আবহমানকাল থেকে সুনামগঞ্জের একটি সুনাম আছে। হাওর-বাঁওর নিয়ে জলঙ্গলের জলজসবুজ ¯িœগ্ধতার সুবিস্তৃত প্রাকৃতিক পরিবেশে এখানে গড়ে উঠেছে বিশ্ববিরল এক প্রশান্তির দেশ। আধুনিকতার পঙ্কিলতা ও পুঁজিবাদের শোষণ-নিপীড়ন এই জলসংস্কৃতির পৃথক প্রদেশকে ততোটা প্রগাঢ় করে স্পর্শ করেনি, গত শতাব্দীর শেষ অবধিও। কিন্তু বর্তমান শতাব্দীর দেড় দশক পেরুতে না পেরুতেই এখানকার জলসংস্কৃতির ¯িœগ্ধতা পুঁজিবাদী আধুনিকতার অগ্নির তীব্র তাপে উষ্ণ হয়ে উঠেছে, মনে হচ্ছে খান্ডবদাহনের আর বেশি দেরি নেই। অবস্থাক্রমে এমন অস্থির-উত্তপ্ত হয়ে উঠছে যে, সুনামগঞ্জকে আর প্রশান্তি মোড়া এলাকা বলার কোনও অবকাশ থাকবে না। শহর সুনামগঞ্জকে বলা যাবে না শান্তির ¯িœগ্ধতায় মোড়া একটি গ্রামগন্ধী শহরে। সকলের অলক্ষ্যে ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জ ক্রমেই অশান্ত হয়ে উঠছে। দৈনিক সুনামকণ্ঠে যখন সংবাদ শিরোনাম পড়তে হয়- ‘চক্রের ২ সদস্য গ্রেফতার : অস্ত্র উদ্ধার : যাত্রীবেশে ছিনতাই করতো তারা’, তখন এমনটি না ভাবার কোনও কারণ বোধ করি আর অবশিষ্ট থাকে না। ছিনতাইকারীর বাসা থেকে আগেয়াস্ত্র (রিভলবার) পুলিশ উদ্ধার করেছে যেমন সত্যি, তেমনি ইতিপূর্বে রাজনীতিক দলের ক্যাডার কর্তৃক অস্ত্র প্রদর্শনের বিসদৃশ ঘটনা ঘটেছে এ শহরে সেটাও সত্যি। অর্থাৎ সমাজ ব্যবস্থায় পূর্বেকার শান্তিপূর্ণ অবস্থা এখানে আর নেই, এখানকার সমাজ-আকাশে শান্তির সুবাতাস আর বইছে না। কয়েকদিন আগের ঘটনা। এ শহরের এক তরুণ তার স্ত্রীকে হোটেলের কক্ষে হত্যা করেছে। এই কিছুদিন আগে কাজীর পয়েন্ট এলাকায় এক তরুণকে কুপিয়ে আহত করেছে সন্ত্রাসীরা, পরে তরুণ মৃত্যুবরণ করেছে।
ইদানিং জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে জনগণ ভীষণ শঙ্কিত, ভীত ও সন্ত্রস্ত। অবস্থা খুব একটা ভাল নয়। খারাপ একটা সময় এখন আমরা অতিক্রম করছি। এই ক্রান্তিকালের সময়টুকু সুনামগঞ্জও অতিক্রম করছে দেশের সঙ্গে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় সুনামগঞ্জের সমাজবাস্তবতাকে এক সময় মায়ের পেটে থাকা শিশুর নিরাপত্তাবস্থার সঙ্গে এক করে দেখা হতো। কিন্তু এখন বোধ হয় আর সে অবস্থা নেই। অন্তত চারপাশের রাজনীতিক-সামাজিক ঘটনা প্রবাহ তারই ইঙ্গিতবহ।
এমতাবস্থায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে আরও উন্নত ও কার্যকর করার কোনও বিকল্প নেই, এই অভিমতের ব্যাপক প্রসার পরিলক্ষিত হয় সাধারণ মানুষের মধ্যে। আমরা মনে করি এই অঞ্চলের গৌরবময় ঐতিহ্য শান্তির সামাজিক আবহাওয়াটিকে বজায় রাখার জন্য সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে, সামাজিক, রাজনীতিক ও সাংস্কৃতিক অনুশীলনের মাধ্যমে। বিশেষ করে জেলা প্রশাসনকে হতে হবে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা ও প্রসারে অধিকমাত্রায় সচেষ্ট।