1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
সোমবার, ০৫ মে ২০২৫, ০২:৫০ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

কথা সাহিত্যিক অধ্যাপক শাহেদ আলী স্মরণে : মজিবুর রহমান অ্যাডভোকেট

  • আপডেট সময় রবিবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৬

অধ্যাপক শাহেদ আলী ১৯২৫ সালের ২৬ মে সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর থানার অন্তর্গত মাহমুদপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম মৌলভী ইসমাইল ও মাতা মরহুম আয়েশা খাতুন। জনাব শাহেদ আলী সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় হতে প্রবেশিকা পাস করে সিলেট এমসি কলেজ থেকে বিএ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে এমএ পাশ করেন। স্কুল জীবন থেকেই তিনি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সক্রিয় হয়ে ওঠেন।
জনাব শাহেদ আলী ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। তাঁল ছিল এক বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন। তিনি একাধারে একজন ভাষা সৈনিক, সুলেখক, প্রথিতযশা সাংবাদিক, অধ্যাপক, রাজনীতিবিদ, প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ও ইসলামী চিন্তাবিদ ছিলেন। কলেজ জীবনে তিনি মাসিক আল ইসলাহ, ছাত্র আন্দোলন ও সিলেটের কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সাথে জড়িত ছিলেন এবং সিলেট থেকে প্রকাশিত আসাম মুসলিম ছাত্র আন্দোলনের বিপ্লবী মুখপত্র ‘প্রভাতী’ এর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা থেকে প্রকাশিত তমদ্দুন মজলিসের মুখপত্র ‘সাপ্তাহিক সৈনিক’ এর সম্পাদক নিযুক্ত হন। তিনি তমদ্দুন মজলিস-এর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। এছাড়া তিনি ‘দৈনিক বুনিয়াদ’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন এবং দৈনিক মিল্লাতের সম্পাদকীয় বিভাগেও কাজ করেন। তিনি ফ্রাঙ্কলিন পাবলিকেশনের বাংলা বিশ্বকোষ প্রকল্পের প্রথম সম্পাদক ছিলেন।
১৯৫১-৫৩ সালে তিনি বগুড়ার স্যার আজিজুল হক কলেজ ও রংপুর কারমাইকেল কলেজে অধ্যাপনা করেন। ১৯৫৪ সালে তিনি অধ্যাপনা ছেড়ে খেলাফতে রব্বানী পার্টি থেকে প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন খেলাফতে রব্বানী পার্টির সেক্রেটারি জেনারেল। ১৯৬২ সালে তিনি ইসলামী ফাউন্ডেশনে যোগদান করেন। তিনি সেখান থেকে প্রকাশিত একাডেমী পত্রিকা ও সবুজ পাতা’র সম্পাদনার দায়িত্ব দীর্ঘকাল পালন করেন।
তিনি ছিলেন একজন খ্যাতনামা লেখক। তার অনেকগুলো গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তন্মধ্যে ‘জিব্রাইলের ডানা’, ‘একই সমতলে’, ‘আত্মার আশীষ’ ও ‘বুদ্ধির ফসল’ ইত্যাদি অন্যতম। তার কিছু উল্লেখযোগ্য বই ইংরেজি, রুশ ও উর্দু ভাষায় অনূদিত হয়েছে। মহান ভাষা আন্দোলনে তার অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ১৯৮১ সনে একুশে পদকে ভূষিত হন। এছাড়াও তিনি ১৯৬৪ সনে বাংলা একাডেমী পুরস্কার, ১৯৭০ সনে তমগায়ে ইমতিয়াজ, ১৯৮৫ সনে নাসির উদ্দিন স্বর্ণপদক, ১৯৮৬ সনে ইসলামী ফাউন্ডেশন পুরস্কার, ১৯৮৮ সনে লায়ন পদক এবং সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৮৯ সনে একুশে পদক লাভ করেন। (তথ্যসূত্র : প্রখ্যাত লেখক আবু আলী সাজ্জাদ হোসাইন-এর ‘সুনামগঞ্জ জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য’ গ্রন্থ)
আমার চাচাতো বোন মরহুমা রেহেনা খাতুন-এর স্বামী সাচনাবাজার ইউনিয়ন কাউন্সিলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান মরহুম আব্দুল মান্নান সাহেবের সাথে শাহেদ আলী সাহেবের খুব অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল। শাহেদ আলী সাহেব দেশের বাড়ি তথা সুনামগঞ্জ খুব একটা আসতেন না। ১৯৭০ সনের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে আমার দুলাভাই মান্নান সাহেব স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। এর কিছুদিন পরই তিনি অসুস্থ অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। তাঁর মৃত্যুর পর শাহেদ আলী সাহেব আমার বোন ও ভাগ্না-ভাগ্নিদের প্রতি সমবেদনা জানানোর জন্য দুলাভাইয়ের গ্রামের বাড়ি দুর্লভপুরে এসেছিলেন তবে তখনও তাঁর সাথে আমার পরিচয় কিংবা দেখা সাক্ষাত হয়নি। সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি লাভের পর ১৯৮০ সনে মাস্টার্স ও এলএলবি পড়তে ঢাকা যাই। শাহেদ আলী সাহেব তখন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক। তাঁর সাথে দেখা করার জন্য সময় করে একদিন ইসলামিক ফাউন্ডেশন কার্যালয়ে যাই। আমার এক আত্মীয় বর্তমানে আইনজীবী শাহ আলম মহীউদ্দিন তখন ইসলামিক ফাউন্ডেশনে কাজ করতো। তাঁকে সাথে নিয়ে শাহেদ আলী সাহেবের অফিস রুমে গেলাম। শাহ আলম তাঁর সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিল। এই প্রথম তাঁর সাথে আমার দেখা ও কথা। স্বহাস্যে আমাকে বসতে বললেন। আমার সাথে অনেকক্ষণ গল্প করলেন। দুলাভাইয়ের স্মৃতিচারণ করে বললেন মান্নান সাহেবের ছেলেরা একদিন প্রতিষ্ঠিত হবে এবং তাঁদের বাবার মতই রাজনীতিতে সক্রিয় থাকবে বলে আমার বিশ্বাস। পরবর্তীতে তাঁর সেই কথার প্রতিফলন ঘটেছে। আমি ইসলামিক ফাউন্ডেশনে শাহেদ আলী সাহেবের ওখানে প্রায়ই যেতাম। আমার লেখালেখি করার কিছুটা অভ্যাস আছে জানতে পেরে তাদের ওখান থেকে প্রকাশিত কচিকাঁচার পত্রিকা সবুজ পাতায় লিখতে বললেন। মাঝে মধ্যে লেখা দিতাম। কখনো ছাপা হতো, কখনো হতো না। পরবর্তীতে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ‘অগ্রপথিক’ পত্রিকায় আমার বিভিন্ন লেখা ছাপা হয়েছে। লেখা ছাপা হলে সম্মানী পেতাম। ‘ক্যাম্পাসে অস্ত্রের মহড়া’ শীর্ষক আমার একটি লেখা অগ্রপথিকে ছাপা হলে দারুণ আলোড়ন সৃষ্টি করে। শাহেদ আলী সাহেব লেখাটি পড়ে রসিকতা করে আমাকে বলেছিলেন তুমিতো দেখছি খুব সাহসী লেখক। তোমাকে দেখে কিন্তু এতো সাহসী বলে মনে হয় না।
ছাত্র জীবন থেকে অদ্যাবধি ঢাকায় বসবাস করছে আমার সহপাঠী ও বর্তমানে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আকবর হোসেন মঞ্জু। তাঁর বিয়ের সময় বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মরহুম আব্দুস সামাদ আজাদ ও বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্তসহ ঢাকায় বসবাসরত সুনামগঞ্জের বিশিষ্টজনদেরকে সে আমাকে নিয়ে দাওয়াত করে। বিয়ের অনুষ্ঠানে অধ্যক্ষ দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ সাহেব ও অধ্যাপক শাহেদ আলী সাহেবকে নিয়ে আসার জন্য আমাকে বলা হয়। কথাটা শুনে শাহেদ আলী সাহেব মিটমিট করে হেসে আমাকে বললেন তোমাকে কষ্ট করে এসে আমাকে নিয়ে যেতে হবে না। যথাসময়ে আমাকে অনুষ্ঠানে পাবে। অবশ্য আজরফ সাহেবকে তাঁর মালিবাগের বাসা থেকে এসে বিয়ের অনুষ্ঠানস্থল বনানীতে মঞ্জুর শ্বশুরালয়ে নিয়ে যেতে হয়েছিল। বলা বাহুল্য ঠিক সময়মতই শাহেদ আলী সাহেব বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবনে জনাব শাহেদ আলী সাহেব অত্যন্ত মিষ্টভাষী ও সদালাপী ছিলেন। তিনি খুব অমায়িক ও ধর্মপরায়ণ ছিলেন এবং সাদাসিধা জীবনযাপন করতেন।
২০০১ সালের ৬ নভেম্বর তিনি ঢাকাতে পরলোক গমন করেন। মহান আল্লাহ পাক তাঁকে বেহেশত নসিব করুন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com