1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ০৫:৫২ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

আজ ইস্টার সানডে : যীশু কবরে নেই – প্রফেসর ন্যাথানায়েল এডউইন ফেয়ারক্রস

  • আপডেট সময় শনিবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৭

যীশু খ্রিস্টের পুনরুত্থান অপ্রত্যাশিত ছিল না। যীশু বহুবার নিজের মৃত্যু ও পুনরুত্থানের বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তবে একথা ঠিক মানুষ তখন তাঁর পুনরুত্থানের বিষয় বুঝে উঠতে পারেন নি।
প্রভু যীশুর জন্ম, মৃত্যু, পুনরুত্থান কোনটিই অপ্রত্যাশিত নয়। তিনি বৈৎলেহমে কুমারীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করবেন সেকথা খ্রিস্টের জন্মের প্রায় সাতশত বছর আগে ঈশ্বর যিশাইয় নবী দ্বারা প্রকাশ করেছেন। তাঁকে ক্রুশে দিয়ে মারা হবে তাও যিশাইয় লিখিত পুস্তকে পাওয়া যায়। যীশুর জন্মেরও বহু আগে তাঁর পুনরুত্থান সম্বন্ধে দায়ুদ নবী বলেছিলেন কারণ তুমি আমার প্রাণ পাতালে পরিত্যাগ করিবে না, তুমি নিজ সাধুকে ক্ষয় দেখিতে দিবে না (গীত সংহিতা ১৬:১০)।
বহুবার যীশু নিজেরও তাঁর যে মৃত্যু এবং পরে যে আবার তিনি মৃতদের মধ্য থেকে উত্থিত হবেন সে বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তিনি তাঁর অনুসারীদের উপদেশ দিয়ে বলতেন মনুষ্যপুত্র মনুষ্যদের হস্তে সমর্পিত হইবেন, তাহারা তাঁহাকে বধ করিবে, হত হইলে পর তিনি তিন দিন পরে পুনরুত্থিত হইবেন (মার্ক ৯:৩১)। যীশু সাধারণ মানুষের মধ্যে তাঁকে নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে বুঝতে পেরে দুটি যুক্তি উপস্থাপন করেছিলেন:
প্রথমত : তিনি তাঁর প্রাণ সম্বন্ধে বলেছেন, তাহা সমর্পণ করিতে আমার ক্ষমতা আছ। নিষ্পাপ হিসাবে তাঁর মৃত্যুর প্রশ্নই আসে না। কিন্তু পিতার কাছ থেকে তিনি নিজের জীবন সমর্পণ করার অধিকার পেয়েছেন যেন আমার মুক্তি পেতে পারি।
দ্বিতীয়ত : যীশু তাঁর প্রাণ সম্বন্ধে বলেছেন, ‘পুনরায় তাহা গ্রহণ করিতেও আমার ক্ষমতা আছে’ (যোহন ১০:১৮)। যীশু বোঝাতে চেয়েছেন তিনি স্বেচ্ছায় স্বপ্রণোদিতভাবে মানুষের প্রতি তাঁর ভালবাসার পরিপ্রেক্ষিতে নিজের প্রাণ নিজে উৎসর্গ করতে পারেন এবং তারপর নিজের ক্ষমতার মাধ্যমে নিজে পুনরায় সেই প্রাণ গ্রহণ করতে পারেন। পুনরুত্থান দ্বারা যীশু তাঁর নিজের প্রাণ পুনরায় গ্রহণ করেছেন। মৃতদের মধ্য থেকে উঠে আসার অধিকার বা ক্ষমতা প্রভু যীশুর ছিল কারণ তিনি ঈশ্বর পুত্র। পরিত্রাণের কাজ শেষ হবার পর ঈশ্বর প্রভু যীশুকে আর মৃত্যুর মধ্যে আটকে রাখতে পারেন নি, তাই খ্রিস্ট নিজ ক্ষমতা বলে উত্থিত হয়েছেন।
কেউ যেন যীশুর দেহ চুরি করতে না পারে সেজন্য দেশাধ্যক্ষ পীলাত রোমান সৈন্যদের বলেছিলেন, ‘তোমাদের নিকটে প্রহরি দল আছে, তোমরা যথাসাধ্য তাঁর মৃতদেহ রক্ষা কর। তাহাতে তাহারা গিয়ে প্রহরি দলের সহিত সেই কবরের মুখ মুদ্রাঙ্ক করিয়া কবর রক্ষা করিতে লাগিত’ (মথি ২৭:৬৫-৬৬)। কবর মুদ্রাঙ্ক করা মানে ক্ষমতা প্রদর্শন করা। খ্রিস্ট পুনরুত্থান দ্বারা প্রমাণ করলেন, তিনি রোমান স¤্রাট তথা মানুষের সমস্ত বুদ্ধি, শক্তি ও ক্ষমতার ঊর্ধ্বে।
যীশুর মৃত্যুর পর তাঁর শিষ্য ও অনুগামীরা ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন, কিন্তু তিনি পুনরুত্থিত হবার পর পরই তারা সাহসের সঙ্গে যীশুর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে লাগলেন। যারা যীশুকে ক্রুশে দিয়েছিল, তাদের কাছেও সাক্ষ্য দিয়ে বলেছিলেন খ্রিস্ট কবর জয় করে পুনরুত্থিত হয়েছেন।
পবিত্র বাইবেলের নতুন নিয়মের বিশেষ ব্যক্তিত্ব শৌল (পরবর্তীতে পৌল) ছিলেন খ্রিস্টে বিশ্বাসী লোকদের উপর অত্যাচারকারীদের মধ্যে অন্যতম। তিনি খ্রিস্টে বিশ্বাসী (খ্রিস্টান) লোকদের অত্যাচার-নির্যাতন করার জন্য সিরিয়া দেশের রাজধানী দামেস্কে যাবার সময় পুনরুত্থিত খ্রিস্ট তাকে দর্শন দেন। ফলে যে শৌল নিজ ধর্মের প্রতি অন্ধ, গোঁড়া এবং অপর ধর্মের লোকদের উপর অত্যাচারকারী ছিলেন, তিনি হঠাৎ খ্রিস্টের দর্শন পেয়ে সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়ে শান্ত, খ্রিস্টের পক্ষে অনুরাগী এমনকি খ্রিস্টের জন্য দুঃখভোগ স্বীকার করতে প্রস্তুত হলেন। যারা যীশুকে ক্রুশে দিয়ে হত্যা করেছিল, তারাই মন পরিবর্তন করে খ্রিস্টকে ত্রাণকর্তা হিসাবে গ্রহণ করেছিল। শুধু তাই নয়, তখন ইহুদী-অইহুদী অনেকেই যীশু খ্রিস্টকে মুুক্তিদাতা বলে স্বীকার করেছিল।
ইহুদীরা মনে করেছিল খ্রিস্টকে মেরে ফেললে খ্রিস্টে বিশ্বাসীদের জীবন স্তিমিত হয়ে যাবে। তিনি যদি পুনরুত্থিত না হতেন, তবে সত্যিই ইহুদীরা কৃতকার্য হত। যীশু খ্রিস্ট পুনরুত্থিত না হলে এই পৃথিবীতে খ্রিস্ট ধর্ম বলে কিছু থাকত না। ইয়োব নবী বলেছেন, “আমি জানি, আমার মুক্তিকর্তা জীবিত” (ইয়োব ১৯:২৫)। প্রত্যেক খ্রিস্টে বিশ্বাসী জানে যে তার মুক্তিদাতা জীবিত। আমরা কোন মৃত ব্যক্তির উপাসনা করি না। যীশু খ্রিস্ট কবরে নেই। খ্রিস্টের মৃত্যু, কবর প্রাপ্তি ও পুনরুত্থান এর উপর বিশ্বাস ছাড়া একজন লোকও ঈশ্বরের সন্তান হতে পারে না।
যীশু খ্রিস্ট পুনরুত্থিত হবার পর চল্লিশ দিন এই পৃথিবীতে অবস্থান করেছিলেন। তখন তিনি হাজার হাজার মানুষকে দেখা দিয়েছিলেন। পরে শেষ দিন যীশু একটি পাহাড়ের পাদদেশে হাজার হাজার মানুষের সামনে তাদের বললেন, “তোমরা সমুদয় জগতে যাও, আমার কথা বল, সুসমাচার প্রচার কর, যেন মানুষ পরিত্রাণ পায়। কারণ এখন আমি স্বর্গে পিতা ঈশ্বরের কাছে যাচ্ছি, আর শেষ দিনে মানব জাতির বিচার ও পরিত্রাণ কার্য সাধন করতে পুনরায় ফিরে আসব”। এই কথা বলে প্রভু যীশু ঊর্ধ্বে, স্বর্গে পিতা ঈশ্বরের কাছে নীত হলেন।
প্রিয় সুধী, আজ ১৬ এপ্রিল ২০১৭ খ্রিস্টাব্দ রোববার। আজ ইস্টার সানডে। খ্রিস্টের পুনরুত্থানের দিন, বিজয়ের দিন। এই দিনে যীশু খ্রিস্ট মৃত্যুর বন্ধন ছিন্ন করে পুনরুত্থিত হয়েছেন। খ্রিস্ট জগতে আজ মহাআনন্দের দিন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com