বিশেষ প্রতিনিধি ::
জেলা পরিষদ নির্বাচন শেষ হওয়ার দুই সপ্তাহ পেরুনোর আগেই ‘বক্তৃতা যুদ্ধে’ জড়িয়ে গেছেন ক্ষমতাসীন আ.লীগের নেতারা। নাম উল্লেখ না করে আকার-ইঙ্গিতে একে অন্যের বিরুদ্ধে তীর্যক মন্তব্য করছেন। এসব মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হচ্ছে। নেতাকর্মীরাও নানা প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন।
আ.লীগ দলীয় সূত্রে জানা যায়, জেলা পরিষদ নির্বাচনের রেশ ধরে মুখোমুখি অবস্থানে আছেন সুনামগঞ্জ আ.লীগের বিবদমান দু’পক্ষ। এক পক্ষে আছেন জেলা আ.লীগের সভাপতি মতিউর রহমান, জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান নুরুল হুদা মুকুট, মেয়র আয়ূব বখতসহ কয়েকজন মেয়র ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান।
অন্যপক্ষে আছেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, জেলা আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমনসহ বেশ কয়েকজন সাংসদ।
জেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে রাজপথে সক্রিয়তা দেখাচ্ছেন নুরুল হুদা মুকুটসহ নেতৃবৃন্দ। সর্বশেষ গণতন্ত্রের বিজয় দিবসের সমাবেশে নুরুল হুদা মুকুট বলেন, ২৮ ডিসেম্বর নির্বাচনে (জেলা পরিষদ নির্বাচন) সাধারণ মানুষের বিজয় হয়েছে। মানুষের ভালবাসায় আমি বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছি। আমি শুধু বিপুল ভোটে জয়লাভ করি নাই, ৫ জন এমপি’র বিরুদ্ধে জয়লাভ করেছি।
তিনি আরো বলেন, ‘কালোবিড়াল’ আমার বিরুদ্ধে ভোট চাইতে এসেছিল। আমার বিরুদ্ধে অনেক অপপ্রচার চালিয়েছে। আমাকে হারানোর জন্য কালোবিড়াল নানা রকম কথাবার্তা বলেছে। উড়ে এসে জুড়ে বসে এ সমস্ত অতিথি পাখির জায়গা হবে না। যখন শীতের সময় আসে তখন তাদের সমাগম হয় শীত শেষ, তাদেরও খোঁজে পাওয়া যায় না। এই সকল হাইব্রিড নেতার জায়গা সুনামগঞ্জে হবে না। এই সকল হাইব্রিড নেতাতে ২৮ তারিখ নির্বাচনে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। আমি সুনামগঞ্জে রাজনীতি করব, সৎ-নিষ্ঠাভাবে রাজনীতি করব।
এদিকে গত মঙ্গলবার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার শান্তিগঞ্জ বাজারস্থ উপজেলা আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয় প্রাঙ্গণে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের উদ্যোগে সংগঠনের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস ও বর্তমান সরকারের ২য় মেয়াদে ৩বছর পূর্তি উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি বলেন, সুনামগঞ্জের দু-একজন নেতা বিএনপি-জামায়াতের সাথে হাত মিলিয়ে আমার বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণকে উস্কানি দিয়ে বলে, এমএ মান্নান সব উন্নয়ন সুনামগঞ্জ থেকে দক্ষিণ সুনামগঞ্জে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, আমি ইট-বালু, পাথর ও জলমহাল খেতে আসিনি। কন্টাক্টারি করতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আসিনি। আমি জনগণের উন্নয়নে কাজ করতে এসেছি।
এমএ মান্নান আরো বলেন, আমি ডুংরিয়ার সন্তান ডুংরিয়াই থাকবো। ভৈরব থেকে এসে সুনামগঞ্জে কৃত্রিম নেতা সাজবো না। মুশতাকের প্রেতাত্মারা প্রতিনিয়ত আমার বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জে বসে কথা বলছে, কুৎসা রটাচ্ছে, আমি আর সহ্য করতে পারছি না। এতদিন আমি ধৈর্য ধরেছিলাম। সেই কৃত্রিম নেতা উপ-নির্বাচনে পাস করে এমপি হয়েছিল, সে মনে করেছে সে বিরাট কিছু হয়ে গেছে। সরকারের টাকা এনে নিজের নামে কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছে। সরকারি কাজে ইট-বালু-পাথরের কন্টাক্টারি করে কালো টাকা বানিয়েছে। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যারা সুনামগঞ্জে বসে, কুৎসা রটাচ্ছে, তারা কি সিলেট বা ঢাকা গিয়ে এসব কথা বলতে পারবে? কখনোই পারবে না। তাদের সীমা এই সুনামগঞ্জ শহরের ভেতরে। অপপ্রচারের দাঁত ভাঙা জবাব দেয়া হবে।
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, বিগত জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর কথা অমান্য করে, বিএনপি-জামায়াতের সাথে হাত মিলিয়ে কালো টাকার বিনিময়ে নির্বাচিত হয়েছে। সারা জেলায় মাত্র ১২শ ভোট ছিল। তারা যদি প্রকৃত মানুষ হয়ে থাকে তাহলে আসুক নৌকার সাথে গণভোটে, দেখবেন ২০টি ভোট পায় কি-না।
এছাড়া জেলা আ.লীগের সভাপতি মতিউর রহমানও নানা সময়ে এমএ মান্নান এমপি’র বিরুদ্ধে দলীয় সমাবেশে কথা বলেছেন।
আ.লীগের শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রকাশিত হওয়ার পর তার লিংক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হচ্ছে। তাদের অনুসারীরা একে অন্যকে নানা কটূক্তি করে এসব লিংক পোস্ট করতে দেখা গেছে।