স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে সরকার একের পর এক উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু হাসপাতালে জনবল সংকট, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংকটসহ নানামুখি সমস্যার বেড়াজালে আক্রান্ত হয়ে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। বিশেষ করে হাওরাঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবার শোচনীয় অবস্থা বিরাজ করছে। যদিও সরকার মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে কমিউনিটি হাসপাতাল চালু করেছে। বিভিন্ন রোগের সেবা নিয়ে মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করছে। কিন্তু হাসপাতালগুলোতে লোকবল ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিসহ নানা সংকটে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সুনামগঞ্জবাসী।
“৯ উপজেলায় প্রসূতিসেবা বন্ধ” শীর্ষক শিরোনামে গতকাল দৈনিক সুনামকণ্ঠে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদে বলা হয়, সুনামগঞ্জের ৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সবক’টিতেই স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ নেই, এনেসথলজিস্টও নেই। এ কারণে হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জের সবকটি উপজেলায় প্রসূতিসেবা বন্ধ রয়েছে। এতে হাজারো গর্ভবতী নারী চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। এ কারণে প্রায়ই ঘটছে মা ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনা।
১১টি উপজেলার মধ্যে ৯টি উপজেলায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। ৪টি ৫০ শয্যার ও ৫টি ৩১ শয্যার। ৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৯টি স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ও ৯টি এনেসথলজিস্ট পদ রয়েছে। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ ১৮টি পদ দীর্ঘদিন ধরেই শূন্য। পদশূন্য থাকায় এ সবক’টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রসূতিসেবা বন্ধ আছে। এসব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় হাজার হাজার গর্ভবতী নারী চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। গর্ভবতী নারীদের নিয়ে তাদের পরিবারের লোকজন প্রতিনিয়ত সমস্যায় পড়ছেন। রোগীদের একমাত্র ভরসাস্থল সদর হাসপাতালেও লোকবল সংকট রয়েছে। মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের প্রসূতি সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন মাত্র একজন পুরুষ মেডিকেল অফিসার। ফলে বাধ্য হয়েই স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার জন্য প্রাইভেট ক্লিনিকে যেতে হচ্ছে প্রসূতিদের। প্রাইভেট ক্লিনিকে ব্যয়বহুল চিকিৎসাসেবা নিতে সামর্থ নেই সিংহভাগ মানুষের। ব্যয়বহুল চিকিৎসার টাকা যোগাড় করতে না পারার কারণে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে অনেক প্রসূতি ও শিশু। আবার অনেক পরিবার চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে সহায়-সম্বল বিক্রি করে ফতুর হচ্ছে। স্বাস্থ্যখাতে এমন দুরবস্থা কোনোভাবেই কাম্য নয়। মানুষের ৫টি মৌলিক অধিকারের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে স্বাস্থসেবা। হাওর অধ্যুষিত দরিদ্রজনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ নিবে এটাই সবার প্রত্যাশা।