বিশেষ প্রতিনিধি ::
সুনামগঞ্জ সীমান্তে চোরাচালান উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। সরকারের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা, কর্মচারী, সীমান্ত এলাকার জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদসহ একটি শক্তিশালী চোরাচালান সিন্ডিকেট গড়ে ওঠেছে। এই অবস্থায় সুনামগঞ্জের নবাগত পুলিশ সুপারের কাছে চোরাচালান প্রতিরোধ ও চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জেলার মূলধারার সাংবাদিকরা। সুনামগঞ্জের নবাগত পুলিশ সুপার এম. এন. মোর্শেদ মিট দ্যা প্রেসের আয়োজন করলে সেখানে সাংবাদিকরা এই দাবি জানান। পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে মিট দ্য প্রেসের আয়োজন করে জেলা পুলিশ। গত ৮ জুলাই সুনামগঞ্জে পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেছেন তিনি।
সাংবাদিকদের দাবির প্রেক্ষিতে পুলিশ সুপার এমএন মোর্শেদ বলেন, আমি সুনামগঞ্জবাসীকে নিশ্চয়তা দিতে চাই এখানে আমরা পুলিশে যারা আছি তারা চোরাচালান, চাঁদাবাজি, জুয়া ও অন্যান্য অপরাধে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিবনা। কিভাবে সুনামগঞ্জবাসীর সমস্যার সমাধান করে তাদের আস্থা অর্জন করতে পারি, আইন শৃঙ্খলা আরো ভালো অবস্থানে নিতে পারি এই চেষ্টা করবো। আমি যেভাবে খালি হাতে এসেছি, এভাবে খালি হাতেই ফিরে যেতে চাই। যাবার পর যাতে মানুষ বলে আমি ভালো কাজ করেছিলাম। পেট্রোলিং বাড়িয়ে, তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়ে সুনামগঞ্জের চোরাচালান রুটগুলো নিষ্ক্রিয় করে দেব।
সুনামগঞ্জের তিনটি বর্ডারহাট আন্তঃরাষ্ট্রিয় চোরাকারবারিদের লেনদেনের স্পটে পরিণত হয়েছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সীমান্ত হাট পরিচালনায় প্রশাসনের বিভিন্ন স্তর রয়েছে। তবে এখানে আইনগত ব্যত্যয় ঘটলে আমরা ব্যবস্থা নেব। ভারতীয় নাগরিকদের কেউ ভিসা ও পাসপোর্ট ছাড়া আসলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেব। একইভাবে বালু ও পাথর মহালের ইজারা দেয়ার ক্ষেত্রে প্রশাসন জড়িত। তবে সেখানে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হলে আমরা ব্যবস্থা নেব। সুনামগঞ্জে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো আছে, তবে আরো ভাল করার উদ্যোগ নেব এবং কি কি সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ আছে সেগুলো দূর করে পরিস্থিতির আরো উন্নতি করতে চাই। মাদক, ইভটিটিজিং, কিশোরগ্যাং, জুয়ার আসর এর বিরুদ্ধে আরো কঠোর হবো। তাদেরকে নির্মূল করবো। সুনামগঞ্জকে মাদক, জুয়া, চোরাচালান, ইভটিজিং মুক্ত করতে কাজ করবো। অনলাইন ও আসরভিত্তিক জুয়া নির্মূলে প্রতিটি থানার ওসিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনলাইন জুয়া ও এলাকাভিত্তিক জুয়ার আসর নির্মূল করে দিতে।
সিলেটে প্রতিদিন চোরাচালান সিন্ডিকেটর পণ্য আটক হলেও সুনামগঞ্জে হচ্ছেনা কেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি সবেমাত্র যোগ দিলাম। প্রথমে মাদক ও চোরাচালানের স্পটগুলো চিহ্নিত করবো। সিলেটে চোরাই পণ্য উদ্ধার হলে সুনামগঞ্জেও হবে। সেক্ষেত্রে আমরা পেট্রলিং ঢেলে সাজিয়ে, তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়ে সব চোরালান রুট নিষ্ক্রিয় করে দেব। সুনামগঞ্জ পুলিশ বিভাগ জনগণের পুলিশ হতে চায়, মন্তব্য করে এমএন মোর্শেদ বলেন, জনগণের শান্তি, কল্যাণ ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে হাই।
সুনামগঞ্জ শহরের যানজট সমস্যা নিয়ে পুলিশ সুপার এমএন মোর্শেদ বলেন, ট্রাফিক জ্যাম নিরসনে পৌরসভার মেয়র, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় একটি বাসযোগ্য ট্রাফিকব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পুলিশ কাজ করবে। ট্রাফিক বিভাগের কোনো ত্রুটি থাকলে সেটিও দেখা হবে। রাস্তার উপর কোনো দোকান বসতে দেয়া হবে না। ব্যবসায়ীদের বসার বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করবো।
শিশু অপহরণ বিষয়ে তিনি বলেন, ইদানীংকালে শিশু অপহরণের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব প্রচারিত হচ্ছে। কোনো ধরনের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হতে জেলাবাসীকে আহ্বান জানান তিনি।
ফেইসবুক পেইজ বা ওয়েব পোর্টালে গুজব ছড়ানো হলো আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান পুলিশ সুপার এমএন মোর্শেদ। পাশাপাশি জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাংবাদিকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন নবাগত এই পুলিশ কর্মকর্তা।
মিট দ্যা প্রেসে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ মো. আবু সাঈদ, রাজন কুমার দাস, সাংবাদিক লতিফুর রহমান রাজু, পঙ্কজ দে, শামস শামীম, বিন্দু তালুকদার, হিমাদ্রী শেখ ভদ্র, এআর জুয়েল, দেওয়ান গিয়াস চৌধুরী, শহিদনূর আহমেদ, মোসাইদ রাহাত, সোহানুর রহমান সোহান প্রমুখ।