বিশেষ প্রতিনিধি ::
সুনামগঞ্জের সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামফলক, তোরণ, সাইনবোর্ডসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ভুল বানানের ছড়াছড়ি লক্ষ করা গেছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান হয়েও বাংলা একাডেমির বানান নির্দেশিকা মানছেনা প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা ভুল বানান দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছেন। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভুল বানানের ছড়াছড়ির কারণে শিক্ষাবিদগণ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অবিলম্বে ওই সকল নামফলকে শুদ্ধ বানান ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
সুনামগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের নামফলকে সাতটি শব্দ রয়েছে। ফলকে সুনামগঞ্জ বানান লেখা হয়েছে ‘সুনামগন্জ’, সরকারি লেখা হয়েছে ‘সরকারী’, খ্রিস্টাব্দ লেখা হয়েছে ‘খ্রীষ্টাব্দ’।
সুনামগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় লেখার কথা থাকলেও বিদ্যালয়ের নাম লেখা হয়েছে ‘উচ্চ বালিকা’ বিদ্যালয়। খ্রিস্টাব্দকে লেখা হয়েছে ‘খ্রিষ্টাব্দ’, নির্মাণ লেখা হয়েছে ‘নির্মান’। সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ে ১২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে নির্মিত নামফলকে খ্রিস্টাব্দকে লেখা হয়েছে ‘খ্রিষ্টাব্দ’। একই বিদ্যালয়ের বাস্কেটবল গ্রাউন্ডের নামফলকেও খ্রিস্টাব্দ বানান লেখা হয়েছে ‘খ্রিষ্টাব্দ’। পৌরসভা পরিচালিত আদর্শ শিশুশিক্ষা নিকেতনের নামফলকেও খ্রিস্টাব্দ বানান লেখা হয়েছে ‘খ্রিষ্টাব্দ’। সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের প্রবেশ তোরণে খ্রিস্টাব্দকে লেখা হয়েছে ‘খ্রিষ্টাব্দ’। সুনামগঞ্জ পৌর কলেজের নামফলকে প্রতিষ্ঠা সনকে খ্রিস্টাব্দ না লিখে ভুল বানানে লেখা হয়েছে ‘ইংরেজী’।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও সরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও ভুল বানানের ছড়াছড়ি লক্ষ করা গেছে। সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনের বিশাল সাইনবোর্ডে ‘জরুরি’ শব্দ লেখা হয়েছে ‘জরুরী’। জেলা পরিষদের রেস্ট হাউসের প্রবেশপথে ‘রেস্ট হাউস’ লেখা হয়েছে ‘রেষ্ট হাউস’। জেলা শিল্পকলা একাডেমির পুরাতন ভবনের নামফলকে একাডেমি বানান লেখা হয়েছে ‘একাডেমী’। নতুন ভবনের রাধারমণ দত্তের নাম ভুল লেখা হয়েছে। রাধারমণের বদলে লেখা হয়েছে ‘রাধারমন’। এভাবে সরকারি আরো অনেক স্থাপনার নামফলক, সাইনবোর্ডে ভুল বাংলা বানান লক্ষ করা গেছে।
কবি ও লেখক কল্লোল তালুকদার চপল বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো মানুষ তৈরির আঁতুড়ঘরে বানান ভুল থাকলে শিক্ষার্থীরা ভুল বানানই শিখবে। দীর্ঘদিন ধরে ভুল বানানের নামফলক সাঁটানো থাকলেও কর্তৃপক্ষ উদাসীন। এই উদাসীনতা মেনে নেওয়া যায়না। এটা শুধু ভুলই নয় সরকারি নিয়মকে অমান্য করার শামিল। সরকারি প্রতিষ্ঠান হয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমির নিয়ম না মানলে অন্যরাও বাংলা ভাষার প্রতি উদাসীন হবে।
কবি ও ভাষাবিদ ইকবাল কাগজী বলেন, সুনামগঞ্জের একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের নামফলক, তোরণে বাংলা বানানে শুধু ভুল আর ভুল। জরুরি ভিত্তিতে এগুলো অপসারণ প্রয়োজন। নাহলে আমাদের প্রজন্ম ভুল বানান ও পদ্ধতি অভ্যস্ত হবে। এর দায় কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠান এড়াতে পারেনা।
এইচ.এম.পি. উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি ইয়াকুব বখ্ত বহলুল বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড নামফলকে বাংলা বানানের ভুল মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের প্রতিষ্ঠানে কোন ভুল বানান সম্বলিত সাইনবোর্ড ফলক থাকলে আমি অবশ্যই তা অপসারণ করে শুদ্ধ বানানের ফলক লাগিয়ে দিব। বাংলা বানানের প্রতি সবাইকে যতœশীল হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।