বছরে একটি মাত্র বোরো ফসলকে ঘিরেই হাওরাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নসাধ রচিত হয়। কিন্তু প্রতি বছরই পাহাড়ি ঢলের তোড়ে ভেঙে যায় ফসল রক্ষা বাঁধ। কৃষকের চোখের সামনেই একে একে তলিয়ে যায় সোনাফসল। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়েন। বাঁধ নির্মাণে সংশ্লিষ্টদের অনিয়ম এবং গাফিলতির কারণে এবং সঠিক সময়ে টেকসই বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় ঢলের প্রথম ধাক্কাতেই তা ভেঙে যায়। বিগত সময়ে আমরা বার বার এই চিত্র লক্ষ করেছি। তবে আশার কথা হল এবার পানি উন্নয়ন বোর্ড হাওরের ফসল রক্ষায় আগাম প্রস্তুতি নিয়েছে। তারা শীঘ্রই বেড়ি বাঁধগুলো সংস্কারে উদ্যোগ নিচ্ছে। এ বিষয়ে গতকাল দৈনিক সুনামকণ্ঠে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদ পাঠে জানা যায়, জেলার ৩৭টি হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ সংস্কারে পাউবো’র বাজেট ৫৭ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে এবং পিআইসি’র কমিটির জন্য স্থানীয় এমপি, ইউএনও ও চেয়ারম্যানদের চিঠি দেয়া হয়েছে। আমরা পাউবো’র আগাম এই প্রস্তুতিকে সাধুবাদ জানাই। তবে নির্মাণ কাজে নানা অনিয়মের আশঙ্কাও থাকে। কারণ আমরা অতীতে দেখেছি, সংশ্লিষ্টদের অনিয়ম ও গাফিলতির কারণে পাহাড়ি ঢলের প্রথম ধাক্কাতে ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল যেতে। যা কখনোই কাম্য নয়।
সরকার প্রতিবছর ফসল রক্ষার বাঁধ সংস্কার বা নির্মাণে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে। কিন্তু কিছু অসাধু কর্তার অনিয়ম-নয়ছয়ের কারণে টেকসই বাঁধ নির্মাণ হয় না। এমনও দেখা গেছে বাঁধে কোনো মাটিই ফেলা হয়নি অথবা নামমাত্র মাটি দেয়া হয়েছে। ফলে নড়বড়ে বাঁধ ভেঙে ফসলহানির ঘটনা ঘটে। হাওরের বুকে নেমে আসে হাহাকার। আমরা এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাই না। কৃষকের মেরুদন্ডে আঘাত হানা হবে আর তা সুনামগঞ্জবাসী মুখ বুজে সহ্য করবে এমন ধারণা পোষণ করা ভুল। সুনামগঞ্জবাসী জানে কিভাবে তার অধিকার আদায় করতে হয়। আমরা বলতে চাই, এবার হাওর রক্ষা বাঁধ নিয়ে কোনো অনিয়ম, দুর্নীতি চলবে না। সুনামগঞ্জবাসী কোনো অনিয়ম-দুর্নীতিকে কখনো প্রশ্রয় দেয়নি, দেবেও না। নির্ধারিত সময়ে টেকসই ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।