাহান পরবর্তীতে মিতারা। বর্তমানে যুগের সাথে তাল মেলাতে না পেরে সিনেমা হলটির অপমৃত্যু ঘটে।