স্টাফ রিপোর্টার ::
হাওরাঞ্চলে বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দাবিতে সুনামগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট, সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির জেলা সাব কমিটি ‘হাওরাঞ্চলের বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধান আন্দোলন পরিচালনা কমিটি’ এই কর্মসূচির আয়োজন করে।
রবিবার সকাল ১০টায় শহরের রায়পাড়াস্থ জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (এনডিএফ)-এর কার্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে আলফাত স্কয়ারে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
হাওরাঞ্চলের বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধান আন্দোলন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক সৌরভ ভূষণ দেব-এর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহ্বায়ক সুখেন্দু তালুকদার মিন্টুর পরিচানায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান আলোচকের বক্তব্য রাখেন হাওরাঞ্চলের বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধান আন্দোলন পরিচালনা আঞ্চলিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট এনডিএফ সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি রতœাংকুর দাস জহর।
আরও বক্তব্য রাখেন হাওরাঞ্চলের বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধান আন্দোলন পরিচালনা আঞ্চলিক কমিটির সদস্য ও জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট এনডিএফ সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম ছদরুল, স-মিল শ্রমিক ফেডারেশনের সহসভাপতি আইয়ূবুর রহমান, বারকি শ্রমিক সংঘ সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, যাদুকাটা নদী শাখার সাধারণ সম্পাক মো. তাহের মিয়া, গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি দিপ্তি সরকার, হোটেল রেস্টুরেন্ট মিষ্টি বেকারি শ্রমিক ইউনিয়ন সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি লিলু মিয়া, সদর উপজেলা কমিটির সভাপতি তৈয়ব আলী, জামালগঞ্জ উপজেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বদিউজ্জামান বদরুল, ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদ সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সদস্য কাকলি দাস, স-মিল শ্রমিক সংঘ সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনির মিয়া, সুনামগঞ্জ জেলা ক্ষৌরকার সমিতির সভাপতি নির্মল চন্দ, সদস্য অবনি চন্দ, শ্রমিক নেতা মোহাম্মদ আলম, হকার্স শ্রমিক সংঘ সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি আব্দুল হাই, সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিনন্দ কর প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হাওরাঞ্চলে অকাল ও অতিবন্যা ঘন ঘন আঘাত করছে। ২০১৭ সালে শতভাগ বোরো ফসলহানির পর ২০২২ সনে প্রলয়ংকরী বন্যায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়। চলতি বছরও সুনামগঞ্জ জেলাবাসী তিন দফা বন্যাকবলিত হয়ে আরও কয়েক দফা বন্যার আশঙ্কার মধ্যে রয়েছেন। কেন বারবার এই বন্যা? এটা কি নিছকই প্রাকৃতিক কারণ নাকি অন্য কারণ আছে?
বক্তারা বলেন, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ তথা হাওরাঞ্চলে বার বার সৃষ্ট বন্যায় জনগণের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হওয়ার পাশাপাশি প্রাণহানি ঘটছে। শত শত বছর ধরে হাওরাঞ্চলে বসবাসকারী জনসাধারণ বর্ষাকালে তাদের জীবনযাপনের উপযোগী বিভিন্ন ব্যবস্থাপনা নিজেরাই গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। বর্ষাকালে পানিপ্রবাহ ঠিক রেখে তাদের জীবন-জীবিকা ও যোগাযোগের প্রেক্ষিতে নৌকাকেন্দ্রিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলো হাওরবাসী। কিন্তু বন্যা নিয়ন্ত্রণে বিজ্ঞান ও মানুষের উদ্ভাবনী শক্তিকে প্রয়োগ না করে সৃষ্ট বন্যাকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে প্রকৃত সত্যকে আড়াল করা হচ্ছে।
বক্তারা বলেন, ৬০ এর দশকে মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদের পরিকল্পনায় গঠিত ওয়াপদা বর্তমান পানি উন্নয়ন বোর্ড শুরু থেকে অপরিকল্পিতভাবে হাওররক্ষা বাঁধ বাস্তবায়ন করে আসছে। এতে করে বাঁধের মাটি নদীতে পড়ে নদী ভরাট ত্বরান্বিত হচ্ছে। তাছাড়া বাঁধের প্রকল্পে সীমাহীন লুটপাট তো চলছেই।
বক্তারা বলেন, সা¤্রাজ্যবাদী পরিকল্পনায় গঠিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের সীমাহীন লুটপাটের ধারাবাহিক যে প্রতিবেদন এ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে, সকল প্রতিদেন এক জায়াগায় জমায়েত করলে সুনামগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ হয়ে যাবে।
সমাবেশ শেষে মিছিল সহকারে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধামন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। স্মারকলিপির অনুলিপি দেয়া হয় পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী, নদী রক্ষা কমিশনের সভাপতি, সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়রকে।
স্মারকলিপির দাবিতে উল্লেখ করা হয়- পাহাড়ী ঢলে ফসলহানি রোধ এবং বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য হাওরাঞ্চলের নদী, উপনদী ও খাল খনন করতে হবে। অপরিকল্পিত হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ বন্ধ এবং হাওর রক্ষাবাঁধে ব্যাপক লুটপাট ও দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। সুরমা ও কুশিয়ারা নদী অমলসিদ থেকে যথাক্রমে ভৈরব ও কালনি পর্যন্ত খনন করতে হবে। এর সাথে ঘোড়াউত্রা বাঁকসহ অন্যান্য নদীর বড় বড় বাঁক বৈজ্ঞানিক নিয়মে নিয়ন্ত্রণ ও নদী ভাঙ্গন রোধ করতে হবে। হাওরাঞ্চলে পানি প্রবাহের প্রাকৃতিক নিয়মকে অস্বীকার করে নির্মাণকৃত সকল অপরিকল্পিত রাস্তা ও স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে। নদ-নদী, খাল, ছড়া দখলমুক্ত করতে হবে। সুনামগঞ্জ শহরের সকল খাল বিশেষ করে কামারখালসহ ও অন্যান্য বড় পাঁচটি খাল উদ্ধার করে খননের মাধ্যমে কার্যকর করতে হবে।.বন্যার হাত থেকে কৃষক-জনতার জানমাল রক্ষায় হাওরাঞ্চলের জন্য সরকারিভাবে পর্যাপ্ত বড় নৌকায় চলাচলসহ আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা এবং আগাম বন্যার হাত থেকে ফসলরক্ষার আগাম ব্যবস্থা ও কৃষকদের ফসল কাটার জন্য সরকারি সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে। হাওরের ঝুঁকিপূর্ণ গ্রামগুলোতে টেকসই গ্রাম রক্ষা বাঁধ পরিকল্পিতভাবে ও বৈজ্ঞানিক নিয়ম মেনে নির্মাণ করতে হবে। বন্যা নিয়ন্ত্রণের নামে বিভিন্ন প্রকল্পে রাজনৈতিক প্রভাবশালী ও প্রশাসনের লুটপাটকারী চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।