1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
বুধবার, ০৭ মে ২০২৫, ১১:১৭ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

দিরাই-শাল্লার ১৩ ইউনিয়ন : বিদ্রোহী ভয়ে আ.লীগ-বিএনপি প্রার্থীরা

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৬ মে, ২০১৬

বিশেষ প্রতিনিধি ::
হাওরবেষ্টিত উপজেলা দিরাই-শাল্লায় জোরসে বাজছে ৫ম দফা নির্বাচনের শেষ ডামাঢোল। একে অন্যকে বাক্যবাণে বিদ্ধ করে শেষ মুহূর্তে ১৩ ইউনিয়নের প্রার্থীরা জম্পেশ প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছেন। তবে দিরাই উপজেলায় নির্বাচনী মাঠে দলীয় প্রার্থীদেরও ছাপিয়ে প্রচারণায় এগিয়ে আছেন বিদ্রোহী প্রার্থীরা। তাছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা পছন্দের দুটি ইউনিয়নে প্রচারণা চালানোয় তার প্রতি চরম ক্ষুব্ধ অন্য সাত ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। নেতাকর্মীদের অভিযোগ, জাতীয় নেতা ও স্থানীয় সাংসদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের গুরুতর অসুস্থতার সুযোগে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান জন্ম এলাকায় নিজের দাপট দেখাচ্ছেন। এখন দলীয় সকল প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করে তিনি দুই পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ দিরাই-শাল্লার নেতাকর্মীরা।
অভিযোগ রয়েছে, এই দুই উপজেলার আওয়ামী লীগের অনেক স্থানীয় দায়িত্বশীল নেতা বিদ্রোহীদের সঙ্গে রয়েছেন। এতে বিপাকে পড়েছেন দলীয় প্রার্থীরা। অন্যদিকে জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক নাছির উদ্দিন চৌধুরীও শুরু থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে আসছেন। তিনি ভোটডাকাতি ঠেকাতে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। এসব বিষয়ে শেষ মুহূর্তে উত্তেজনা চলছে এই দুই উপজেলায়। ফলে এই দুই উপজেলার ১২৫ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১০৮টিই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে প্রশাসন। এর মধ্যে দিরাই উপজেলার ৮৬টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ।
জানা গেছে, দিরাই উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ৮৬টি কেন্দ্রের সবকটিই ঝুঁকিপূর্ণ। এসব ইউনিয়নে একে অন্যের কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় সবকটি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, দিরাই উপজেলার ৯ ইউনিয়নের প্রতিটিতেই শক্তিশালী বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন।
দিরাই উপজেলার রফিনগর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর চৌধুরী দলীয় প্রার্থীকে টেক্কা দিয়ে রয়েছেন মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। বিদ্রোহী প্রার্থীর শক্ত অবস্থানের কারণে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রেজুয়ান খানের অবস্থা নড়বড়ে বলে জানা গেছে। এ ইউনিয়নে বিএনপি’র একক প্রার্থী প্রার্থী আনিসুর রহমানও ভালো অবস্থানে রয়েছেন বলে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
দুর্গম কুলঞ্জ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মিলন মিয়া দলের বিদ্রোহী প্রার্থী পবিত্র মোহন দাসকে টেক্কা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। পবিত্র মোহন দাসের সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীকে দেখা গেছে। পবিত্র মোহন ছাড়াও আরো তিন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে এই ইউনিয়নে। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল আহাদ, বহুল আলোচিত যুবলীগ নেতা একরার হোসেন এবং কাওসার গাজীও চষে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী এলাকা। বিদ্রোহী ঘেরা আওয়ামী লীগ প্রার্থী এখানে অনেকটা অসহায় অবস্থায় আছেন। এ ইউনিয়নে বিএনপি মনোনীত মুজিবুর রহমানের সঙ্গেও মিজবাউজ্জামান চৌধুরী বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন।
ভাটিপাড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী দলের বিদ্রোহী প্রার্থী শাহজাহান কাজীর চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছেন। এই ইউনিয়নে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আফজাল হোসেন সঙ্গে বিদ্রোহী হিসেবে বেলাল আহমদ ঘোড়া প্রতীকে দাবিয়ে বেড়াচ্ছেন দলীয় প্রার্থীকে।
তাড়ল ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আহমদ চৌধুরীর সঙ্গে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে সাবেক চেয়ারম্যান আকিকুর রেজা পুলিশ এবং বিদ্রোহী প্রার্থী সাংবাদিক ধ্রুপদ চৌধুরী নূপুর বিরামহীন প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আলী আহমদকে ঠেকাতে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুল হক তালুকদার ও বিএনপি নেতা আব্দুল কুদ্দুস। বিএনপি-আওয়ামী লীগে বিদ্রোহীর ছড়াছড়ির কারণে ভোটারদের হিসেব মেলানো কঠিন হয়ে পড়েছে বলে অনেক ভোটার মন্তব্য করেছেন।
রাজানগর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সৌম্য চৌধুরী এবং বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জুনায়েদ মিয়ার মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে জানা গেছে। এই ইউনিয়নে দুই প্রার্থীই রয়েছেন বিদ্রোহ মুক্ত। চরনারচর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থী পরিতোষ রায় বিএনপি প্রার্থী রতন কুমার দাসের দাস মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসার সম্ভাবনা রয়েছেন। চরনারচর এবং রাজানগর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র প্রার্থীরা বিদ্রোহী টেনশনে নেই। সরমঙ্গল ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কানু লাল দাসের সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থী মহানন্দ দাসও রয়েছেন আলোচনায়। একইভাবে এ ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন জুয়েলের সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান এহছান চৌধুরী দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন মাঠ।
করিমপুর ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আছাব উদ্দিন সরদারের সঙ্গে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শাহজাহান সরদার সরব রয়েছেন। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আবদুর রহিম ধানের রয়েছেন বিদ্রোহমুক্ত।
জগদল ইউনিয়নে আ.লীগের প্রার্থী হুমায়ুন রশিদ লাভলু আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শিবলী আহমদ বেগের অনেকটা অসহায়। এখানে বিএনপি প্রার্থী কামরুল হক বিদ্রোহমুক্ত রয়েছেন।
এদিকে শাল্লা উপজেলার ৪টি ইউনিয়নেও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা বেকায়দায় ফেলে দিয়েছেন দলীয় প্রার্থীদের। এসব কারণে ফলাফল উল্টে যেতে পারে বলে অনেকের ধারণা। এই উপজেলার বিএনপির প্রার্থীরা রয়েছেন বিদ্রোহমুক্ত।
শাল্লা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান আবু লেইছ চৌধুরী ঘোড়া প্রতীকে দাবড়ে বেড়াচ্ছেন মাঠ। দলীয় মনোনীত প্রার্থী আব্দুস সাত্তার তার সঙ্গ ধরতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। আটগাঁও ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল কাশেম বিদ্রোহী প্রার্থী খোরশেদ আলমের চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছেন। এই ইউনিয়নে বিএনপির একক প্রার্থী নোমান আহমদ রয়েছেন সুবিধাজনক অবস্থানে।
হবিবপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিবেকানন্দ মজুমদার বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান সুবল দাসের কাছে অনেকটা অসহায়। বাহারা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিধানচন্দ্র দাস বিদ্রোহী প্রার্থী নরেশ চন্দ্র দাসের চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছেন।
সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. হারুন অর রশিদ বলেন, দিরাই উপজেলার সবক’টি কেন্দ্র অতিগুরুত্বপূর্ণ হলেও কোন বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক হয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রাখবে। ৫ম এবং শেষ দফা নির্বাচনে জেলার ৭ ইউনিয়নে শান্তিপূর্ণ ভাবেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com