বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সাল নাগাদ একটি উন্নত দেশে পরিণত করার বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বর্তমান সরকার। এই প্রেক্ষাপটে ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে ভবিষ্যত প্রজন্মকে কর্মমুখী ও কর্মোপযোগী করে গড়ে তোলা প্রয়োজন। আর তা করতে হলে কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই। এই শিক্ষার গুরুত্বও অপরিসীম। কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীর সংখ্যা যেমন বৃদ্ধি করা আবশ্যক, তেমনি এই শিক্ষাকেও যুগোপযোগী করা চাই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কর্মবাজারের চাহিদার নিরিখে।
দেশকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করতে হলে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষা একান্ত প্রয়োজন। যে দেশের মানুষ কারিগরি শিক্ষায় যত উন্নত সে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা তত উন্নত। এমনকি ঐ দেশের বেকার মানুষের সংখ্যাও অন্য দেশের তুলনায় অনেক কম। তাই আমাদের দেশকে পৃথিবীর উন্নয়নশীল দেশের পর্যায়ে নিতে হলে কারিগরি শিক্ষার প্রতি আরো বেশি নজর দিতে হবে। দেশের মোট জনসংখ্যার বিশাল একটি অংশ বেকার। এ বেকার জনগোষ্ঠীকে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারলে তারা আমাদের স¤পদে পরিণত হবে।
এ ক্ষেত্রে কারিগরি প্রশিক্ষণ শিক্ষাব্যবস্থায় মাছের চাষ, হাঁস-মুরগির খামার, পশু পালন, ফলের চাষ, ড্রয়িং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, পোল্ট্রিফার্ম, ডেইরি ফার্ম, বুটিক শিল্প, কম্পিউটার ট্রেনিং এন্ড সার্ভিসিং, মোবাইল সার্ভিসিং, সেলাই, ইলেক্ট্রনিক্সসামগ্রী সার্ভিসিং, সেলুন, ক্ষুদ্রব্যবসা, হস্ত শিল্প, কাঠের কাজ, বেতের কাজ, বাঁশের কাজ, ল্যাব মেশিন স্থাপন, ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ, হোটেল সংক্রান্ত ট্রেনিং, চুল কাটার ট্রেনিং, দর্জি, কল-কারখানার কাজ, সেলস্ ম্যানশিপ ইত্যাদি বিষয়ে খুব অল্প সময় এবং অল্প অর্থ ব্যয় করে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বেকার সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে।
মনে রাখতে হবে আমাদের যে বিপুল জনসংখ্যা, তাকে জনশক্তি বা জনস¤পদে রূপান্তর করতে না পারলে জনসংখ্যার বিরাট বোঝার চাপে আমাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক কাঠামো নানাভাবে বিপর্যস্ত হবে। দিনে দিনে ভয়াবহ সংকট সামনে এসে দাঁড়াবে। সামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিরতা, অপরাধপ্রবণতা, মূল্যবোধের অবক্ষয়, মাদকাসক্তি প্রভৃতি অনাকাক্সিক্ষতভাবে বাড়তেই থাকবে। তাই এ বেকার জনগোষ্ঠীকে কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশের সম্পদে পরিণত করতে সরকারকে কারিগরি শিক্ষর প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।