বাংলাদেশের প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ প্রত্যক্ষভাবে তামাক সেবন করেন। এদের বেশির ভাগই পুরুষ। আবার অনেকেই ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবন করেন। বাংলাদেশে তামাক সেবনের এ চিত্র নিঃসন্দেহে ভয়াবহ। ধোঁয়াবিহীন এবং ধোঁয়াযুক্ত তামাকসেবীদের অনেকেই জানেন না, তাদের এ তামাক সেবন শরীরের জন্য কতটা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশেষ করে, গ্রামের সাধারণ ও নিরক্ষর মানুষের মধ্যেই এর আধিক্য চোখে পড়ে। অথচ তামাক নিয়ন্ত্রণে আমাদের দেশে আইন রয়েছে। তবে এ আইন মূলত কোনো কাজে আসছে না এর প্রায়োগিক সফলতা না থাকায়।
২০০৫ সালের প্রণীত এ-সংক্রান্ত আইনটি সংশোধন করে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ নামে সংসদে পাস হয়। এরপর খসড়া বিধিমালা মতামতের জন্য একই বছরের ৩০ অক্টোবর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। খসড়ায় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলকে সাংগঠনিক রূপ দেয়ার মাধ্যমে শক্তিশালী করা এবং একই সঙ্গে তামাকজাত পণ্যের মোড়কে সচিত্র সতর্কবাণী মুদ্রণ, সিনেমা-নাটকে ধূমপানের দৃশ্য দেখানোর নিয়ম, পাবলিক প্লেসে ধূমপান থেকে বিরত থাকাসহ তামাকজাত দ্রব্য ধ্বংস ও বাজেয়াপ্তকরণের বিষয়ে ¯পষ্ট করা হয়। কিন্তু বাস্তবতা যে, আইনটি পাসের পর কিছু দিন পাবলিক প্লেসে ধূমপানকারীদের জরিমানা করা এবং তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে সতর্কবার্তা মুদ্রণ ছাড়া তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপ মতে, বাংলাদেশে তামাকজাত দ্রব্যের প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে ৩০ বছরের বয়স্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রতি বছর ৫৭ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে এবং প্রায় ৩ লাখ ৮২ হাজার মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করে। আর অন্যের ধূমপানের ফলে কর্মক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এক কোটি ১৫ লাখ মানুষ। ক্যা¤েপইন ফর ক্লিন এয়ার নামের জরিপ প্রতিষ্ঠানের জরিপ মতে, দেশে ৪৮ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে ধূমপায়ী। গ্লোবাল এডাল্ট সার্ভের মতে, বাংলাদেশে বর্তমান ধূমপায়ীর সংখ্যা ২ কোটি ১৯ লাখ। যার মধ্যে ২ কোটি ১২ লাখ পুরুষ, ৭ লাখ মহিলা। আর ২ কোটি ৫৯ লাখ লোক ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করে।
এটা প্রমাণ করেছে যে যুবকদের ধূমপানের গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো পরিবারের অন্য সদস্যদের যেমন বাবা-ভাইয়ের অনুসরণ। এ ছাড়া, দুশ্চিন্তা, হতাশা, বেকারত্ব মানুষকে ধূমপান ও মাদকতার দিকে ঠেলে দেয়। অনেকে ধূমপান করে ধূমপায়ীদের সংশ্রবে এসে কিংবা পরিবেশগত কারণে। কেউ আবার ধূমপান করে শখের বশে, খানিক সুখের উদ্দেশে। কেউবা ধূমপান করেন কর্মচঞ্চলতা ফিরিয়ে আনতে, অবসরের বিনোদন হিসেবে।
সার্বিক বিবেচনায় আমরা মনে করিÑ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ধূমপায়ী বাড়ানোর প্রচেষ্টায় ব্যাপক প্রচার চালিয়ে থাকে ফলে তারা যাতে প্রচার না চালাতে পারে সে ব্যাপারে সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে সরকারের সুবিধাপ্রাপ্তির সুযোগও সর্বতোভাবে বন্ধ করা দরকার। তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধের উদ্যোগ নেয়া সম্ভব হলে এবং আইন বাস্তবায়ন করা গেলে ধূমপায়ীর সংখ্যা হ্রাস পেতে পারে। সার্বিক ক্ষতির কথা বিবেচনায় নিয়ে সরকার তামাকজাত দ্রব্য ও ধূমপান নিয়ন্ত্রণে আইনের যথাযথ বাস্তবায়নে আন্তরিক হবেন এটাই আমাদের শুধু প্রত্যাশাই নয়, দাবিও বটে।