1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ০৩:৪৮ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

অটিস্টিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুল : যেখানে হাসি গানে আনন্দের শিখন

  • আপডেট সময় রবিবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৬

মো. আমিনুল ইসলাম ::
কারো হাতে চাররঙা বল। চোখে মুখে আনন্দের ছাপ। খেলাধুলায় মেতে থাকা। কেউ বা ব্যস্ত নিয়মিত অভ্যাসে। তাদের ঘিরে ব্যস্ততা শিক্ষকদের। আর প্রত্যাশা সাজিয়ে অপেক্ষা অভিভাবকদের; কবে আরও একটু স্বাভাবিকতায় ফিরবে সন্তানটি। দিন দিন হাসি গানে শিখছে তারা নতুন কিছু।

এ চিত্র সুনামগঞ্জ শহরে প্রতিষ্ঠিত অটিস্টিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুলের। এ স্কুলের শিশুরা অন্য শিশুদের মতোই লেখাপড়া করে সুন্দর আলোকিত জীবনের স্বপ্ন দেখে। তবে তাদের শেখাটা একটু ব্যতিক্রমী। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পরিচালনায় স্কুলটি কার্যক্রম শুরু করেছে চলতি বছরের ১ সেপ্টেম্বরে। আপাতত জেলা ক্রীড়া সংস্থার দুটি কক্ষে চালু করা হয়েছে স্কুলটির কার্যক্রম। যেখানে দূর দূরান্ত থেকে প্রতিদিন পাঠ নিচ্ছে ৫৭জন শিক্ষার্থী। সকালে শরীরচর্চা দিয়ে শুরু হয় স্কুলটির কার্যক্রম। পাঠ চলে দুপুর পর্যন্ত। এ সময়টুকু হাসি গানে ছন্দে নিবিড়ভাবে চলে শিশুদের শেখানোর প্রক্রিয়া। আর এ পাঠদানে নিবেদিত আছেন ১১জন শিক্ষক-শিক্ষিকা।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এ স্কুলে প্রায় প্রতিদিনই শিক্ষকের ভূমিকায় দেখা মেলে জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলামকে। যিনি প্রশাসনিক শত ব্যস্ততার মাঝেও ছুটে আসেন স্কুলটিতে। তার সহায়তায় স্কুলের কার্যক্রম আরও বেগবান হচ্ছে।
এ স্কুলটিতে বর্তমানে মা ও শিশু, শিশু ও বিশেষ শ্রেণিসহ রয়েছে ৪টি শ্রেণি। এরমধ্যে ০ থেকে ৬ বছর, ৬ থেকে ১১ বছর এবং ১১ থেকে ১৬ বছর পর্যন্ত বয়সের শিশুরা আলাদা আলাদা শ্রেণিতে পাঠগ্রহণ করছে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত পরিচালিত শিখন কার্যক্রমে শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মিজানুল হক সরকার, সাফাতুল হক চৌধুরী, লাকী চৌধুরী, রুম্মানা আকতার, খাদিজা আক্তার, মোছা. হাফছা বেগম পুষ্পা, আয়েশা সুলতানা, সমাপ্তি পাল, মোছা. শরীফা আক্তার, মিতানুর বেগম লায়লা ও জুলফা আক্তার। এছাড়াও অফিস সহায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সাজিদুর রহমান।
সুনামগঞ্জ অটিস্টিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুল অনেকটাই বদলে দিয়েছে এ স্কুলে পড়–য়া শিক্ষার্থীদের। আগেকার অভ্যাস বদলসহ আচার ব্যবহারের দিক থেকে এখন তারা অনেকটাই মিশুক। পাল্টেছে তাদের মন খারাপের দিন। পৃথিবীটাকে যেন তারা এখন নতুন করে সাজিয়ে নেয়ার ধারণা রাখে। গানের ছন্দে চেনা হয়েছে নিজের হাত, চোখ, মাথা, মুখসহ অনেক কিছুই। আগের মতো আর অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেনা ওরা। স্কুলে এসে হাসতে শিখেছে এসব কচিকাঁচারা। শিখেছে অঙ্গভঙ্গি আর বলার ধরণ। গল্পে গল্পে আর খেলার ছলে শিখছে লেখাপড়াও। ওরা প্রতিদিনই শিখছে নতুন নতুন বিষয়। অভিভাবকদের চোখেও বাঁধছে নতুন স্বপ্ন।
অভিভাবক আলেয়া বেগম বলেন, ‘আমার বাচ্চার অনেক পরিবর্তন এখন আমি লক্ষ্য করি। এ স্কুল আমার বাচ্চাকে আগের চেয়ে অনেকটাই বদলে দিয়েছে। সে এখন যে কোন কাজে খুব মনোযোগী হয়। স্কুলে আসার জন্য সকালে বায়না শুরু করে দেয়। স্কুলটাকে সে অনেক ভালোবাসে। এখানে আসলেই ওর মন ভালো হয়ে যায়, সবার সঙ্গে মিশে, স্কুলের পরিবেশটাই অন্য রকম’।
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মিজানুল হক সরকার বলেন, ‘এ স্কুলের যাত্রালগ্ন থেকে আমরা নিবিড় ¯েœহে এক একজন শিশুকে আনন্দ দিয়ে শেখানোর কাজটা করে আসছি। আমরা শিশুদের জন্য আনন্দঘন একটা স্কুল পরিচালনা করছি, যেখানে শিশুরা খেলাধুলার পাশাপাশি নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছে। তাদেরকে লেখাপড়া শেখানোর পাশাপাশি খেলাধুলাতেও সমান সময় দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বয়স অনুপাতে আমরা আমাদের শ্রেণিগুলো সাজিয়েছি। এখানে অভিভাবকরা তাদের শিশুদের নিয়ে আসেন এবং নিজেরাও শিশুদের সঙ্গে আনন্দঘন পরিবেশে সময় কাটান। আমরা জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম স্যারের অনুপ্রেরণায় ও তার আন্তরিক সহযোগিতায় আমাদের স্কুলটির কার্যক্রম নিয়মিত পরিচালনা করছি’।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি কাজের ফাঁকে একটু সময় পেলেই স্কুলটাতে যাই। স্কুলটা নিয়ে আমার অনেক দিনের স্বপ্ন। এখানকার বাচ্চাদের সাথে সময় কাটাতে অনেক ভালো লাগে। আমরা স্কুলের আপাতত কার্যক্রমটা জেলা ক্রীড়া সংস্থার ২টি কক্ষে চালাচ্ছি। তবে স্কুলের জন্য পুরাতন জেলখানা সম্মুখে জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা শীঘ্রই ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করবো। এ স্কুলটার পরিবেশ এতোটাই আনন্দঘন যে স্কুলে যেসব বাচ্চারা আসে তারা স্কুলটাকে খুব ভালোবাসে। সকাল হলেই তারা স্কুলে আসার জন্য বায়না ধরে। এখানে তারা অনেক মজা করে শিখে। আমরা এ স্কুলে যারা শিক্ষক হিসেবে রয়েছেন তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আমার ইচ্ছে আছে জেলার প্রত্যেকটা উপজেলায় একটি করে এ ধরনের স্কুল করবো।’

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com