দেশের অর্থনীতির বড় একটা চালিকা শক্তি হচ্ছে কৃষি। আর এই কৃষিকাজে যাঁদের শ্রম-ঘাম জড়িয়ে আছে তাঁরা হলেন কৃষক। কৃষির উন্নয়ন ছাড়া একটি দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো অচিন্তনীয়। সরকার কৃষকের জীবন-মান উন্নয়নে বাস্তবমুখী নানা পদক্ষেপও নিয়েছে। এবং কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাতে সরকার বদ্ধপরিকর। কিন্তু সরকারি কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও সমাজের এক শ্রেণির সুবিধাভোগীদের যোগসাজশে কৃষকের মাথায় হাত পড়ে। কৃষকের শ্রমে-ঘামে আর কষ্টে ফলানো ফসলের মুনাফা চলে যায় মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের হাতে। দেশে কৃষির উন্নয়ন হয় কিন্তু কৃষকের উন্নয়ন হয় না। এভাবে চলতে থাকলে দেশের বৃহৎ অর্থনীতির নিয়ামক শক্তি এই কৃষি একদিন তার প্রকৃত গতিপথ হারাবে। কৃষি কাজে আগ্রহ হারাবেন প্রান্তিক চাষীরা।
“বোরো ধান সংগ্রহে বিলম্ব : কৃষকের ধান এখন ফড়িয়ার হাতে” শীর্ষক সংবাদ গত ২২ মে দৈনিক সুনামকণ্ঠে ছাপা হয়। সংবাদে বলা হয়েছে, সরকার বোরো ধানের প্রতি মণ ৯২০টাকা নির্ধারণ করায় কৃষকরা খুশি হয়েছিলেন। সরকারি এই ঘোষণায় এবার খাদ্যগুদামে ধান দেওয়ার আগ্রহও তৈরি হয়েছিলো। কিন্তু সরকারি ঘোষণার ১৫দিনের অধিক সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও ধান সংগ্রহ শুরু না হওয়ায় বাধ্য হয়ে সাংসারিক প্রয়োজনে কৃষকরা পাইকারদের কাছে অর্ধেক মূল্যে ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন।
কৃষকদের বরাত দিয়ে সংবাদে বলা হয়, প্রতিবছরই সুনামগঞ্জের সরকারি ঘোষণাকে তেমন তোয়াক্কা করে না খাদ্য বিভাগ। কৃষি বিভাগেরও একই অবস্থা। নির্ধারিত সময়ে কৃষকদের তালিকা তৈরি না করায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা। ফলে কৃষকদের লাভবান হওয়ার বদলে লাভবান হচ্ছে কতিপয় মধ্যস্বত্ত্বভোগী ফড়িয়ারা। কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, নানা কাঠখড় পুড়িয়ে গুদামে ধান দিতে এসে তাঁরা ধানের গুণাগুণ বিচারের নামে খাদ্য বিভাগের সংশ্লিষ্টদের দ্বারা হয়রানির শিকার হন।
বিষয়টি খুবই উদ্বেগের। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও ফড়িয়াদের মুনাফা লাভের কারণে কৃষকরা তাদের কষ্টে ফলানো বোরো ফসলের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে দেশের অর্থনীতির বড় চালিকা শক্তি কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কৃষক বাঁচাতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদয় হওয়া প্রয়োজন।