বিদ্যুৎ এখন মানুষের জীবনেরই একটা অবিচ্ছেদ্য অংশই বলা যায়। শহরের সুযোগ সুবিধা অনেক গ্রামে পৌঁছে যাচ্ছে বলতে গেলে বিদ্যুতের কল্যাণেই। গ্রামের মানুষও এখন আয়রন, ফ্রিজ, টিভি, কম্পিউটার ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিদ্যুতের ঝলমলে আলোয় কেবল অন্ধকার দূরীভূত হয় না, জেগে ওঠে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলও। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তথ্যপ্রযুক্তির সুফল প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দিতে হলে বিদ্যুৎ অপরিহার্য। বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্য আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশের মর্যাদায় আসীন করতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির গুরুত্ব অপরিসীম।
বিদ্যুৎ সংকট মোকাবেলা ও বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধিতে আওয়ামী লীগ সরকারের দৃশ্যমান সাফল্য রয়েছে। বর্তমান সরকার ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করার রোডম্যাপ রয়েছে। ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন ১৫ হাজার মেগাওয়াট অতিক্রম করেছে। ১৬ কোটি মানুষের দেশে ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট না হলেও বাস্তবতার নিরিখে এ অগ্রগতি আশাজাগানিয়া। বিদ্যুৎ উৎপাদনে লক্ষণীয় উন্নতি হলেও বিদ্যুতের অপচয় রোধে, সঞ্চালন ও বিতরণ অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে সে মাত্রায় অগ্রগতি হয়নি। নগরাঞ্চলে বিদ্যুতের ভোগান্তি কমেছে এটা সত্য। গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুতের আওতার উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণ ঘটেনি। এখনো দেশের অনেক গ্রামের মানুষ বিদ্যুতের ন্যূনতম সেবা প্রাপ্তি থেকে এখনো বঞ্চিত। বঞ্চিত গ্রামীণ এলাকাকে বিদ্যুতের আওতায় আনতে হলে আরো বিদ্যুতের জোগান প্রয়োজন, প্রয়োজন বিদ্যুৎ বিতরণ লাইনের সম্প্রসারণও।
এদিকে, উৎপাদন বৃদ্ধির সমানতালে বিতরণ ও সঞ্চালন অবকাঠামো এবং ব্যবস্থাপনার উন্নতি না হওয়ার কারণে উৎপাদন বৃদ্ধির সুফল কাক্সিক্ষত মাত্রায় পাওয়া যাচ্ছে না। জরাজীর্ণ, দুর্বল সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনের কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা, বিদ্যুৎ বিভ্রাট। স্থানীয় বিতরণ ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে অনেক জায়গায় গ্রাহককে দুর্ভোগ পোহাতে হয় যেমন, তেমনি এটাও অস্বীকার করা যাবে না যে, ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতার কারণে ঠেকানো যাচ্ছে না চুরি বা অপচয়ও।
বিদ্যুৎ সপ্তাহ পালনের মাধ্যমে সরকার গ্রাহক পর্যায়ে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ ব্যবহারে জনসচেতনতা তৈরির যে উদ্যোগ নিয়েছে তা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। দেশে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সঠিকভাবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে সব গ্রাহক সাশ্রয়ী হলে বিদ্যুতের দুর্ভোগ অনেকটা লাঘব হতো। বিদ্যুতের অপচয় রোধ ও সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি ব্যবহারে জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু গ্রাহক পর্যায়ে সাশ্রয় প্রচেষ্টাই নয়, বিতরণ পর্যায়ে অপচয় রোধে করতে পারলেই মান বাড়বে, অর্থনৈতিক উন্নয়নও হবে ত্বরান্বিত।