বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে যতই অভিযোগ বা সমালোচনা হোক না কেন, বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে, দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি হচ্ছে এ বিষয়ে কারো কোনো দ্বিমত থাকার কথা নয়। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও জনগণের জীবনযাত্রার মান, গড় আয়ু বেড়েছে। কৃষি, শিক্ষা, শিল্প, সাহিত্য, তথ্যপ্রযুক্তি প্রভৃতি ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে। দেশের এ উন্নয়ন অগ্রগতিকে আরও দ্রুত ত্বরান্বিত করতে দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। কারণ দুর্নীতিই হচ্ছে সব উন্নয়নের মূল প্রতিবন্ধক।
দুর্ভাগ্য আমাদের, যে কোনো প্রতিষ্ঠানে অনেক শিক্ষিত ব্যক্তিরাই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। আমরা নিজেদের শিক্ষিত বলে দাবি করি, কিন্তু আমরা সুশিক্ষিত কিনা, মানবিক মূল্যবোধের অধিকারী কিনা এ বিষয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। দুর্নীতি যে এখানে সর্বগ্রাসী রূপ নিয়েছে, এ বাস্তবতা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। দুর্নীতি যে শুধু ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির অন্তরায় তাই নয়, দেশের সার্বিক উন্নয়নের পথেও এটি বাধা সৃষ্টি করছে। দুর্নীতির কারণেই দেশের উন্নয়ন প্রকল্প যথাসময়ে স¤পন্ন হয় না। স¤পন্ন হলেও কাজ হয় নি¤œমানের।
দুর্নীতির এই সর্বগ্রাসী থাবা থেকে কীভাবে মুক্ত হওয়া যায়? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে আমাদের বুঝতে হবে যে কেন দুর্নীতি হয় বা দুর্নীতি বিস্তারের প্রক্রিয়া কীভাবে বৃদ্ধি পায়। সার্বিকভাবে দেখলে দুর্নীতির ব্যাপকতার সাথে নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের একটি স¤পর্ক আছে। একথার সত্যতা স্বীকার করে নিয়ে বলতে হয় যে, কেবল মূল্যবোধের অবক্ষয় বাংলাদেশের দুর্নীতির ব্যাপক প্রসারের প্রক্রিয়াকে ব্যাখ্যা করতে পারে না। কেননা দুর্নীতি পৃথিবীর সবদেশেই কম বেশি হয়। কিন্তু বাংলাদেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা জনগণের মনে যে পরিমাণ হতাশার সৃষ্টি করে তা তুলনাহীন। দুর্নীতি কেবল ওপর মহলে হয় তাই নয় বরং দৈনন্দিন জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে জনগণকে দুর্নীতির প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে বাধ্য করা হয়। এই অংশগ্রহণের কারণ সব ক্ষেত্রেই শুধু লোভ নয়, বরং অনেক ক্ষেত্রেই হচ্ছে ন্যূনতম জীবনযাপনের প্রচেষ্টা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতি কমিয়ে আনার প্রয়াস থেকেই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রায় দ্বিগুণ করেছেন। দুর্নীতিরোধে প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছার কমতি নেই। আমাদেরও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে দুর্নীতি বন্ধে সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।