মতিউর রহমান ::
মুক্তিযুদ্ধের আগে পান-সিগারেট মুখে দিয়েছি বলে মনে হয় না। ভারতের শরণার্থী শিবিরে নাসির বিড়ির মাধ্যমে ধূমপানে হাতেখড়ি। আর মেঘালয়ের সীমান্তবর্তী বাজার বালাটে খাসিয়া সুন্দরী যুবতীর দোকানে বাহারি মসলা সহযোগে পান খাওয়ার শুরু।
পানওয়ালির পানের চেয়ে টকটকে পান খাওয়া ঠোঁটের আকর্ষণই বোধহয় বেশি ছিল, আর ফাও হিসাবে তার সাথে খোশগল্পই ছিল পান আসক্তির মূল কারণ। তারপর আস্তে আস্তে প্রমোশন, নাসির বিড়ি হতে সিগারেট, পানের সাথে জর্দাসহ অন্যান্য মসলাপাতির সংযোজন।
বর্তমানে সিগারেট আর পানের নেশায় আসক্ত একজন পাকা নেশাখোর হয়েছি বলা চলে। ডাক্তার, কবিরাজ মহাশয়দের শত নিষেধ সত্ত্বেও পান-সিগারেটের কাছে পরাজিত হয়ে বর্তমানেও চালিয়ে যাচ্ছি। পান বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় প্রচলিত তবে সিলেট অঞ্চলে বেশি। কম-বেশি পান সবাই ভালোবাসেন।
আমাদের একজন প্রাক্তন সাংসদের বাহারি মসলাপাতি সহযোগে পান খাওয়ার সুনাম আওয়ামী পরিবারের কেন্দ্রীয় নেতা হতে শুরু করে সাধারণ কর্মীদের মধ্যে সুনাম রয়েছে। আওয়ামী পরিবারের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে তার চেয়ে তার পানের বাটাটিই প্রিয়।
আমাদের গ্রাম বাংলায় অনেক মহিলা রাতে ঘুমানোর আগে গাল ভরে পান না খেলে যেন ঘুমই আসে না। জাবর কাটার মতো একটু ঘুম ভাঙ্গলেই পান চিবানো শুরু করেন। তরকারিতে দেওয়ার জন্য লবণ না থাকলে পাশের বাড়িতে লজ্জায় ধার করতে রাজি না হলেও, পান-সুপারির বেলায় সেই বালাই নেই।
সহজ-সরল ধর্মপ্রাণ, স্বামীভক্ত মহিলারাও অনেক সময় স্বামীর দিকে তেড়ে আসতেও দ্বিধা করেন না। পানের অভাবে ঘরের চাউল চুরি, স্বামীর পকেট কাটা, সন্তানের জমানো পয়সা চুরি করেও পানের চাহিদা মেটান। নেশাখোর যেমন নেশার পয়সা জোগাড় করতে মাথা ঠিক থাকে না, তেমনি অনেক পানখোরও পানের নেশা মেটানোর জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। সাদা দাঁতগুলো পানের বদৌলতে কালো হয়েছে। সিগারেটের কল্যাণে হার্টের অবস্থা খারাপ, শ্বাসকষ্ট নিত্যসঙ্গী।
নেশার খাই মেটাতে গিয়ে চিকিৎসার নামে হাজার হাজার টাকা খরচ সত্ত্বেও ফলাফল শূন্য। দয়া করে যারা এগুলো এখনও ধরেননি তারা ভবিষ্যতে কোনো দিন ছুঁয়েও দেখবেন না। টাকাতো যাবেই সেই সাথে ডাক্তারের পকেটভারি হবে আর নিজেও বিভিন্ন রোগে শোকে ভোগে প্রাণটাও খোয়াতে পারেন।
(সহৃদয় পাঠক আমার জ্ঞান অল্প আর লিখছি আমার আপনার দেখা জীবনের বিভিন্ন গল্প। নিবেদিত সুদূর নতুন প্রজন্ম)