পর্যটন আজ বিশ্বের অন্যতম ব্যবসা। বিশ্বব্যাপী মোট উৎপাদনে এ শিল্পের অবদান প্রায় ৬ হাজার বিলিয়ন ডলার, যা মোট বিশ্ব উৎপাদনের প্রায় ৯ শতাংশ। ইতিমধ্যে পর্যটন বিশ্বের বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশসমূহের এক-তৃতীয়াংশের রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস পর্যটনশিল্প। বিশ্ব পর্যটন সংস্থার প্রাক্কলন অনুযায়ী সমগ্র বিশ্বে ২০২০ সাল নাগাদ পর্যটন থেকে বছরে দুই ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হবে। ইতিমধ্যে পর্যটনশিল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির দিক থেকেও সর্ববৃহৎ খাত হিসেবে স্থান করে নিয়েছে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে অপূর্ব লীলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওর। পূর্বের তুলনায় যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটা ভালো হওয়ায় এ হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে পর্যটকদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তবে টাঙ্গুয়ার হাওর কোনো প্রকার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার আওতায় না থাকায় এবং সুরক্ষিত না থাকায় একদিকে পর্যটকদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে অন্যদিকে হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য ও বনজস¤পদ।
গত রোববার টাঙ্গুয়ার হাওর ব্যবস্থাপনায় অংশীজনের মতামত শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ হাওরের পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়েছেন সুধীজন। এ নিয়ে দৈনিক সুনামকণ্ঠে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদে বলা হয়েছে, ১৯৯৯ সনে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে অবস্থিত টাঙ্গুয়ার হাওরটি পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণার পর ২০০০ সালে সুন্দরবনের পর বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এরপর ৬০ বছরের ইজারা প্রথা বিলোপ করে হাওরটি ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে স্থানান্তরিত করা হয়। ২০০৩ সাল থেকে সুইস দাতা সংস্থা এসডিসির অর্থায়নে আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংগঠন আইইউসিএন ও জেলা প্রশাসন যৌথভাবে টাঙ্গুয়ার হাওর কো ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম নাম দিয়ে জীব-বৈচিত্র্য পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু করে। কিন্তু গত ১৩ বছরে প্রকৃতি রক্ষার নামে হাওরের প্রকৃতি বিনাশ করে।
প্রকৃতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। পরিবর্তিত অবস্থায়ই আমাদের খাপ খাইয়ে চলতে হবে। এই পরিবর্তনের ফলে টাঙ্গুয়ার হাওরেরও পরিবর্তন হচ্ছে। এটা মেনে নিয়েই কাজ করতে হবে। কোন বিধিমালা তৈরি করে হাওর রক্ষা করা যাবে না। স্থানীয় উপকারভোগীদের সঙ্গে নিয়েই তাদের গুরুত্ব দিতে হবে। চোর হিসেবে আখ্যায়িত করে তাদের দূরে ঠেলে দিলে চলবে না। হাওরের জেলেরা মাছচোর নয়, হাওরে মাছ ধরা তাদের চিরায়ত উত্তরাধিকার। মাছের ভান্ডার খ্যাত এই হাওরে আছে কেবল মাছ, গাছ আর পর্যটক। তাই এই হাওরকে পর্যটন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে বিধি তৈরির মাধ্যমে হাওরের পরিবেশ বজায় রেখে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে। টাঙ্গুয়ার হাওরের পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে।’
এখন সংশ্লিষ্ট মহলের কাজ হবে কিভাবে পর্যটন সম্ভাবনাকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায় তার প্রয়োজনীয় কর্মকান্ড অতিদ্রুত স¤পন্ন করা। পাশাপাশি হাওরাঞ্চলের আইন-শৃঙ্খলা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণে বিশেষ নজরদারি ব্যবস্থা করা। রাস্তা ঘাটের উন্নয়ন, সম্প্রসারণ, যোগাযোগ স্থাপন দ্রুত বাস্তবায়ন করা। পাশাপাশি টাঙ্গুয়ার হাওরকে পর্যটক বান্ধব ও আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলার প্রতি মনোযোগ দেয়ার। ভ্রমণপিয়াসু মানুষদের আর্কষণ করতে হলে দেশে সম্ভাবনাময় পর্যটন খাতকে গুরুত্ব দিয়ে এর যথাযথ উন্নয়ন অপরিহার্য্য। তাহলে শুধুমাত্র পর্যটন খাত থেকেই প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে। একই সাথে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নয়ন, সম্প্রসারণ, কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হবে।