সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
নির্বাচনের আগে আওয়াজ উঠেছিল ‘পরিবর্তনের’, ছিল ঘুষ, সারদা কেলেঙ্কারির মতো ঘটনা। কলকাতায় ফ্লাইওভার ভেঙে পড়ার পর রব উঠেছিল, পাঁচ বছরেই ঘুরে যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির হাওয়া। শেষ পর্যন্ত ভারতের এই রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে তার কিছুই হয়নি।
সব শঙ্কা কাটিয়ে আবারও পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় বসছে তৃণমূল কংগ্রেস। ফিরছে বিপুল বিক্রমে, আগের চেয়েও বেশি আসন আর নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে।
বৃহ¯পতিবার ঘোষিত অনানুষ্ঠানিক ফলাফলে কংগ্রেস-বামফ্রন্ট জোটকে বিপুল ব্যবধানে পেছনে ফেলে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে রাজ্যের ক্ষমতায় আসছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।
এনডিটিভি জানাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের ২৯৪টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের ‘জোড়াফুল’ পেয়েছে ২১৪টি আসন। কংগ্রেসের ৪৫ আর বামফ্রন্টের ২৮ আসন মিলিয়ে বিরোধী জোটের সংগ্রহ ৭৩টি। আর কেন্দ্র সরকারে ক্ষমতাসীন বিজেপি বাংলায় পেয়েছে সাতটি আসন। গত বিধানসভা নির্বাচনে সব আসনেই হেরেছিল বিজেপির প্রার্থীরা।
৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতা নেন কংগ্রেসের এক সময়ের নেত্রী মমতা। ওই নির্বাচনে তার দল তৃণমূল পায় ১৮৪টি আসন। বামফ্রন্টের কাস্তে-হাতুড়ি ওই নির্বাচনে ৬০টি এবং কংগ্রেসের পাঞ্জা প্রতীক ৪০ আসনে জয় পায়।
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন ২০১৬-তে তৃণমূল পেয়েছে ৪৬.১% ভোট, বাম-কংগ্রেসের জোট পেয়েছে ৩৬.৭%, বিজেপি পেয়েছে ১০.৪%, ন্যান্য দল প্রায় ১০%।
সেবার মমতার রাজনৈতিক মিত্র ছিল তার আগের দল কংগ্রেস। কিন্তু রাজনীতির পালাবদলের খেলায় এবার তাকে একাই লড়তে হয়। অন্যদিকে রাজ্যে এক সময়ের ক্ষমতাসীন বামফ্রন্ট মমতা হটাতে জোট বাঁধে কংগ্রেসের সঙ্গে।
বাংলাদেশের সীমান্ত সংলগ্ন ভারতের এই রাজ্যের ভোটের ফল নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশিদের আগ্রহ ছিল।
জনরায় নিয়ে আবার পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় ফিরতে যাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বামফ্রন্টের জ্যোতি বসু মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় দুই দেশের কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি হয়। সে সময় জ্যোতি বসুর ভূমিকার কথা স্মরণ করা হয় এখনও।
অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতার আপত্তির কারণে আটকে যায় দুই দেশের তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি। পরে কেন্দ্রের চাপে মমতার সুর বদলালেও সেই চুক্তি এখনও আলোর মুখ দেখেনি।
এবারের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বেশ বেকায়দায় ছিল তৃণমূল কংগ্রেস। ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে ব্যাপক সন্ত্রাস ও দুর্নীতির অভিযোগ আনা হাচ্ছিল বিরোধী শিবির থেকে। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িতদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগও উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
সেই সঙ্গে সারদা চিট ফান্ড কেলেঙ্কারি, নারদের ঘুষ কেলেঙ্কারিতে তৃণমূলের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হওয়ায় কলকাতার ‘দিদি’ বেশ খানিকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন বলেই মনে হচ্ছিল।
ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাস ভোটে প্রভাব ফেলতে পারে এমন আশঙ্কায় নির্বাচন কমিশনও এবারের ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে। ৪ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত ছয় দফার ভোটের সময়ে বদলি করা হয় বহু সরকারি কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যকে।
নির্বাচনের আগে আগে ভারতের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরে তৃণমূলের পরাজয়ের পূর্বাভাস দেওয়া হলেও বুথফেরত জরিপেই জয়ের সুবাস পেতে শুরু করেন মমতা।
পশ্চিমবঙ্গের মানুষ আবারও রাজ্য শাসনের ম্যান্ডেট দেওয়ার পর বাংলার মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি ‘শান্তি বজায় রাখার’ ডাক দিয়েছেন বলে আনন্দবাজারের খবর।
জয় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর বৃহ¯পতিবার দুপুরে কালীঘাটে এক সংবাদ সম্মেলনে মমতা ঘোষণা, মে মাসের বাকিটা সময় রাজ্যে ‘সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বিজয়োৎসব’ চলবে।
সেই সঙ্গে দিদির কণ্ঠে খানিকটা শাসানিও ছিল পুলিশের জন্য। তিনি বলেন, “আমিও ৪০ বছর ধরে রাজনীতি করছি। রাজনীতিটা আমি কারও চেয়ে কম বুঝি না। পাঁচ বছর আগে পরিবর্তনের সময়েও এত বাড়াবাড়ি দেখিনি। যে বাড়াবাড়িটা এ বার করল কেন্দ্রীয় বাহিনী আর পুলিশ।”
অবশ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করে শুভেচ্ছা জানাতে দেরি করেননি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নিজেই টুইট করে তিনি সে কথা জানিয়েছেন।
মোদী লিখেছেন, “মমতাজির সঙ্গে কথা হয়েছে। অসাধারণ এই জয়ের জন্য তাকে অভিনন্দন জানিয়েছি।”