স্টাফ রিপোর্টার ::
ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে জড়িত দুর্নীতিবাজদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছে সুধীজন। মতবিনিময় সভায় তারা রাষ্ট্রপতির কাছে এ বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরেন।
জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম.এ. মান্নান এমপি। তিনি বলেন, মাননীয় রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীকে বলবেন সুনামগঞ্জের দুর্দশাগ্রস্ত কৃষকদের কথা। অতীতের যেকোনো সরকারের তুলনায় বর্তমান সরকার সকল প্রকার উন্নয়নে এগিয়ে আছে। দুর্নীতি আমাদের সমাজে রন্ধ্রে রন্ধ্রে গেড়ে বসে আছে। তিনি বলেন, ‘আগামী বোরো ফসলের আগ পর্যন্ত ফেয়ারপ্রাইস চাল বিতরণ চালু রাখতে হবে। এমএ মান্নান বলেন, রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান। দলেরও প্রধান। যারা দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে এবং বিভ্রান্ত করছে সেইসব বিভ্রান্তকারীদের অবশ্যই প্রতিহত করতে হবে সকলে।
এমপি শামছুন নাহার বেগম শাহানা রব্বানী বলেন, সুনামগঞ্জের বাতাস আজ অশ্রুতে ভারি হয়ে আছে। আজ সুনামগঞ্জে মাছ-ধান আক্রান্ত। কৃষক দিশেহারা হয়ে দিনযাপন করছেন কিছু অসাধু ঠিকাদার ও পাউবো কর্মকর্তাদের জন্য। সরকারের কোটি কোটি টাকা ফসলরক্ষা বাঁেধর জন্য বরাদ্দ আসে কিন্তু এসব হরিলুট হয়ে যায় এসব টাকার কোন হদিস পাওয়া যায় না। তিনি আরো বলেন, পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলীকে বদলি করে দিলেই শুধু হবে না। তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিচারের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে।
এমপি পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেন, আজকে রাষ্ট্রপতিকে আমাদের উৎসবের সহিত স্বাগত জানানোর কথা। কিন্তু আমরা আজ শোকাহত তাই ওভাবে আপনাকে স্বাগত জানাতে পারিনি। তিনি বলেন, যেসব ঠিকাদারদের কারণে ফসল তলিয়ে গেছে তাদের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে শাস্তি দিতে হবে।
এমপি ড. জয়া সেনগুপ্তা বলেন, ফসলহারা কৃষকদের খাবার সরবরাহ করতে হবে। আর শুধু খাবার সরবরাহ করলেই হবে না। যে বরাদ্দ আসবে তার সুষ্ঠু বন্টন এবং দুর্নীতির সাথে জড়িত ঠিকাদারদের বিচার করতে হবে।
শিক্ষাবিদ পরিমল কান্তি দে বলেন, সুনামগঞ্জে এবার ফসলহানি হয়েছে। কৃষকরা বোরো ফসল এর উপর নির্ভরশীল। কৃষকদের সন্তানরা প্রতিবছর ঝরেপড়ে অভাবের তাড়নায়। এবারো এমনই অবস্থা দেখা যাচ্ছে। তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে দাবি করে বলেন, হাওরাঞ্চলের প্রতিটা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি চালু করা হোক এবং হাওরাঞ্চলে যেসব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চাকরি করছেন তাদের জন্য হাওর ভাতার ব্যবস্থা করে দেওয়ার দাবি জানান।
পৌর মেয়র আয়ূব বখ্ত জগলুল বলেন, ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে ফসল নষ্ট হওয়ার জন্য একমাত্র দায়ি পাউবো ও পিআইসি। এদের কারণেই সুনামগঞ্জের এতো ক্ষতি হয়েছে।
দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইদ্রিছ আলী বীরপ্রতীক তার বক্তব্যের শুরুতেই যুদ্ধকালীন সময়ের স্মৃতিচারণ করেন। পরে ফসলরক্ষা বাঁধ নিয়ে বলেন, পাউবো’র অনিয়ম আর দুর্নীতি থেকে আমরা পরিত্রাণ চাই। এসময় তিনি আগামী বোরো মৌসুম আসার আগ পর্যন্ত সুনামগঞ্জের প্রতিটা ইউনিয়নে ওএমএস-এর চাল বিক্রি করার জন্য দাবি জানান।
সাবেক সাংসদ অ্যাড. আব্দুল মজিদ বলেন, সুনামগঞ্জে নানা সংকট দেখা দিয়েছে। একদিকে ফসলহানি অন্যদিকে এখন হাওরের মাছ মরা শুরু হয়েছে। এখন আমরা একেবারেই অসহায় হয়ে পড়েছি। রাষ্ট্রপতির কাছে তিনি দাবি করে বলেন, কৃষি ঋণ মওকুফ করে নতুন করে কৃষিঋণ দেওয়া হোক যেন আগামি একবছর কৃষকরা বেঁচে থাকতে পারেন। এছাড়াও তিনি নদী খননের জন্যও দাবি করেন।
শাল্লা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অবনী মোহন দাস বলেন, আমাদের জনপ্রতিনিধিরা সচেতনভাবে দায়িত্ব পালন করেননি। তাই আজকে সুনামগঞ্জের এমন অবস্থা। এখন হাওর এলাকার অনেক ঘরে খাবার নাই। জেলার প্রতিটা ওয়ার্ডে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করার দাবি জানান। এছাড়াও তিনি বলেন, গত ১শ বছরেও আমাদের জেলায় এমন ক্ষতি হয়নি। এখন সরকারি রিলিফের চাল বিতরণেও নানা অনিয়ম হচ্ছে। ঠিকাদার সহ সকল দুর্নীতিবাজদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি
বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান তাঁর বক্তব্যে বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতি আপনার আগমনে আমরা অনেক আনন্দিত। সুনামগঞ্জের কৃষক এখন দিশেহারা। সুনামগঞ্জকে বাঁচানোর আহ্বান জানাই।
জেলা পরিষদ সদস্য সেলিনা আবেদীন বলেন, আপনি আমাদের ভালোবেসে যা দিবেন আমরা তাই সাদরে গ্রহণ করবো। তিনি বলেন, ফসলহারা কৃষকের অনেক মেয়ে সন্তানদের ভবিস্যৎ এখন প্রায় অন্ধকারে। তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
পুলিশ সুপার বরকতুল্লাহ খান বলেন, সুনামগঞ্জে যোগদান করেই দেখলাম দুর্যোগ। আমিও হাওর এলাকার সন্তান। হাওরের সমস্যা আমি বুঝি। হাওর এলাকার যেকোন সমস্যায় আমি সহযোগিতা করে যাবো।
সিলেট বিভাগীয় ডিআইজি কামরুল আহসান পিপিএম বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে যা যা করা লাগে আমরা করে যাবো। এছাড়াও জঙ্গিবাদ নিয়ে তিনি বলেন, জঙ্গিরা যেনো কোথাও মাথাচাড়া দিয়ে না উঠতে পারে আমরা সতর্ক আছি।
সিলেট বিভাগীয় কমিশনার নাজমুন আরা বলেন, মতবিনিময় সভায় বক্তারা যা বলেছেন সবগুলো বাস্তবিক কথা। এসময় তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে কৃষিঋণসহ ওএমএস-এর চালের ব্যবস্থা করে দেয়ার আহ্বান জানান।
মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম, অ্যাড. আলী আমজাদ, দৈনিক সুনামগঞ্জ প্রতিদিনের সম্পাদক কামরুজ্জামান চৌধুরী শাফি, আ.লীগ নেতা মোবারক হোসেন, জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক শামছুল আবেদীন, সাংবাদিক আল হেলাল।