সুনামগঞ্জের হাওরের বাঁধ ভেঙে হাজার হাজার একর জমির বোরো ফসল পানির নিচে পঁচে যাচ্ছে। কৃষকদের জীবন-জীবিকার একমাত্র অবলম্বন এ বোরো ফসল। ফসল হারিয়ে হাওরাঞ্চলের গ্রামগুলোতে এখন উৎকণ্ঠা ও হাহাকার পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্রথমদিকে তলিয়ে যাওয়া ক্ষেতের ধানগাছ পঁচতে শুরু করেছে।
এখনো বেচে যাওয়া প্রায় দুইটি হাওরের ফসল রয়েছে চরম ঝুঁকিতে। সুনামগঞ্জের পাউবো’র কর্মকর্তা, ঠিকাদার ও পিআইসি কমিটির সদস্যদের অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে প্রতি বছরই ফসলহানি ঘটে। তবে এবার যে ঘটনা ঘটেছে, তা সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমধর্মী। সময়মতো ঠিকাদার কিংবা পিআইসি’র লোকজনকে হাওরে বাঁধ নির্মাণে দেখা যায়নি। এবার ঠিকাদার এবং পিআইসি’র লোকজন বাঁধে কোনো কাজই করেননি। ফলে ভারী বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে ফসলহানি ঘটেছে। কৃষকের ঘরে এবার বোরো ফসল উঠানোর কোনো সুযোগ নেই। এদিকে চাল, আটা, সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলছে।
সুনামগঞ্জকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবিতে জেলার বিভিন্ন স্থানে কৃষক-জনতা মানববন্ধন ও সভা, সমাবেশ করে যাচ্ছেন। কৃষকরা বাঁধ রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা করলেও এখন আর হাওরে কোনো ঠিকাদার, পিআইসি’র লোকজন এবং পাউবো’র কোনো কর্মকর্তাকে দেখা যায় না। ঢলের পানিতে হাওরের বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় মনে হয়, তাঁরা বাঁধরক্ষা বা নির্মাণের দায়িত্ব থেকে মুক্ত হয়েছেন।
সুনামগঞ্জের অর্থনীতি পুরোটাই কৃষিনির্ভর। কৃষি বিপর্যস্ত হওয়া কৃষকদের জীবন জীবিকার পথ একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। তাছাড়া যেসব কৃষক নিজের জমি কিংবা অন্যের জমি বর্গা বা বন্ধক এনে চাষাবাদ করেন। ফসল উৎপাদন করতে গিয়ে ধার দেনা করেছেন। সেসব ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব হবে না কৃষকদের। দরিদ্র কৃষকদের ঋণ পরিশোধের চাপটি সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। তাই সরকারকে যেমন সুনামগঞ্জ জেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করা জরুরি হয়ে দেখা দিয়েছে, তেমনি এই জেলার কৃষককে বাঁচাতে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করাও জরুরি।