সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি, ক্রাইম) মোহাম্মদ কামরুল হাসান ও তার স্ত্রী সায়মা বেগমের স্থাবর ও অস্থাবর স¤পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। জ্ঞাত আয়ের বাইরে ১১ কোটি চার লাখ ৩৫ হাজার ৯১৯ টাকার স¤পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এই নির্দেশ দেন। সোমবার (৮ জুলাই) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ বেগম জেবুন্নেছা শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
ক্রোকের আদেশ হওয়া স¤পত্তির মধ্যে উভয়ের মালিকানাধীন স্থাবর স¤পদ আছে মোট ৯ কোটি ৪৪ লাখ ৩৫ হাজার ৯১৯ টাকার এবং অস্থাবর স¤পদ রয়েছে এক কোটি ৯০ লাখ টাকার।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১ এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, মোহাম্মদ কামরুল হাসান ও তার স্ত্রী সায়মা বেগমের স্থাবর ও অস্থাবর স¤পত্তি ক্রোকের আবেদন করা হয় আদালতে। শুনানি শেষে সোমবার আদালত ক্রোকের আদেশ দেন। মঙ্গলবার ক্রোকের আদেশ হাতে পেয়েছি। এখন আদালতের নির্দেশনা মেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দুদকের আইনজীবী কাজী ছনোয়ার আহমেদ লাভলু বলেন, সিএমপির অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ কামরুল হাসান ও তার স্ত্রী সায়মা বেগমের নামে দুদক প্রাথমিক অনুসন্ধানে জ্ঞাত আয়ের বাইরে ১১ কোটি চার লাখ ৩৫ হাজার ৯১৯ টাকার স¤পদ অর্জনের তথ্য পেয়েছে। এসব স¤পদ ক্রোক ও জব্দ করা না গেলে তা হস্তান্তর হয়ে যেতে পারে। পরে রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা সম্ভব হবে না। দুদক কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাদের নামে থাকা বিভিন্ন স¤পত্তির দলিল, ফ্ল্যাট ও কো¤পানির আংশিক শেয়ারসহ স্থাবর ও অস্থাবর স¤পত্তি ক্রোক এবং অবরোধের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এখন থেকে এসব স¤পত্তি দুদক দেখভাল করবেন। পরে এসব স¤পত্তি তদারকির জন্য রিসিভার নিয়োগের আবেদন করা হবে।
দুদক কর্মকর্তা মো. এমরান হোসেনের আদালতে করা আবেদনে বলা হয়, প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিলের পর থেকে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তাদের নামে অসাধু উপায়ে অর্জিত অপরাধলব্ধ স¤পদ অন্যত্র হস্তান্তর/বিক্রি করার চেষ্টা করছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। অপরাধলব্ধ আয়ের মাধ্যমে অর্জিত স¤পদ/স¤পত্তি দ্রুত কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে তা বেহাত হয়ে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা, ২০০৭ (সংশোধনী ২০১৯) এর বিধি ১৮ মোতাবেক বর্ণিত স্থাবর ও অস্থাবর স¤পত্তি ক্রোক/অবরুদ্ধ করা একান্ত প্রয়োজন।
মোহাম্মদ কামরুল হাসান ও তার স্ত্রী সায়মা বেগমের স্থাবর ও অস্থাবর স¤পত্তি নিয়ে দুদক কার্যালয়ে দেওয়া অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, মোহাম্মদ কামরুল হাসান ১৯৮৯ সালে এসআই পদে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। তিনি নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানাধীন মীরওয়ারিশপুর এলাকার মৃত মোহাম্মদ গোলাম কবিরের ছেলে। থাকেন চট্টগ্রাম নগরীর পশ্চিম নাসিরাবাদ এলাকায়।
অনুসন্ধান কালে দুদক কর্মকর্তা কামরুল হাসানের নামে ১২ কোটি ৭২ লাখ ৯২ হাজার ৬৯৫ টাকার স্থাবর স¤পদ এবং এক কোটি ২৩ লাখ ৩৯ হাজার ২১৬ টাকার অস্থাবর স¤পদসহ মোট ১৩ কোটি ৯৬ লাখ ৩১ হাজার ৯১১ টাকার স¤পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়সহ তার মোট অর্জিত স¤পদের পরিমাণ ১৪ কোটি ৬৬ লাখ ৬০ হাজার ১৫২ টাকা। তার অর্জিত স¤পদের চেয়ে তার বৈধ আয়ের উৎস ৯ কোটি ৮৬ লাখ ২৮ হাজার ৬৫ টাকা কম পাওয়া যায়।
একইভাবে তার স্ত্রী সায়মা বেগমের নামে এক কোটি ২৫ লাখ টাকার স্থাবর স¤পদ এবং এক কোটি ৯৯ লাখ ২৮ হাজার ২৪০ টাকার অস্থাবর স¤পদসহ মোট দুই কোটি ৫৩ লাখ ২৪০ টাকার স¤পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। তার পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়সহ তার মোট অর্জিত স¤পদের পরিমাণ দুই কোটি দুই লাখ ৯৯ হাজার ৬২১ টাকা। উক্ত স¤পদ অর্জনের বিপরীতে তার বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয়ের উৎস পাওয়া যায় ৪০ লাখ ১৪ হাজার ৪৩৩ টাকা। এক্ষেত্রে তার অর্জিত স¤পদের চেয়ে তার বৈধ আয়ের উৎস এক কোটি ৬২ লাখ ৮৫ হাজার ১৮৮ টাকা কম পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদসহ পুলিশের বেশ কিছু কর্মকর্তা ও কিছু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্নীতির বিষয়টি সামনে আসায় এই নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনা চলছে। এসব ঘটনার মধ্যে এই অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনারের স¤পত্তি ক্রোক করা হলো। – বাংলা ট্রিবিউন