1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
সোমবার, ০৫ মে ২০২৫, ০২:২৭ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

গল্প সত্যি, মাত্র কয়েক বছর আগের কথা

  • আপডেট সময় রবিবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৬

মতিউর রহমান
মাছে ভরপুর সুনামগঞ্জের মানুষ স্বপ্নেও চিন্তা করেনি কিলো আর গ্রামের হিসাবে মাছ কিনে খাবে। ময়মনসিংহ থেকে আমদানি করা তেলাপিয়া আর পাঙ্গাসের বাচ্চা খেয়ে পেট খারাপ করে আমিষের ঘাটতি পূরণ করবে। টাঙ্গুয়ার হাওরসহ হাজারের উপরে বিল-ঝিল, পঁচিশটির মতো প্রবহমান নদী এ জেলাকে অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী করেছে। এতো হাওর-বাঁওর পৃথিবীর অন্য কোথাও আছে বলে আমার জানা নেই।
এ সমস্ত বিল-ঝিলে উৎপাদিত মাছ জেলার মানুষের চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য জেলার চাহিদা মেটাত। আমাদের ছোটবেলায় দেখেছি বিভিন্ন জাতের মাছে বাজার ভরে উঠতো। রুই-কাতলা, চিতল-বাউশ, বোয়াল হতে শুরু করে ছোট-বড় সব জাতের মাছের আমদানি ছিল বাজারে। দাম ছিল কম বড় মাছ তিন থেকে চার টাকার মধ্যে কেনা যেতো। ছোট পরিবারের মাছ কেনার বাজেট ছিল আট আনা হতে বারো আনা। মাঝারি ও বড় পরিবারের ছিল বারো আনা হতে দেড়-দুই টাকা। আমাদের বাপ-চাচারা পছন্দ মাফিক মাছ কিনে তখন আনন্দ চিত্তে বাজার থেকে ফিরতেন।
বোয়াল খেলে পেটে গ্যাস হয়, কাইলাতে উৎকট গন্ধ, গইন্নাতে কাঁটা বেশি, লাড়িয়া মাছ গু খাওয়ার জন্য দ্বিতীয় শ্রেণির মাছ হিসাবে ধরা হতো। গইন্না মাছের মাথা কুড়ি হিসাবে বিক্রি হতো বাকি অংশ শুটকি দেওয়া হতো।
রামনগর ও জাল্লাবাজ নামক স্থানে সমস্ত সুরমা নদী জাল দিয়ে বেড় দিয়ে হাজার হাজার পাঙ্গাস-রুই প্রভৃতি মাছ উৎসবমুখর পরিবেশে ধরা হতো। এই মাছ ধরাকে ‘নীম’ বলে অভিহিত করা হতো। সেই নীমের মাছ গরীবের জীর্ণ কুঁড়েঘর হতে শুরু করে ধনীর অট্টালিকায় পাঙ্গাস রান্না হতো। দেড়-দু’টাকায় বড় পাঙ্গাস বিক্রি হতো, যা এখন গল্পের মতো শুনায়। সেই মাছ এখন কোথায়?
বহুল আলোচনায় না গিয়ে মানুষ বৃদ্ধি, যোগাযোগের উন্নতির ফলে দেশের ভিতর আর বিদেশে মাছ চালান হওয়ার ফলে আমাদের মাছ খাওয়ার কপাল ভেঙ্গেছে, আর নাড়িতে টান পড়েছে। প্রতিদিন ঢাকাইয়া কোচ আর ট্রাকে চড়ে নয়তো বরফ ভর্তি নৌকায় ওঠে মৎস্য মহোদয়রা সুনামগঞ্জ হতে বাইরে যাচ্ছেন। আবার উঁচু জাতের জনাবেরা ফিস প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন সাজে সজ্জিত হয়ে লন্ডন, আমেরিকা আর মধ্যপ্রাচ্যের শহরে গিয়ে ভাগ্যবানদের রসনার তৃপ্তি মেটাচ্ছেন। ভারতে সুস্বাদু ইলিশ যাচ্ছে আর সেখান থেকে ভুটকা গন্ধযুক্ত রুই আমদানি হচ্ছে।
আমার সন্তানের পাতে এক টুকরা মাছ তুলে দিতে পারব, আর কতোদিন যে মাছে-ভাতে বাঙালি থাকতে পারবো তা একমাত্র ভবিষ্যৎই বলে দিতে পারবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com