বিশেষ প্রতিনিধি ::
জেলার জগন্নাথপুর, দিরাই ও শাল্লায় আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীদেরকে বেকায়দায় ফেলে দিয়েছেন দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। মনোনয়ন না পেয়ে তাঁরা দলের সঙ্গে বিদ্রোহ করে জম্পেস প্রচারণা চালাচ্ছেন। এই তিন উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে দলের দায়িত্বশীল অনেক নেতাকর্মীদেরও দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি সদর, দক্ষিণ এবং দোয়ারাবাজারে বিদ্রোহীদের কারণে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হলেও এখনো দলের দায়িত্বশীল নেতারা নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। শক্ত হাতে তাদের দমনের বদলে অনেকে তাঁদের উস্কে দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। দলীয় প্রার্থীরা নিজেদের প্রচারণায় দায়িত্বশীল নেতাদের যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানালেও প্রার্থীরা নেতাদের পাশে পাচ্ছেন না।
জানা যায়, আগামী ২৮ মে জগন্নাথপুর, দিরাই এবং শাল্লা উপজেলার ১৮ ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এসব উপজেলার সকল ইউনিয়নেই রয়েছে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী। বিদ্রোহী প্রার্থীদের সবাই মনোনয়ন চেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাঁরা মনোনয়ন পাননি। মনোনয়ন না পাওয়ায় তাঁরা জেলা নেতাদের সমালোচনা করে ‘মনোনয়ন বাণিজ্যে’র অভিযোগও আনেন। শেষতক বিদ্রোহীরা দলীয় প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জ দিয়ে প্রার্থী হয়েছেন। এখন নির্বাচনী প্রচারণায় দলের অনেক নেতাকর্মীদেরও টেনে এনেছেন তাঁরা। দিরাই-শাল্লায় প্রকাশ্যে বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন তাঁরা।
জানা গেছে, দিরাই উপজেলায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ১১ জন। জগদল ভাটিপাড়া ইউনিয়নে তৃণমূল নেতাদের মতামতকে উপেক্ষা করে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মতিউর রহমান নিজের পছন্দের প্রার্থীদের মনোনয়ন দিয়েছেন বলে তৃণমূল নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেছেন। জানা গেছে, এই দুই ইউনিয়নে স্থানীয় অনেক নেতাকর্মীরা দলের বিদ্রোহী প্রার্থী শাহজাহান কাজী ও শিবলি আহমেদ বেগের পক্ষে কাজ করছেন। শাল্লা এবং জগন্নাথপুরেও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। জগন্নাথপুরে আওয়ামী লীগের ৯জন বিদ্রোহী রয়েছেন। বিদ্রোহীরাও দল মনোনীত প্রার্থীর চেয়ে হেভিওয়েট হিসেবে পরিচিত। এভাবে দলীয় প্রার্থীদের প্রতিপক্ষ হিসেবে নিজেদের নির্বাচনী মাঠে অবস্থান করছেন বিদ্রোহী প্রার্থীরা।
জানা গেছে, বিদ্রোহীদের দমন করতে দল মনোনীত প্রার্থীরা জেলা ও উপজেলার দায়িত্বশীল নেতাদের বারবার অভিযোগ করলেও নেতারা রয়েছেন নিষ্ক্রিয়। অনেক প্রার্থী জেলা ও উপজেলা নেতাদের তাঁদের নির্বাচনী প্রচারণায় এসে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানালেও তাঁদের পাশে পাচ্ছেন না। এতে দলীয় প্রার্থীদের মনোবল ভেঙে পড়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জগন্নাথপুর উপজেলার আওয়ামী লীগ মনোনীত এক চেয়ারম্যান প্রার্থী বলেন, উপজেলার শীর্ষ নেতাদেরকে আমার নির্বাচনী প্রচারণায় এসে যোগ দেওয়ার জন্য একাধিকবার বলেছি। তাঁরা কেউ বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে নিষ্ক্রিয়তা দেখাচ্ছেন। এতে আমাদের কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়ছেন। তিনি বিদ্রোহীদের দমন করে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে জরুরি ভিত্তিতে দলের শীর্ষ নেতাদের যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমন বলেন, দলীয় সভানেত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনা তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী মনোনীত করেছেন। আমরা তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীকে প্রচারণায় চালানোর নির্দেশনা দিয়েছি। বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান। কোন নেতাকর্মী বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষ নিলে তাঁকেও ছাড় দেওয়া হবে না। সাংগঠনিকভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার মুখোমুখি হতে হবে তাঁকে।