বিশেষ প্রতিনিধি ::
৫ম ধাপে অনুষ্ঠিত জগন্নাথপুর উপজেলার ৬ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থীদের সবাই লন্ডনী! স্থানীয়ভাবে যারা দেশে সার্বক্ষণিক অবস্থান করেন সেই ‘দেশি’ প্রার্থীরা সবাই লন্ডনী প্রার্থীদের অর্থ-বিত্ত আর দাপটের কাছে এবারও বরাবরের মতো হেরেছেন। নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদের অভিযোগ প্রবাসী এসব প্রার্থীরা প্রতি বছরই নির্বাচনের আগে দেশে এসে কোটি কোটি টাকা খরচ করে নির্বাচিত হন। টাকার গরমে পিছিয়ে থাকা দেশি প্রার্থীরা তাদের সামনে দাঁড়াতেই পারেন না। ফলে সহজেই বিজয়ী হন প্রবাসী প্রার্থীরা। এদিকে কয়েক মাস আগ থেকেই একটানা দেশে এসে নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকায় এখন নির্বাচিত প্রবাসীরা পরিবারের সঙ্গে ‘অবকাশ যাপন’ করতে শীঘ্রই লন্ডনে যাবেন বলে জানা গেছে। তবে শপথগ্রহণের আগেই তারা ফিরে আসার কথা জানিয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিটি স্থানীয় নির্বাচনেই যুক্তরাজ্য প্রবাসী অধ্যুষিত জগন্নাথপুর উপজেলার বাসিন্দারা দেশে ছুটে আসেন। ধনকুবের এসব প্রার্থীরা দেশে এসে নির্বাচনী মাঠে আলোচনার জন্ম দেন। অন্য এলাকায় সাদামাটা প্রচারণা চালালেও টাকার গরমে লন্ডনী প্রার্থীরা মাঠ গরম করে রাখেন বলে সচেতন ভোটারদের অভিযোগ। প্রচারণা ও টাকার গরমে দেশি প্রার্থীরা তাদের সামনে ম্লান থাকেন। ফলে বরাবরই প্রবাসী প্রার্থীরা বিজয়ী হন। তবে এসব প্রার্থীরা বিজয়ী হওয়ায় সাধারণ নাগরিকরা সমস্যায় পড়েন বলে জানা গেছে। জরুরি প্রয়োজনে তারা চেয়ারম্যানদের পাশে পাননা। তাই বছরের পর বছর পছন্দের মেম্বারদের ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে পরিষদ চালান প্রবাসী জনপ্রতিনিধিরা। এতে স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কাজে বিঘœ ঘটে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
জানা গেছে, এবার এ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে আসন বিন্যাস নিয়ে জটিলতার কারণে রাণীগঞ্জ এবং মীরপুর ইউনিয়নে নির্বাচন স্থগিত রয়েছে। বাকি ৬টি ইউনিয়নে গত শনিবার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে বিজয়ী এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন ব্রিটেন-বাংলাদেশের দ্বৈত নাগরিক। এবার ৬টি ইউনিয়নে ৩২জন প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের মধ্যে ১৫জনই ছিলেন প্রবাসী। তারা সেখানে সপরিবারে বসবাস করেন। তবে বছরে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য এক-দুইবার আসা-যাওয়া করেন তারা।
জানা যায়, আশারকান্দি ইউনিয়নে বিজয়ী আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাহ আবু ঈমানী, চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিজয়ী প্রার্থী আরস মিয়া, সৈয়দপুর-শাহারপাড়া ইউনিয়নে বিজয়ী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শিল্পপতি তৈয়ব মিয়া কামালী, পাটলি ইউনিয়নে বিজয়ী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সিরাজুল হক, পাইলগাঁও ইউনিয়নে বিজয়ী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মখলিছ মিয়াসহ কলকলিয়া ইউনিয়নে বিজয়ী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও সাবেক চেয়ারম্যান ধনকুবের আলহাজ্ব আব্দুল হাসিম সপরিবারে ব্রিটেনের বাসিন্দা। নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের স্ত্রী-সন্তানরাও সেখানে অবস্থান করেন। ব্রিটেনে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে। দেশে তারা জনপ্রতিনিধি হওয়ার জন্য ছুটে আসলেও এলাকায় বিনিয়োগে তাদের কোন আগ্রহ নেই বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
আশারকান্দি ইউনিয়নে বিজয়ী আওয়ামী লীগের আবু ঈমানী বলেন, ব্রিটেনে বসবাস করলেও দেশের সঙ্গে আমার নাড়ীর সম্পর্ক রয়েছে। তাই মানুষের সেবা করতেই নির্বাচনে এসে অংশ নেই। নির্বাচিত হওয়ার পর দেশেই থাকার চেষ্টা করি। তবে মাঝে-মধ্যে পরিবারকে সময় দিতে ব্রিটেনে যেতে হয় বলে তিনি জানান। দেশে কোন বিনিয়োগ বা ব্যবসাপাতিও নেই তার। দেশে জনসেবাই মূল কাজ বলে তিনি জানান।
জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তাদীর আহমদ বলেন, জগন্নাথপুরে এবার ইউনিয়ন পরিষদের যারা নির্বাচিত হয়েছেন তাদের সবাই সপরিবারে ব্রিটেনে অবস্থান করেন। সেখানে তাদের বড় বড় ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে। জগন্নাথপুরে স্থানীয় নির্বাচনে সবসময়ই প্রবাসীরা অংশ নিয়ে বিজয়ী হন। তবে বিজয়ী হওয়ার পর তারা পরিবারের কাছে ছুটে যাওয়ায় স্থানীয় সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে সমস্যা দেখা দেয়। ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান (ইউপি সদস্য) সামাল দেওয়া সম্ভব হয় না।