আলোকিত জনগোষ্ঠী গড়তে বাংলাদেশে শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত এক দশকে শিক্ষার সর্বস্তরেই চোখে পড়ার মতো অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। শিক্ষার এই ব্যাপক অগ্রগতি ও সক্ষমতা অর্জন অর্থনীতির ভিত্তিকেও করেছে মজবুত ও টেকসই, দেশকে বিশ্বের বুকে দিয়েছে পৃথক পরিচিতি। একসময় বিপুলসংখ্যক কোমলমতি শিশু স্কুলে যাওয়ারই সুযোগ পেতো না। অনেকে আবার স্কুলে গেলেও প্রাথমিক পর্যায় থেকে ঝরে পড়তো। পাবলিক পরীক্ষায় ছিল নকলের ছড়াছড়ি। ফল প্রকাশে যেমন দেরি হতো, আবার প্রকাশের পর দেখা যেতো উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পরীক্ষার্থীই অকৃতকার্য। স্কুলে যথাসময়ে পাঠ্যবই পেত না শিশু-কিশোররা। শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়ে অসংখ্য তরুণীকে বাল্যবিয়ের শিকার হয়ে নির্মম জীবন বেছে নিতে হতো। বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টায় গত কয়েক বছরে আমূল বদলে গেছে শিক্ষাক্ষেত্র, পাল্টে গেছে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। সুনামগঞ্জেও লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া।
গতকাল দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদ থেকে জানা যায় Ñ হাওরবেষ্টিত সুনামগঞ্জ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, যোগাযোগসহ ইত্যাদি ক্ষেত্রে নানা সমস্যা রয়েছে। এসব থেকে উত্তরণ এবং হাওরবাসীর জীবনমান উন্নয়নে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন, কৃষি, ইনোভেশন, তথ্য-প্রযুক্তিসহ নানা ক্ষেত্রে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন। বিশেষ করে এ জেলার পিছিয়ে পড়া শিক্ষাখাতের অগ্রগতিতে নেয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। যার সুফল পাচ্ছেন সুনামগঞ্জবাসী। শিক্ষাক্ষেত্রে এসেছে অভূতপূর্ব সাফল্য।
সুনামগঞ্জ জেলা শিক্ষায় পিছিয়ে থাকার কারণ বন্যা, আগাম বন্যা, অতিবৃষ্টি, বজ্রপাতসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দারিদ্র্যতা, দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা। বর্ষাকালে হাওর এলাকায় অবস্থিত বেশিরভাগ গ্রামগুলো পানিতে ডুবে যায় বা দ্বীপের মত ভাসতে থাকা ও শিক্ষক স্বল্পতার কারণে ঝরেপড়ার হার বেশি। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুমোদিত ১৩৯৯টি প্রধান শিক্ষকের পদের বিপরীতে শূন্য রয়েছে ৫৩৯টি, ৬০৬৮টি সহকারি শিক্ষকের পদের বিপরীতে শূন্য রয়েছে ৮৫৩ টি। এ সমস্ত প্রতিকূলতার মাঝে শিক্ষার হার বৃদ্ধি, শিক্ষার মান উন্নয়ন, ঝরেপড়া রোধসহ সাক্ষরতার হার বৃদ্ধিকল্পে গত দু’বছরে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ অটিস্টিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় স্থাপন ও প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা সুবিধা নিশ্চিত করতে শহরের পুরাতন ক্রীড়া সংস্থা ভবনে একটি অস্থায়ী ক্যা¤পাসে স্থাপিত হয়েছে “সুনামগঞ্জ অটিস্টিক ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়”। ১০ জন শিক্ষক এবং ৩৬ জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে বিদ্যালয়টি শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছে। অনস্বীকার্য যে, বিগত যেকোনো সময়ের তুলনায় শিক্ষাবিস্তারে অসামান্য সাফল্য দেখিয়েছে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন। আমরা আশা করি, শিক্ষার মানোন্নয়নে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।