বিশেষ প্রতিনিধি ::
জগন্নাথপুরের রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের প্রার্থী পিয়ারা বেগম পার্শ্ববর্তী জয়নগর গ্রামে শেষ মুহূর্তে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত ছিলেন। হঠাৎ মোবাইল ফোনে খবর পান বর্তমান চেয়ারম্যান মজলুল হক কর্তৃক হাইকোর্টে রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে নির্বাচন স্থগিত হয়েছে। এই খবরে হতাশ ও ক্ষুব্ধ পিয়ারা বেগম কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে আমরা সব প্রার্থীরা শেষ মুহূর্তের নির্বাচনী প্রচারণায় ছিলাম। সাধারণ ভোটাররাও ছিলেন উচ্ছ্বসিত ও নির্বাচনোন্মুখ। হঠাৎ নির্বাচন স্থগিতের খবরে সাধারণ ভোটার এবং সকল প্রার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন।
আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী শহিদুল ইসলাম রানাও ছিলেন শেষ মুহূর্তের প্রচারণায়। নির্বাচন স্থগিতের খবরে তিনি ও তাঁর সমর্থকরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। এদিকে অন্য সব প্রার্থীরা যথাসময়ে যাতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সেজন্য উচ্চ আদালতে পাল্টা রিটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। তাছাড়া নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় নির্বাচন কমিশনেও অসন্তোষ বিরাজ করছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, হঠাৎ নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় নির্বাচন কমিশনের ব্যয় বৃদ্ধি এবং সময় অপচয়ের পাশাপাশি নানা জটিলতাও বাড়বে।
রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের নির্বাচন গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে উচ্চ আদালত তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছে। নির্বাচন স্থগিতাদেশের খবরে হতাশ হয়েছেন এ ইউনিয়নের প্রায় ২৭ হাজার ভোটার। সাধারণ ভোটরারা উৎসবমুখর নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় বর্তমান চেয়ারম্যান মজলুল হককেই দায়ী করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাদের অনেকেই এ ঘটনায় বর্তমান চেয়ারম্যানের কঠোর সমালোচনা করেন। আওয়ামী লীগ মনোনয়নবঞ্চিত বর্তমান চেয়ারম্যান মজলুল হক পরাজয়ের ভয়ে নদী ভাঙনে ভৌগোলিক পরিবর্তনের তুচ্ছ বিষয় নিয়ে আদালতে রিট করে নির্বাচন স্থগিত করেছেন বলে প্রার্থীরা মনে করেন। এভাবে মঙ্গলবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত ইউনিয়নের সর্বস্তরের মানুষ ক্ষুব্ধ ও হতাশ ছিলেন। দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার জন্য তারা নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, মেম্বার প্রার্থী এবং নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, তফসিলের আগে বর্তমান চেয়ারম্যান মজলুল হক কুশিয়ারা নদী ভাঙনে ইউনিয়নের মানচিত্র বদলে যাওয়া ও ভৌগোলিক পরিবর্তনজনিত ‘তুচ্ছ বিষয়’ নিয়ে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করেন। এর প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. দস্তগীর হোসেন এবং বিচারপতি একেএম শহীদুল ইসলাম গতকাল মঙ্গলবার এ ইউনিয়নে তিনমাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। আদালত আগামী তিন মাসের মধ্যে নদী ভাঙন জনিত কারণে সীমানা পরিবর্তনের বিষয়টি সংশোধন করার নির্দেশনা প্রদান করেছেন। হঠাৎ নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় অনেক ভোটার তুচ্ছ বিষয় নিয়ে উচ্চ আদালতে বর্তমান চেয়ারম্যান রিট পিটিশন দায়ের করায় তার সমালোচনাও করেছেন। একাধিক চেয়ারম্যান প্রার্থীর অভিযোগ পরাজয়ের ভয়ে মজলুল হক নদী ভাঙনের মতো তুচ্ছ বিষয়কে সামনে এনে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করেন। জানা গেছে, তৃণমূল আওয়ামী লীগ এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে পিছিয়ে থাকা মজলুল হককে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। এর ফলে তিনি ক্ষুব্ধ ছিলেন। তাই নির্বাচনী তফসিলের আগে তিনি রিট করেন।
জানা গেছে, এ ইউনিয়নে এবার চেয়ারম্যান পদে ৬জন, সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ১১ জন নারী ও সাধারণ ওয়ার্ডে ৪৭ জন সদস্য প্রার্থীসহ মোট ৬৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। তাদের সবাই নির্বাচন স্থগিতের খবরে হতাশ হয়ে প্রচারণা থেকে বিরত রয়েছেন। তবে ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই যথাসময়ে যাতে নির্বাচন হয় এজন্য পাল্টা রিটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী শহীদুল ইসলাম রানা বলেন, যিনি তুচ্ছ বিষয় নিয়ে যিনি নির্বাচন স্থগিত করতে ভূমিকা রেখেছেন তিনি ন্যাক্কারজনক কাজ করেছেন। কারণ যে বিষয়ে তিনি রিট করেছেন সেটা নির্বাচন স্থগিতের মতো বড় কোন কারণই নয়। তিনি সাধারণ ভোটার ও সকল প্রার্থীদের মনে আঘাত দিয়েছেন। তবে যথাসময়ে যাতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত সেজন্য আমরা সকল প্রার্থীরা পাল্টা রিটের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
বর্তমান চেয়ারম্যান মজলুল হক বলেন, মোবাইল ফোনে একজন আমাকে জানিয়েছেন নির্বাচন স্থগিত হয়েছে। তবে তিনি নদীভাঙনজনিত কারণে ভোটার এলাকা পুনর্বিন্যাসের জন্য আদালতে রিট করেছিলেন বলে জানান। অন্য প্রার্থী ও সাধারণ ভোটাররা তাকে এজন্য দায়ী করছেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তার অস্বীকার করেন।
জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের ভোটার মুক্তাদীর আহমদ বলেন, হঠাৎ করে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে রিটের ফলে নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় সাধারণ ভোটাররা ক্ষুব্ধ ও হতাশ। শেষ মুহূর্তে এসে তাদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সকল প্রার্থী এবং সাধারণ ভোটাররা নির্বাচন নিয়ে উচ্ছ্বসিত ছিলেন। কিন্তু নির্বাচন স্থগিতের ঘটনায় তাদের পরিশ্রম পন্ড হয়েছে। অর্থ অপচয় হয়েছে। অনেক প্রার্থী এ কারণে কান্নাকাটিও করেছেন। জটিলতা কাটিয়ে যথাসময়ে নির্বাচনের অনুরোধ জানান তিনি।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রধান সমন্বয়ক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, হাইকোর্টের একজন আইনজীবী মুঠোফোনে বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। তবে এখনো আদেশের কপি পাইনি।