মো. আমিনুল ইসলাম ::
শনিবার সকাল থেকেই ছিল ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি। সকালের দিকে কিছুটা বৃষ্টি হওয়ায় ছাতা মাথায় করেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়েছিলেন অনেকে। তবে বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পর ও বেলা বাড়ার সাথে সাথে কেন্দ্রগুলোতে বাড়তে থাকে ভোটারের সংখ্যাও। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ৫ম ধাপে গতকাল শনিবার সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর, দিরাই ও শাল্লা উপজেলার মোট ১৯টি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। শুরু হয় ভোট গণনা। অতঃপর ঘোষিত ফলাফলে বেসরকারিভাবে ১৯ ইউনিয়নের ৯টিতে আওয়ামী লীগ, ২টিতে বিএনপি ও ৮টিতে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। স্বতন্ত্রদের মধ্যে ২জন বিএনপি’র ও বাকিরা আ.লীগের।
ফলাফল অনুযায়ী তিন উপজেলার মধ্যে জগন্নাথপুর উপজেলায় এবারও ভরাডুবি হয়েছে বিএনপি’র। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থীর সঙ্গে ভোটের মাঠে দাঁড়াতেই পারেননি বিএনপি প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এবং বিদ্রোহী আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের মধ্যে হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। বরাবরের মতো এবারও কোন ইউনিয়নেই ন্যূনতম প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলতে পারেননি বিএনপি প্রার্থীরা। এ উপজেলার আশারকান্দি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শাহ আবু ঈমানী ৩৮৯৭ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল আহাদ মদরিছ ৩৭৯৯ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছেন। চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরশ মিয়া ৫৫৯৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হারুন রশিদ পেয়েছেন ৫৫০৯ ভোট । এ উপজেলার পাটলি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সিরাজুল হক ৫৪০৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার সঙ্গে ৩৩৬০ ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আঙ্গুর মিয়া পরাজিত হন। কলকলিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল হাসিম ৫৯৩৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ প্রার্থী দ্বীপক কান্তি দে দিপাল ৪৯৯৮ ভোট পেয়ে পরাজিত হন। পাইলগাঁও ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মখলিছ মিয়া ৩১০৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মঞ্জুর আলী আফজল পেয়েছেন ২৯৪০ ভোট।
তাছাড়া তীব্র উত্তেজনা-সংঘর্ষের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠিত সৈয়দপুর-শাহারপাড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. তৈয়ব মিয়া কামালী ৪৩৮৬ ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন এবং আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল হাসান ৪৩৩২ ভোট পেয়ে প্রতিদ্বন্দীতা করেছেন।
ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণে স্থানীয়দের মতে এবার জগন্নাথপুরে বিএনপির ভরাডুবি ঘটেছে। অন্যদিকে আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী ও আ.লীগ বিদ্রোহী প্রার্থীরা সমান অবস্থান ধরে রেখেছেন।
এদিকে দিরাই উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ভোটযুদ্ধে রফিনগর ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকে রেজুয়ান খান পেয়েছেন ৩৬৩১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাহাঙ্গীর আলম (আনারস) পেয়েছেন ৩০৫০ ভোট। ভাটিপাড়া ইউনিয়নে মোটরসাইকেল প্রতীকে শাহজাহান গাজী ৩৮০২ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাহেদুল ইসলাম (নৌকা) পেয়েছেন ৩১৩৭ ভোট। রাজানগর ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকে সৌম্য চৌধুরী ৩৪২৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নওশেরান চৌধুরী (স্বতন্ত্র) পেয়েছেন ৩১৭১ ভোট। চরনারচর ইউনিয়নে রতন কুমার দাশ (বিএনপি) ৬৬৩১ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন। তার নিকটতম প্রার্থী পরিতোষ রায় (নৌকা) পেয়েছেন ৬১০ ভোট।
এ উপজেলার সরমঙ্গল ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী এহসান চৌধুরী ২৬৮২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মো. মোয়াজ্জেম হোসেন (বিএনপি) পেয়েছেন ২৫১২ ভোট। করিমপুর ইউনিয়নে আসাব উদ্দিন সরদার নৌকা প্রতিকে ৪৬৩৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান পেয়েছেন ৪২৩৮ ভোট। জগদল ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী শিবলী আহমেদ বেগ ৪৯১৫ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হুমায়ূন রশিদ (নৌকা) পেয়েছেন ৪৪৩১ ভোট। তাড়ল ইউনিয়নে আব্দুল কুদ্দুস (স্বতন্ত্র) ২৩৪৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী আকিফুর রেজা পেয়েছেন ২১২০ ভোট। এছাড়া কুলঞ্জ ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থী মুজিবুর রহমান তালুকদার বিজয়ী হয়েছেন।
শাল্লা উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের মধ্যে আটগাঁও ইউনিয়নে আ.লীগ প্রার্থী আবুল কাশেম আজাদ ৪০৩৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল নোমান পেয়েছেন ৩৬৪৯ ভোট। ২নং হবিবপুর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল ৭২৪৯ ভোট পেয়ে জয় লাভ করেছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সুবল চন্দ্র দাশ পেয়েছেন ৬৪৪২ ভোট। বাহাড়া ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকে বিধান চন্দ্র চৌধুরী ৬৮৪৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নরেশ চন্দ্র চৌধুরী পেয়েছেন ৫৩৩৫ ভোট। ৪নং শাল্লা ইউনিয়নে আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ফুল মিয়া ৪৯১৬ ভোট পেয়ে বিজয় নিশ্চিত করেছেন। ৪৪৮০ ভোট পেয়েছেন তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী আব্দুস সত্তার মিয়া।