1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ০৮:৪১ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

সিআইডির তালিকায় শতাধিক কর্মকর্তা

  • আপডেট সময় শনিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৪

সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) প্রশ্ন কেলেঙ্কারিতে বিভিন্ন পদের অন্তত শতাধিক ক্যাডার ও বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তাদের নাম আসছে। এসব কর্মকর্তা ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে চাকরিতে ঢুকেছেন। তাদের অনেকেই এখনো বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত আছেন। আবার কয়েকজন আছেন দেশের বাইরে।
মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি ও কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা এসব সুবিধাভোগীর একটি তালিকা তৈরি করছে। তাদের বিষয়ে সরকারের হাইকমান্ডকে অবহিত করা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের কর্মকা- মনিটরিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র গণমাধ্যমকে জানিয়েছে। তবে পুলিশের ওই সূত্রটি বলছে, যাদের নাম এসেছে, তাদের বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
ওই সূত্রটি আরও জানায়, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে প্রভাবশালীদের জড়িত থাকার বিষয়টিও জানা যাচ্ছে। প্রশ্ন বিক্রি করার অর্থ পিএসসির কিছু কর্মকর্তা পেতেন নিয়মিত। এমনকি যেখান থেকে প্রশ্ন ছাপা হতো তাদের একটি অংশও নিয়মিত পেয়ে আসছিল। যারা অর্থ নিতেন তাদের নামও জানা গেছে।
পিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সংস্থার সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীসহ অন্য আসামিরা সুবিধাভোগীদের বিষয়ে নানা তথ্য দিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, পিএসসির পাশাপাশি সরকারের অন্য দপ্তরের নিয়োগ পরীক্ষায়ও তারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছেন। কোন কোন নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস করা হয়েছে, সেটাও বলেছেন তারা। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পিএসসির এক ঝাড়–দারও এ চক্রে জড়িত।
গত ৬ ও ৭ জুলাই পিএসসির উপপরিচালক মো. আবু জাফর ও জাহাঙ্গীর আলমসহ ১৭ জনকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় একটি মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাদের মধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন ছয়জন। বাকিদের মধ্যে পিএসসির উপপরিচালকসহ ১০ জনকে ১০ দিনের রিমান্ডে চেয়ে আবেদন করেছে সিআইডি।
নাম প্রকাশ না করে সিআইডির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, আবেদ আলীসহ অন্যদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তারা ১০ বছরের বেশি সময় ধরে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে আসছেন। আবেদ আলীর নেতৃত্বে গ্রুপের সদস্য সংখ্যা প্রায় ৫০ জনের মতো। তার মধ্যে ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চক্রের সদস্যরা ঢাকার বাইরে গা ঢাকা দিয়েছেন। প্রায় সবারই নাম ও মোবাইল নাম্বার পাওয়া গেছে। তবে কারও কারও মোবাইল বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের অবস্থান শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।
এ কর্মকর্তা আরও বলেন, বিসিএসের পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের সুবিধাভোগীরা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-দপ্তরে কর্মরত আছেন। তাদের সংখ্যা শতাধিক হবে। তবে নাম আসার মানে যে তারা জড়িত তা বলা যাবে না। এজন্য তাদের সবকিছু পর্যালোচনা করা হচ্ছে। অহেতুক কাউকে হয়রানি করা হবে না। সরকারের নীতিনির্ধারকরা যদি দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেন, তাহলেই পুলিশ পদক্ষেপ নেবে। বিসিএসের প্রশ্ন যেখানে ছাপা হয় সেখানকার কর্মীদের গতিবিধিও নজরে রাখা হচ্ছে।
এর আগে সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, প্রশ্নপত্র ফাঁসে পিএসসির অন্তত ১০ কর্মকর্তা জড়িত। তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
ট্র্যাংকের তালা ভেঙে প্রশ্ন বের করতেন ঝাড়–দার :
তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রে পিএসসির সাবেক ও বর্তমান একাধিক সদস্য জড়িত বলে সন্দেহ করছে সিআইডি। গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা জানিয়েছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের মূলহোতা সৈয়দ আবেদ আলীর প্রধান সহযোগী ছিলেন অফিস সহায়ক সাদেজুল ইসলাম। তিনি উপপরিচালক জাফর ও সহকারী পরিচালক আলমগীর হোসেনের মাধ্যমে প্রশ্ন পেতেন। সাজেদুলের প্ররোচনায় জাফর ও আলমগীর পিএসসির এক ঝাড়–দারকে দিয়ে পিএসসি সদস্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুকের কক্ষের ট্রাংকের তালা ভেঙে প্রশ্নপত্র বের করে নিতেন। ট্রাংকের তালা খোলার পর নতুন তালা লাগিয়ে দিতেন তারা। ওইসব প্রশ্ন আসামি সাখাওয়াত ও সাইমের মাধ্যমে চাকরিপ্রার্থীদের কাছে বিক্রি করতেন। এছাড়া জাফরের মালিবাগে জ্যোতি কোচিং সেন্টার ও আলমগীরের মিরপুরের কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে প্রশ্ন চাকরিপ্রার্থীদের কাছে বিক্রি করতেন। সাজেদুল আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছেন, তারা ৪৪তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার চার সেট প্রশ্ন ও রেলওয়ের সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (নন-ক্যাডার) নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেন।
গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের সব মোবাইল ফোন ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। এতে তাদের লেনদেন, বিভিন্ন অ্যাপসে মেসেজ আদান-প্রদানের তথ্য পাওয়া যাবে। যার মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কেউ জড়িত থাকলে তাদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন সিআইডি কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, জিজ্ঞাসাবাদের গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের বক্তব্যে অনেক ধরনের অসংগতি পাওয়া গেছে। সেগুলো আবার যাচাই-বাছাই করার জন্য ১০ জনকে রিমান্ড চেয়ে পাঠানো হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে আবেদ আলী জানিয়েছে, তিনি রেলওয়ের নিয়োগ পরীক্ষায় ৮০ জনের কাছে প্রশ্ন বিক্রি করেছেন। প্রত্যেকের কাছ থেকে ২ লাখ করে টাকা নিয়েছেন। এ ছাড়া ৪৪তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার চার সেট প্রশ্ন পাওয়ার পর চাকরিপ্রার্থীদের সেগুলো সরবরাহ করেন। তাদের একটি কোচিংয়ে ডেকে প্রশ্নগুলো দিয়ে মুখস্থ করান। পিএসসির অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলাম জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, রেলওয়ের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তিনি সংগ্রহ করার জন্য উপপরিচালক মো. আবু জাফরকে ২ কোটি টাকা দিয়েছেন।
প্রশ্ন পেয়ে বোর্ড বসাতেন আবেদ :
প্রশ্নপত্র ফাঁস করার পর বোর্ড বসাত ফাঁসকারী চক্র। বোর্ডে প্রধানের দায়িত্ব পালন করতেন সৈয়দ আবেদ আলী। তার নেতৃত্বে সিদ্ধান্ত হতো কাকে কোন পদ দেওয়া হবে। টাকার অঙ্কের ওপর নির্ভর করে প্রথম-দ্বিতীয়ও নির্ধারণ হতো পরীক্ষার্থীদের। আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে আবেদ আলী এমন তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে গত বছরের শেষের দিকে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ৩ হাজার ১০০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাদের অনেকের কাছে ফাঁস করা প্রশ্ন বিক্রি করেছে আবেদ চক্র এবং তাদের চাকরিও হয়েছে বলে জানা গেছে।
বাতিল হচ্ছে রেলওয়ের পরীক্ষা :
সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ জুলাই হওয়া রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী পদে নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল হতে পারে। এ পরীক্ষা প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগেই গত সোমবার শেওড়াপাড়ার ওয়াসা রোডের বাসা থেকে আবেদ আলী ও তার বিশ্ববিদ্যালয়পড়–য়া ছেলে ছাত্রলীগ নেতা (পরে বহিষ্কার) সৈয়দ সোহানুর রহমান ওরফে সিয়ামকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। একই অভিযোগে পিএসসির দুই উপপরিচালক, এক সহকারী পরিচালকসহ ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এজাহারভুক্ত যারা পলাতক :
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার করা অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও কয়েকজন সন্দেহভাজনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন পিএসসির সাবেক সহকারী পরিচালক নিখিল চন্দ্র রায়, শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া, দীপক বণিক, খোরশেদ আলম খোকন, কাজী মো. সুমন, একেএম গোলাম পারভেজ, মেহেদী হাসান খান, গোলাম হামিদুর রহমান, মিজানুর রহমান, আতিকুল ইসলাম, এটিএম মোস্তফা, মাহফুজ কালু, আসলাম ও কৌশিক দেবনাথ।
১০ জনের রিমান্ড শুনানি ১৬ জুলাই :
পিএসসির দুই উপপরিচালকসহ ১০ জনকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেছেন সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমা। গত বৃহ¯পতিবার এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী ১৬ জুলাই শুনানির দিন রেখেছেন।
যাদের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে তারা হলেন পিএসসির উপপরিচালক মো. আবু জাফর ও মো. জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর কবির, সাবেক সেনাসদস্য নোমান সিদ্দিকী, অডিটর প্রিয়নাথ রায়, ব্যবসায়ী মো. জাহিদুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী শাহাদাত হোসেন, ঢাকার ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত মো. মামুনুর রশীদ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলের টেকনিশিয়ান মো. নিয়ামুন হাসান।
গত ৯ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জুয়েল চাকমা ১৭ জনকে আদালতে হাজির করলে সৈয়দ আবেদ আলী, পিএসসির অফিস সহায়ক খলিলুর রহমান, অফিস সহায়ক (ডিসপাস) সাজেদুল ইসলাম, ব্যবসায়ী আবু সোলায়মান মো. সোহেল, ব্যবসায়ী সহোদর সাখাওয়াত হোসেন ও সাইম হোসেন এবং লিটন সরকার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
চার আসামির জামিন আবেদন নাকচ :
সৈয়দ আবেদ আলী জীবনসহ চার আসামির জামিনের আবেদন নাকচ করেছে আদালত। অন্য তিন আসামি হলেন পিএসসির অফিস সহায়ক খলিলুর রহমান, ব্যবসায়ী আবু সোলায়মান মো. সোহেল ও লিটন সরকার। গত বৃহস্পতিবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন শুনানি নিয়ে আবেদন খারিজ করে দেন।

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com