1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
সোমবার, ০৫ মে ২০২৫, ০১:৫৮ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

সতীশের মিলনমেলা : সৈয়দ মহিবুল ইসলাম

  • আপডেট সময় রবিবার, ৮ জানুয়ারী, ২০১৭

এক : উৎসবের দিন-রজনী
সরকারি সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সুনামগঞ্জ এর ৭৫ বৎসর পূর্তি উপলক্ষে ২৩ ও ২৪ ডিসেম্বর ২০১৬ হীরক জয়ন্তী উদ্যাপন বিপুল সমারোহে উদ্যাপিত হয়েছে। উৎসবমন্য সুনামগঞ্জবাসী এই উৎসবের আনন্দে পুলকিত হয়েছেন যেন বহুদিন পর রূপকথার এই শহর জেগে উঠেছে। সতীশের বালিকাদের অভিনন্দন জানাই হৃদয়পুরের গহিন থেকে। সতীশের বালিকারা দাদী, নানী, ফুফু, খালা, জেঠি, পিসি, বধূ ও জননী হয়েছেন। আবার নবযুগের উল্লসিত তরুণীরাও আছেন (আমার কন্যাও আছেন)। কিন্তু সকলেই এক মহামিলনের উৎসবে সম্মিলিত হয়েছেন তাদের চোখে যে আনন্দের রেশ তা ছড়িয়ে পড়েছে এই ছোট শহরে, সুকান্তের ভাষায় ধানকাটার রোমাঞ্চকর দিনগুলির জন্য যেমন কৃষক প্রতীক্ষা করে তেমনি ফেসবুকের পেইজে এই উৎসবের প্রতীক্ষার আওয়াজ পাচ্ছিলাম। লন্ডন-আমেরিকা থেকে সতীশের বালিকারা আনন্দ উদ্বেলে মেতে উঠেছিলেন। তা বাস্তবে রূপায়িত হয়েছে দু’দিনের উৎসবে। সংগত কারণে অন্দরমহলে প্রবেশ করতে পারিনি কিন্তু বিন্দুমাত্র দুঃখের লেশ নেই।
আমাদের রক্ষণশীল পরিবারের একমাত্র বোন সৈয়দা ফাতেমা খানম ১৯৭২ সালে বেশ ভাল ফলাফল করেই এসএসসি পাস করেছিলেন কিন্তু বিয়ে হয়ে যাওয়ায় আর উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারেননি। তার নামে পাঁচশত টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করেছিলাম কিন্তু নাম ও ছবি দেখতে পাইনি বলে কিছুটা কষ্ট অনুভব করেছি।
এদিক দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান ও তার সহযোদ্ধাদের কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই। জুবিলিয়ান উৎসবের ‘জুবিলীর জানালায়’ রেজিস্টার্ড প্রত্যেক শিক্ষার্থীর সন অনুযায়ী নাম এসেছে (ছবি পাওয়া না গেলেও)। জুবিলিয়ান উৎসবের মধ্যে লক্ষ্য করেছি ঈদ/অন্যান্য উৎসবে যেরকম বাড়ি ফেরে স্বজনেরা তেমনি এবারও আমাদের বালিকারা নাইওর এসেছেন। এই উৎসবে শৃঙ্খলা ও প্রাণের আবেগের কারণে ত্রুটি-বিচ্যুতিকে ক্ষমা করা যায়। প্রয়াত সতিশিয়ানদের শ্রদ্ধা জানাই। যে আলো ছড়িয়েছে এই বিদ্যাপীঠ তা তুলনাহীন। একটি অসাধারণ স্মরণিকা ‘চন্দ্রালোকের বালিকারা’ প্রকাশিত হয়েছে। সুনামগঞ্জ-মৌলভীবাজার সংরক্ষিত আসনের সাংসদ আমার বন্ধু ও সহপাঠী (কলেজ) অ্যাডভোকেট শামছুন নাহার বেগম শাহানা রাব্বানী আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি যখন চিৎকার করে বলছিলেন ‘আমরা সবাই চুয়াত্তর’ তখন আমার মধ্যেও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছিল। সদস্যসচিব সঞ্চিতা চৌধুরী, জেসমিন আরা বেগম (জেলা ও দায়রা জজ), রোমেনা লেইস, চমন চৌধুরী (জেলা ও দায়রা জজ, প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল), ডা. লুৎফুন্নাহার জেসমিন, রুনা লেইস, নার্গিস কবির (লন্ডন প্রবাসী), তানিম চৌধুরী এদের সক্রিয়তা অনুষ্ঠানে লক্ষ্য করেছি। আড্ডা, হাসি, গান আর স্মৃতিচারণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় দু’দিনের মিলনমেলা। বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী শিল্পী তুলিকা ঘোষ চৌধুরীসহ সাংস্কৃতিক অঙ্গনের কর্মীরা সরব রেখেছেন মঞ্চকে। সমাপ্তিপর্বে রাত ৮টার পর তারকা সঙ্গীত শিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ গানে মাতোয়ারা করে অনুষ্ঠানের উপভোগ্যতা বাড়িয়ে দিয়েছেন বহুগুণে।
এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই চিকিৎসক, আইনজীবী, বিচারক, শিক্ষক, রাজনৈতিক নেতাসহ সমাজের মর্যাদাবান পদের অধিকারী হয়েছেন। প্রফেসর দিলারা হাফিজ (প্রাক্তন মহাপরিচালক, মাউশি), প্রফেসর শামছুন নাহার (প্রাক্তন অধ্যক্ষ, সিলেট সরকারি মহিলা কলেজ), প্রফেসর কল্পনা তালুকদার, সহযোগী অধ্যাপক মহাশ্বেতা রায়, শিখা চক্রবর্তী এই শিক্ষাবিদদের দেখে অনেক ভালো লেগেছে। আমার কয়েকজন ব্যাচমেট যাদেরকে কলেজে পেয়েছি তৃষ্ণা শুক্লা দাস, অঞ্জলী চক্রবর্তী এদেরকে দেখে পুরনো দিনের কথা মনে পড়েছে। সকলের নাম এ মুহূর্তে মনে পড়ছে না, তবে এই মহামিলনের সারথিদের শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।
প্রফেসর দিলারা হাফিজ এই বিদ্যালয়ের ছাত্রী যিনি মহাপরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পদ অলংকৃত করে আমাদের তথা সুনামগঞ্জবাসীকে গর্বিত করেছিলেন। সকলেই শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছেন প্রয়াত শিক্ষক ও প্রয়াত ছাত্রীদের। ‘যাক নিজের পুরনো বস্তাবন্দী দিনগুলোর কথা বলে আর বিরক্ত করতে চাই না তবে আজ আমি বিশেষভাবে স্মরণ করছি আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষিকা করিমুন্নেছা আপাকে (প্রয়াত) ভীষণ ভয় করতাম উনাকে সবাই তবে যথার্থ শিক্ষিকা আপা। (“দিনগুলো মোর সোনার খাঁচায় ডা. আইভী পুরকায়স্থ, চন্দ্রালোকের বালিকারা- পৃষ্ঠা – ১৭)
আলোকিত মানুষ হতে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষক/শিক্ষিকা যে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন তা বলাই বাহুল্য। যে কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষিকার নাম জানতে পেরেছি- যেমন অশ্বিনী কুমার শর্মা, কিরণবালা দেবী, করিমুন্নেছা খাতুন, লুৎফুন্নেছা খাতুন, মাস্টার মশাই গুরুদাস ভট্টাচার্য্য এবং ওনার পত্নী গুরুমা হিসেবে পরিচিত, মাহতাবুন্নেছা খাতুন, সবার প্রিয় ডালিম দি, ঝুনু দি সহ নাম না জানা আলোর পথের যাত্রীদের আমার নমস্কার।
প্রত্যাশা করছি সময়ের আবর্তনে আবার হয়তো সতীশের বালিকারা মিলিত হবেন। সমবেত কণ্ঠে গাইবেন- ‘জাগো নারী, জাগো বহ্নিশিখা।’

দুই : ‘চন্দ্রালোকের বালিকারা’
নামকরণের জন্য সুনামগঞ্জের কৃতী সন্তান ড. মোহাম্মদ সাদিক (চেয়ারম্যান, পিএসসি)-কে ধন্যবাদ। অনেক চমকপ্রদ তথ্য পেয়েছি ‘চন্দ্রালোকের বালিকারা’ সংকলন থেকে।
প্রধান শিক্ষক জনাব মো. আব্দুর রহিম-এর বাণী থেকে জানা যায় : ‘সরকারি এস.সি. বালিকা বিদ্যালয়টি প্রথম প্রতিষ্ঠার সঠিক দিনকাল জানা না গেলেও পরিদর্শন বহিতে লিখিত আসামের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রীর ১৫.০৩.১৯৩৮খ্রি. এর রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে, এ স্কুলটি এল.পি স্কুল নামে ১৯২১ সালের পূর্ব থেকেই প্রতিষ্ঠিত ছিল। এ শহরের কতিপয় গণ্যমান্য বিদ্যোৎসাহী লোকের প্রচেষ্টায় ০১.০৭.১৯২৯খ্রি. তারিখে এটি ME (Middle English School) মর্যাদায় উন্নীত হয় এবং নামকরণ করা হয় Town Girls Middle School. ……………….. শ্রীপুর স্টেট এর স্বত্বাধিকারী, প্রয়াত বাবু সতীশ চন্দ্র চৌধুরী এর স্মৃতি রক্ষার্থে তাঁর মাতা এই বিদ্যালয়ে ৫০০০/- রুপি দান করেন এবং তখন (১৯৪১খ্রি.) নামকরণ করা হয় Satis Chandra Girls High School, Sunamgonj.’
প্রফেসর দিলারা হাফিজের লেখা থেকে জানা যায় : ‘১৯৩৯ সনে জনাব সতীশ চন্দ্রের মাতা শ্রদ্ধেয়া রাজ্যেশ্বরী দেবী স্কুলটিকে পাঁচ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করেন। ১৯৪০ সনে এটি উচ্চ বিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয় এবং সতীশ চন্দ্রের নাম স্কুলটির সাথে সংযোজন করা হয়। জনাব সতীশ চন্দ্র তাহিরপুর থানার অন্তর্গত শ্রীপুরের জমিদার ছিলেন। তাঁর দৌহিত্রী পান্না দেবীর ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি চার কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন; তাঁর কোন পুত্র সন্তান ছিল না। সম্পত্তির লোভে জাতি-গোষ্ঠীরা মাত্র আঠাশ বছর বয়সে তাঁকে বিষ প্রদানে হত্যা করেন। তাঁর শোকাতুর মাতা পুত্রের স্মৃতি রক্ষার্থে স্কুলটিতে অনুদান প্রদান করেন। ধন্যবাদ জানাচ্ছি সেই শোকাতুর মাতাকে। সে-ই সময়ে নারী শিক্ষার প্রতি তাঁর এই অনুরাগ অবশ্যই প্রশংসনীয়।’ (বিস্মৃতি নয়, স্মৃতি টুকু- দিলারা হাফিজ : চন্দ্রালোকের বালিকারা : পৃষ্ঠা – ০৯)
আমার অন্যতম প্রিয় লেখিকা ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্থ সুনামগঞ্জবাসীর গর্ব। তাঁর ভাষ্য- ‘সহজভাবেই স্বীকার করছি, চিরকালের অমনোযোগী ছাত্রী ছিলাম। তবে গুরুমার সেলাই ক্লাসটি ভীষণ প্রিয় ছিল সবার কাছে। রিফু, তালি, ফেদার স্টিচ, কাশ্মিরী স্টিচ, ভরাট সেলাই, লেডিডেজি স্টিচÑ সবই শিখেছি গুরুমার ক্লাসে। সেলাই এর পরীক্ষা হত, নিখুঁত সেলাইয়ের জন্য ভাল মার্কসও পেয়েছি।’ আরেকজন নিবেদিত প্রাণ শিক্ষিকা করিমুন্নেছা খাতুন সেলাইয়ের নানা কাজ জানতেন ও ছাত্রীদের শিখাতেন। জানতে ইচ্ছে হয় সেসময় জীবনযাত্রা কেমন ছিল? ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্থ লিখেছেন-
‘আমাদের বাসায় পাড়ার মাসীমা’রা রোজ বিকেলে আসতেন। নীলিমা চৌধুরী আমার মায়ের আসর জমাবার নিপুণ কৌশল আয়ত্বে ছিল। চা আর পান সুগন্ধি জর্দার গন্ধে ওড়া বারান্দা ভুরভুর করত। গল্পের ঝুলি খুলে বসতেন সবাই কাঁচা বাজার, মাছের দাম থেকে শুরু করে মেয়েদের স্কুলের বেতন নিয়েও কথা হত। ইসস…… গার্লস স্কুলের বেতন কত! বাবারে- সাড়ে চার টাকা! ইংরেজি মাসের ১৫ তারিখে স্কুলের বেতন দেয়ার নিয়ম ছিল। ক’দিন আগে থেকে মাকে মনে করিয়ে দিতাম ও মা, পনের তারিখে কিন্তু বেতন দিতে হবে। মনে এক অপরাধবোধ জাগত। বাবার ওপর সংসারের পুরো দায়িত্ব বই, কাগজ, কলমের খরচ ছাড়াও সংসারের পুরো দায়িত্ব খরচ তার ওপর আবার দাদাবাবু, বুলু, সীতু কাকু ও আমার বেতন দেয়া বাবার প্রতি মতত্ববোধ জাগত সারা বুক জুড়ে। আজকের দিনে সাড়ে চার টাকা কেন সাড়ে চারশ কিংবা সাড়ে চার হাজার নিয়েও ভাবা হয় না। তখন ছিল স্বর্ণালী এক সময়, অল্প টাকা পয়সায় সাধারণভাবে জীবন চলে যেত। অভিভাবকদের মাঝে প্লেন লিভিং এন্ড হাই থিংকিং ব্যাপারটি ছিল সহজ-সরল জীবনযাপন কিন্তু ভাবনা যেন উচ্চমার্গের হয়। Old is gold চলে যাওয়া অতীত শুধু সোনায় মোড়া নয়, তবু তখন শান্তি ছিল, স্বস্তি ছিল।’ (রূপকথার শহর সুনামগঞ্জ ও আমার প্রিয় বিভাময় বিদ্যাপীঠ, ঝর্ণা দাস পুরকায়স্থ : পৃষ্ঠা : ০৩)
স্কুলের বিনোদন সম্পর্কে সৈয়দা সুরাইয়া মাসউদ (শিরি) জানাচ্ছেন : ‘মেয়েদের দোকানপাটে যাওয়ার চল ছিল না। পারিবারিক বিধি-নিষেধ মেনে কচিৎ-কদাচিৎ সিনেমা হলে যাওয়া হতো। সেজন্যই স্কুলের নিয়মিত অনুষ্ঠানের বাইরে আরো যে দু’একটা অনুষ্ঠান হতো, সেগুলোতে আমরা হুমড়ি খেয়ে পড়তাম। এরই একটা হচ্ছে ‘ম্যাজিক শো’। কোন একজন মাঝারি মাপের ম্যাজিশিয়ান হয়তো আসলেন। উনি যা দেখাচ্ছেন তাতেই আমরা মুগ্ধ, বিস্মিত। খালি গায়ে প্রচুর তেল মেখে একগাদা ভাঙ্গা কাঁচের টুকরোর উপর অবলীলায় শুয়ে থাকলেন, বুকের উপর চাপানো থাকলো ভারী কিছু বস্তু তার কিছুই হচ্ছে না, একটা কাঁচও বিঁধছে না, এদিকে আমাদের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসার জোগাড়। আর একটা প্রদর্শনী হতো যেটাকে সে সময় বলা হতো Lentern Picture; আমরা সোজা বলতাম ‘লেন্টন লেকচার’। এটাতে প্রজেক্টরের মাধ্যমে শিক্ষামূলক বিভিন্ন তথ্য চিত্রের স্লাইড শো দেখানো হতো।’ (স্মৃতিতে সতীশ চন্দ্র বলিকা বিদ্যালয়, সৈয়দ সুরাইয়া মাসউদ শিরি : পৃষ্ঠা- ০৭)
এছাড়াও অনেকের স্মৃতিচারণ, নববর্ষ, রবীন্দ্র জয়ন্তী, নজরুল জয়ন্তী এসব অনুষ্ঠান পালনের বিবরণ আমাদের চমৎকৃত করে। ‘চন্দ্রালোকের বালিকারা’ স্মরণিকায় স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের তালিকা থাকলে পাঠক সমাজ উপকৃত হতেন। বর্তমান ডিজিটাল যুগে এই প্রতিষ্ঠানকে কিভাবে দেখতে চান এ সম্পর্কে আলোচনা থাকলে বর্তমান শিক্ষার্থীরা উপকৃত হতেন।

তিন : উৎসবের মূল্যায়ন
একটি বড় উৎসবের পর এটিকে মূল্যায়ন করতে হয়। এর ত্রুটি বিচ্যুতি উপলব্ধি করে করণীয় নির্ধারণ করতে হয় এর নীতি নির্ধারকদের। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৭৫ বছর পূর্তি উৎসব শুধুমাত্র নেচে গেয়ে মহামিলনের আনন্দাশ্রু বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে যাবার নয়। বর্তমান শিক্ষার্থী যারা আগামী প্রজন্ম তারা কি আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে? উন্নত অবকাঠামো, ভাল মানের শিক্ষক, আধুনিক ল্যাবরেটরি, কম্পিউটার, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপনের প্রশ্ন সামনে এসে যায়। বর্তমান সরকার তথ্য প্রযুক্তির বিপ্লবকে কাজে লাগিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করে চলেছেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। নারী শিক্ষার প্রসারে তিনি আন্তরিক। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের হাওরাঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি নানা কারণে পিছিয়ে আছে। অবকাঠামো সংকটের কারণে অচিরেই এ অঞ্চলের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫ তলা / ১০ তলা ভবন নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে। এটিকে স্কুল এন্ড কলেজে রূপান্তরিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরি করে মানসম্মত শিক্ষা প্রদান অবশ্য কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। সতীশ চন্দ্র বিদ্যালয়ের মতো উন্নত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উন্নতমানের অডিটোরিয়াম প্রয়োজন।
আহমদ ছফার মতে ‘যে জাতি উন্নত বিজ্ঞান, দর্শন এবং সংস্কৃতির ¯স্রষ্টা হতে পারে না, অথবা সেগুলোকে উপযুক্ত মূল্য দিয়ে গ্রহণ করতে পারে না, তাকে দিয়ে উন্নত রাষ্ট্র সৃষ্টিও সম্ভব নয়। যে নিজের বিষয় নিজে চিন্তা করতে জানে না, নিজের ভাল-মন্দ নিরূপণ করতে অক্ষম, অপরের পরামর্শ এবং শোনা কথায় যার সমস্ত কাজ কারবার চলে, তাকে খোলা থেকে আগুনে, কিংবা আগুন থেকে খোলায় এই পর্যায়ক্রমে লাফ দিতেই হয়। সুবিধার কথা হল নিজের পঙ্গুত্বের জন্য সব সময়ই দায়ী করবার মতো কাউকে না কাউকে পেয়ে যায়। কিন্তু নিজের আসল দুর্বলতার উৎসটির দিকে একবারও দৃষ্টি পাত করে না। (আহমদ ছফা : বাঙ্গালি মুসলমানের মন)
আমাদের উন্নত বিজ্ঞান, দর্শন এবং সংস্কৃতির ¯স্রষ্টা হতে হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে উন্নত করতে হবে। মর্যাদাবান জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে উঁচুমানের শিক্ষক প্রয়োজন।
যারা সমাজের দায়িত্বশীল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত অথবা প্রশাসনিক ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তিবর্গ সঠিক দায়িত্ব পালন না করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে দায় এড়াতে পারবেন না।
লক্ষ্মীপুর জেলার গ্রামের একটি স্কুল নন্দীগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে হীরক জয়ন্তী উদ্যাপনের পর ২২ লক্ষ টাকা উদ্বৃত্ত থেকে যায়। এ টাকা দিয়ে উদ্যাপন কমিটি স্কুলের মসজিদসহ উন্নয়ন কর্মকান্ডে ব্যয় করেছেন। এসব উদাহরণ কাজে লাগিয়ে আমাদের জীর্ণশীর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলিকে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি মানসম্মত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে ওঠার দিকে নজর দিতে হবে।
সুনামগঞ্জ জেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের ৭৫ বৎসর পূর্ণ হতে বেশি বাকি নেই। এই জনপদের সাহিত্য, সংস্কৃতি, রাজনীতির ক্ষেত্রে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনন্য অবদান আছে। প্রজ্ঞাবানেরা এ বিষয়ে চিন্তা করবেন কি?
[লেখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক; অধ্যক্ষ, মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ, মৌলভীবাজার।]

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com