1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ০৩:৩২ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭৫ বছর পূর্তি উৎসব : আজ অমলিন আনন্দের দিন

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৬

মোসাইদ রাহাত ::
আজ ২৩ ডিসেম্বর ‘চন্দ্রালোকের বালিকা’দের অমলিন আনন্দের। বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদ্যাপিত হবে সরকারি সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭৫ বছর পূর্তি উৎসবের প্রথম দিন। দু’দিনব্যাপী উৎসবে আনন্দে অবগাহন করবেন হাজারো প্রাক্তন ছাত্রী। সবাই একাত্ম হয়ে গাইবেনÑ পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়। ও সেই চোখে দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়…
‘প্রাণের উৎসবে’ মিলিত হতে দীর্ঘদিন ধরেই চলছিল প্রস্তুতি। আয়োজকদের ছিল কর্মব্যস্ততা। সবাই সম্মিলিতভাবে উৎসবকে সফল করতে পরিশ্রম করেছেন দিন-রাত। অবশেষে সেই মহেন্দ্রক্ষণ এলো…। ভালোবাসা – ভালোলাগার বিদ্যালয়ে আজ আনন্দে মাতবেন, আনন্দে ভাসবেন প্রাক্তন ছাত্রীরা। সেই আনন্দ ছড়িয়ে পড়বে সবখানে।
আজ ২৩ ডিসেম্বরের উৎসবের প্রথম দিনের অনুষ্ঠান সূচিতে রয়েছেÑ সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৮টায় সকল ছাত্রীদের অনুষ্ঠানস্থলে জমায়েত। স্কুল ঘণ্টা বাজানো। লাইন করে দাঁড়ানো, পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত, গীতাপাঠ, জাতীয় সংগীতের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা এবং হীরকজয়ন্তী পতাকা উত্তোলন, পায়রা মুক্তকরণ, ফেস্টুন উড়ানো, শোক প্রস্তাব জ্ঞাপন, শপথ পাঠ, পি.টি., রণ সংগীত পরিবেশন। সাড়ে ৯টায় মুরু হবে র‌্যালি। উৎসবের থিম সংগীত গাইতে গাইতে স্কুল প্রাঙ্গণ থেকে শুরু করে আদর্শ শিশু শিক্ষা নিকেতনের রাস্তা দিয়ে পুরাতন কোর্ট ভবন পার হয়ে স্কুল মাঠে ফেরত আসা। সকাল ১১টায় অতিথিদের আসনগ্রহণ, উদ্বোধন, কেক কাটা ও বক্তব্য প্রদান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিচারপতি মিফতাহ্ উদ্দিন চৌধুরী, বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক, এমপি মুহিবুর রহমান মানিক, এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, এমপি অ্যাড. পীর ফজলুররহমান মিসবাহ, জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মো. হারুন অর রশীদ, সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আয়ূব বখ্ত জগলুল।
বেলা সাড়ে ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত অনুষ্ঠান সূচিতে রয়েছে নামাজ ও দুপুরের খাবার পরিবেশন। এরপরই শুরু হবে দ্বিতীয় অধিবেশন। এতে থাকছে প্রাক্তন ছাত্রীদের পারফরমেন্স। সন্ধ্যা ৬টায় সিলেট থেকে আগত ছাত্রীদের পারফরমেন্স শেষে সুনামগঞ্জে অবস্থানরত ছাত্রীদের পারফরমেন্স অনুষ্ঠিত হবে। রাত ৮টায় গান গাইবেন আশিক ও স্থানীয় শিল্পীরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার সরকারি সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায় প্রাক্তন ছাত্রীদের মিলন মেলা। ৭৫ বছর পূর্তি উৎসবের আয়োজনে সবাই যেন একাত্ম হতে যান। দেশ এবং দেশের বাইরে থেকেও এসেছেন প্রাক্তন ছাত্রীরা। সবার চোখে-মুখেই অনাবিল আনন্দরেখা।
কথা হয় বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রী পূর্ণা পুরকায়স্থের সঙ্গে। তিনি বলেন, এই বিদ্যালয়ের সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক। এখানে এসে পুরনো সেই দিনগুলোর কথা আমার বার বার মনে পড়ছে। দীর্ঘ বছর পর অনেকের সাথে দেখা হয়েছে, কথা হচ্ছে। এই আনন্দ অনুভূতি বলে বুঝানো সম্ভব নয়।
সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে এসেছেন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রী সীমা আচার্য্য। তিনি বলেন, দীর্ঘ ৭ – ৮ বছর ধরে প্রবাসে আছি। শুধুমাত্র এই উৎসবে অংশগ্রহণের জন্যই বাংলাদেশে এসেছি। আজ (বৃহস্পতিবার) অনেকের সাথে দেখা হয়েছে। প্রিয় মানুষগুলোর সাথে দেখা হওয়া, কথা বলার আনন্দ অমলিন।
কথা হয় আরেক প্রাক্তন ছাত্রী রিংকি ঘোষের সাথে। তিনি সিলেটে লেখাপড়া করছেন। বিদ্যালয়ের হীরক জয়ন্তীতে অংশগ্রহণের জন্য ব্যস্ততা ফেলে ছুটে এসেছেন। তিনি জানান, বিদ্যালয়ের ৭৫ বছর পূর্তি উৎসব মানেই আনন্দ। আমরা এ ক’দিন আনন্দেই ডুবে থাকবো। এই উৎসব আয়োজনের জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
শিখা চক্রবর্তী ১৯৮১ ব্যাচের ছাত্রী। তিনি বলেন, আমি এই স্কুলের একজন ছাত্রী ও শিক্ষক ছিলাম। এটাই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। স্কুলে যখন আসলাম তখন দেখা হলো আমার ছাত্রীর সাথে। খুব ভালো লাগল এতোদিন পর স্কুলে এসে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের পত্র সংগ্রহ করতে এসেছিলেন অঞ্জলি চক্রবর্তী। তাঁর সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি ১৯৭৪ ব্যাচের ছাত্রী। তিনি বলেন, আমি প্রায় ৪০ বছর পর স্কুলে এসেছি। স্কুলে ঢুকামাত্র আমার চোখে পানি চলে আসল। এই জায়গায় আমি মানুষ হওয়ার শিক্ষা পেয়েছি। এই বিদ্যালয়ের মাঠে খেলাধুলা করেছি। কৈশোরের সেই দুরন্ত সময়গুলো আমার স্মৃতিপটে ভেসে উঠল। এখানে এসে খুব ভালো লাগছে।
শ্যামলী চক্রবর্তী ১৯৯৭ ব্যাচের ছাত্রী। তিনি বলেন, ভালোলাগাটা চরম হয়ে যায় যখন প্রিয় শিক্ষকের সাথে এতো বছর পর দেখা হয়। এই অনুষ্ঠানটি আমাদের মিলনমেলা। আজ স্কুলে আসার পর আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধুর সাথে দেখা হয়েছে। এই অনুভূতি মুগ্ধকর।
মোছা. জুনুয়ারা বেগম ১৯৯৫ ব্যাচের ছাত্রী। তিনি বলেন, আমি স্কুল ছাড়ার পর আজ প্রথম আসলাম স্কুলে। এতোদিন পর স্কুলে এসে আমার খুব ভালো লাগছে। একমাত্র এই অনুষ্ঠানের জন্যই আমরা সকল বান্ধবীরা একত্রিত হতে পেরেছি।
কথা হয় ১৯৭৩ ব্যাচের ছাত্রী সীমা চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি জানালেন, এই পুনর্মিলনি অনুষ্ঠানে মিলিত হয়ে আমার খুব ভালো লাগছে। আমার অনেক সহপাঠীরা আসবে। আমি তাদের দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।
নমিতা তালুকদার ১৯৯৪ ব্যাচের ছাত্রী। তিনি বলেন, স্কুলে আমার পুরোনো দিনগুলো মনে পড়ে গেল। আমি আমার বান্ধবীদের সাথে দেখা করব – এইটা ভাবতেই অনেক ভালো লাগছে। আমার মা এই স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন এ জন্য আমি গর্বিত।
অঞ্জলি দাশ ১৯৬৮ ব্যাচের ছাত্রী। তিনি বলেন, স্কুলে এসে অনেক ভালো লাগল। স্কুলের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আমি এই স্কুলে ৩০ বছর ধরে শিক্ষকতা করেছি। অনেকদিন পর এসে প্রাক্তন ছাত্রীদের দেখে আমার খুব ভালো লাগল।
এদিকে ৭৫ বছর পূর্তি উৎসবকে ঘিরে নেয়া হয়েছে জোরদার নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সম্পন্ন হয়েছে সার্বিক প্রস্তুতি।
৭৫ বছর পূর্তি উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক অ্যাড. শামছুন নাহার বেগম শাহানা রব্বানী এমপি জানান, উৎসব আয়োজন সফল করতে নিরাপত্তাসহ সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এই উৎসব হবে একটি স্মরণীয় উৎসব। ‘চন্দ্রালোকের বালিকারা’ এক প্রাণ হয়ে মিলিত হবে অমলিন আনন্দের উৎসবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com