1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ০৩:২০ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

বজ্রপাত : দুর্যোগ মোকাবেলায় সচেতনতা প্রয়োজন

  • আপডেট সময় রবিবার, ২১ মে, ২০১৭

সম্প্রতি হাওরের বাঁধ ভেঙে ফসলহানিতে বিপর্যয়ে পড়া সুনামগঞ্জ জেলার আরেক বিপদের নাম বজ্রপাত। হাওরজুড়ে এখন বজ্রপাত আতঙ্ক বিরাজ করছে। সারা বিশ্বে মার্চ থেকে মে-এই তিন মাসে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয়েছে সুনামগঞ্জে। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসা ও মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। স্যাটেলাইট থেকে নেওয়া ১০ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে এই গবেষণা করা হয়েছে।
নাসা ও মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় বলা হয়েছে, ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কঙ্গোর কিনমারা ডেমকেপ এলাকায়, মার্চ থেকে মে পর্যন্ত বাংলাদেশের সুনামগঞ্জে এবং জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ভেনেজুয়েলার মারাকাইবো লেক এলাকায় সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত আঘাত হানে। সারা বছরের হিসাবে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত আঘাত হানে লেক মারাকাইবো এলাকায়। সেখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ২৩২টির বেশি বজ্রপাত হয়। আর সুনামগঞ্জে তিন মাসে প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় ২৫টিরও বেশি বজ্রপাত আঘাত হানে।
ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের কারণে দেশের পূর্বাঞ্চলে বজ্রপাতের পরিমাণ প্রাকৃতিকভাবেই বেশি। ভারতের খাসি পাহাড় ও মেঘালয় এলাকায় মার্চ থেকে মে মাসজুড়ে মেঘ জমে থাকে। স্তরীভূত মেঘে মেঘে ঘর্ষণের ফলে ওই এলাকার পাদদেশে অবস্থিত সুনামগঞ্জে বজ্রপাতের সংখ্যাও বেশি হয়ে থাকে। দেশে বজ্রপাতের সংখ্যা প্রতিবছরই বাড়ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০১৪ সালে সারাদেশে ৯১৮টি বজ্রপাত আঘাত হেনেছিল, ২০১৫ সালে ১ হাজার ২১৮টি, ২০১৬ সালে তা দেড় হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
বিগত সাত বছরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ক্রমেই বজ্রপাতের ঘটনা বাড়ছে, সঙ্গে মৃত্যুর হারও বাড়ছে।
বিশ্লেষকগণ বলছেন, বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিষয় ঘন ঘন বা বেশি মাত্রায় বজ্রপাতের অন্যতম কারণ। আগে তাল গাছ, নারিকেল গাছ ইত্যাদি গাছপালায় বজ্রপাতের ঘটনা বেশি লক্ষ করা যেত। হাওর এলাকাগুলোকে এখন বজ্রপাতের প্রধান ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। গত কয়েক বছরে সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সিলেট, কিশোরগঞ্জ প্রভৃতি অঞ্চলে বজ্রপাতে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বেশি। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে প্রাকৃতিক চক্রের কারণে বজ্রপাতসহ ঝড়-বৃষ্টি এবং বজ্রপাতে মৃত্যু ঘটছে। তাপমাত্রা যত বাড়বে বজ্রপাত তত বাড়বে।
এছাড়া দেশের নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুর দখল করে ভরাট করে ফেলা এবং অবাধে তাল গাছ, নারিকেল গাছসহ অন্যান্য উঁচু গাছ কেটে ফেলা বজ্রপাতে মৃত্যুহার বেড়ে যাওয়ার জন্য দায়ী।
বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। আগে দেশে যে গাছপালা এবং প্রাকৃতিক বনাঞ্চল ছিল এখন তা অনেক কমে গেছে। সাধারণত গ্রামাঞ্চলে বজ্র প্রতিরোধ হিসেবে কাজ করে বড় গাছ। এখন বড় গাছ না থাকার কারণে কৃষিকাজে যন্ত্রের ব্যবহার এবং অন্যান্য ধাতব বস্তুর ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে মানুষের মৃত্যুহার বাড়ছে। বজ্রপাত প্রাকৃতিক সৃষ্ট একটি অনাকাক্সিক্ষত দুর্যোগ। যে আগ্রাসন ঠেকানো কোন মতেই সম্ভব নয়। বজ্রপাত থেকে বাঁচতে হলে সর্ব প্রথমে বড় বড় গাছপালা বেশি করে লাগাতে হবে। পরিবেশে ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে অবৈধ দখলে থাকা নদ-নদী, খাল-বিল এবং পুকুর দখলমুক্ত করতে হবে। বজ্রপাত থেকে বাঁচতে পাকা বাড়ির নিচে আশ্রয় নিতে হবে এবং খোলা জায়গা, জলাশয়, উঁচু গাছপালা বা বিদ্যুতের লাইন থেকে দূরে থাকার পাশাপাশি ধাতব বস্তু এড়িয়ে চলা, টিভি-ফ্রিজ না ধরা, গাড়ির ভেতরে অবস্থান না করা এবং খালি পায়ে না থাকা ইত্যাদি মেনে চলতে হবে।
পরিশেষে বলতে চাই, বজ্রপাত নিয়ে গবেষণার বিষয়টিকে সরকারের পক্ষ থেকে গুরুত্ব দেয়া দরকার এবং বজ্রপাত স¤পর্কে সতর্কতা অবলম্বনের বিষয়েও প্রচার-প্রচারণা জোরদার করা দরকার। উদ্বিগ্ন জনগণ সরকারের কাছে এতটুকু প্রত্যাশা করা অযৌক্তিক বা বাড়তি কিছু নয়।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com