সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’। আজ শনিবার বিকেল কিংবা সন্ধ্যায় বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু। এরই মধ্যে ১৮ জেলার সাড়ে ২১ লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে।
শুক্রবার রাত ৮টার মধ্যে সবাইকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। এর আগেই এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সারাদেশে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খুলে তদারকি করা হচ্ছে।
শুক্রবার দুপুর থেকেই মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া শুরু হয়েছে। ১৮টি জেলার ৩ হাজার ৮৫১টি আশ্রয়কেন্দ্রে এসব মানুষকে আনা হয়। তাদের থাকা, খাওয়া ও চিকিৎসার সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছেন ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কমিটির (সিপিপি) ৫৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। মাঠে থাকবেন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, রোভার স্কাউট ও আনসার ভিডিপি সদস্যরা। সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রিয়াজ আহমেদ ও সচিব মো. শাহ কামালসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এর কারণে সমুদ্রবন্দরগুলোতে জারি করা হয়েছে ৫-৭ নম্বর সতর্কতা সংকেত। বন্ধ রয়েছে অভ্যন্তরীন রুটের নৌ চলাচল। ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে গত দু’দিন ধরে দেশের সব অঞ্চলেই বৃষ্টি হয়েছে, যা অব্যাহত থাকবে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতি মোকাবেলায় ৫৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবকসহ সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর।
রিপোর্টটি লেখা পর্যন্ত আবহাওয়া বিশেষ বুলেটিন ১৪-তে জানানো হয়, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে একই এলাকায় (১৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে। রাত ৯টায় ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৬৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম, পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম এবং মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় ঘূর্ণিঝড় ‘রায়ানু’ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৮৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম, পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম এবং মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
ঘূর্ণিঝড়টি ঘনিভূত হয়ে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আজ শনিবার বিকাল বা সন্ধ্যা নাগাদ বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কি.মি. এর মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কি.মি. যা দমকা অথবা ঝড়োহাওয়ার আকারে ৮৮ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা স¤পর্কে আবহাওয়া অফিস জানায়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৭ (সাত) নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ০৫ (পাঁচ) নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ০৭ (সাত) নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ০৭ নম্বর বিপদ সংকেত বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ০৬ (ছয়) নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ০৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্ত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাস স¤পর্কে জানানো হয়, উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিুাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছাসে প্লাবিত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর জেলা সমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে ভারি থেকে অতি ভারী বর্ষণ সহ ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কি.মি. বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
রোয়ানুর প্রভাবে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে সব ধরনের নৌ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ)। সংস্থাটির পরিচালক (ট্রাফিক) মো. মফিজুর রহমান জানান, খারাপ আবহাওয়ার কারণে শুক্রবার বিকেল থেকে পরবর্তী নির্দেশ না পর্যন্ত সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে।
প্রসঙ্গত, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃহ¯পতিবার থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হচ্ছে। আবহাওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী শনিবার ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।