1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৫১ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

সীমান্তে উজাড় হচ্ছে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৯ জুলাই, ২০২৪

বিশেষ প্রতিনিধি ::
সুনামগঞ্জের সীমান্ত অঞ্চলে বন্যপ্রাণীর বিচরণস্থল বন-জঙ্গল বিলীন হয়ে যাওয়ায় এখন লোকালয়ে এসে হানা দিচ্ছে পাহাড়ি বুনো হাতির দল। এতে স্থানীয় কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। তাদের কৃষি জমি, ঘরবাড়ি ও জানমালেরও ক্ষতি হচ্ছে। বছরের বিভিন্ন সময়েই সুনামগঞ্জের তাহিরপুরসহ জেলার অন্য পাহাড়ি এলাকায় দলবদ্ধ হাতির উৎপাত দেখা যায়। স্থানীয়রা এটাকে পাহাড়ি হাতির উৎপাত হিসেবে দেখলেও প্রাণ ও প্রকৃতি বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবিদরা জানিয়েছেন হাতি বা বন্যপ্রাণী নয় মানুষই হাতিকে উৎপাত করেছে। ভারত ও বাংলাদেশ সীমান্তে উভয় দেশে হাতিদের বিচরণস্থল বন-জঙ্গল বিলীন করে দেওয়ায় হাতির উপদ্রব বেড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সুনামগঞ্জ বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে জেলার ছাতক, দোয়ারাবাজার, সুনামগঞ্জ সদর, বিশ^ম্ভরপুর, তাহিরপুর ও ধর্মপাশায় বনবিভাগের প্রায় ১৮ হাজার একর জঙ্গল রয়েছে। এর বাইরে কান্দা শ্রেণির কিছু প্রাকৃতিক জঙ্গল আছে বিভিন্ন এলাকায়। বিভিন্ন এলাকায় বনবিভাগের জায়গা অনেক প্রভাবশালী দখল করে আছেন। গাছ কেটে গড়ছেন স্থাপনা। এমনকি সরকারিভাবেও বাগান কেটে স্থাপনা ও হাট করা হয়েছে। বাংলাদেশ সীমান্তের পাশাপাশি ভারত সীমান্তেও পাহাড় ও বন জঙ্গল কেটে রাস্তাঘাট ও স্থাপনা তৈরি হচ্ছে। এ কারণে বণ্য প্রাণীরা বাস্তুসংস্থান হারিয়ে জনপদে এসে হানা দিচ্ছে।
জানা গেছে, কয়েক বছর আগে তাহিরপুর লাউড়েরগড় সীমান্তে পাহাড়ি জঙ্গল উজাড় করে সৃষ্টি হয়েছে সীমান্ত বাজার লাউড়েরগড় বর্ডারহাট। এর পাশেই যাদুকাটা নদীর পশ্চিমে বড়গোপটিলায়ও দখল করে স্থাপনা তৈরি হচ্ছে। কাটা হচ্ছে বাগান। সরকারি জমিতে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দিয়েছেন দখলকারীরা। তৈরি করছেন ঘর-বাড়ি। এলাকাবাসী জানিয়েছেন বড়গোপ টিলা (বারেকটিলা) একসময় বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য ছিল। কিন্তু দিনদিন বন্যপ্রাণীর আশ্রয়স্থল বন জঙ্গল কমছে। সরকার বনায়নের জন্য বনবিভাগকে নির্দেশনা দিলেও বন সৃজন করাতো দূরের কথা তাদের উদাসীনতায় স্থানীয় মানুষজন বন-জঙ্গল কেটে সাবাড় করে দিলেও বনবিভাগ ব্যবস্থা নিচ্ছেনা। সম্প্রতি বড়গোপটিলায় পর্যটকদের কথা চিন্তা করে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে রাস্তাঘাট, বসার টোল, বেঞ্চ, পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে নদী থেকে টোলট্যাক্স আদায়ের একাধিক ঘর। যার ফলে বন্যপ্রাণীরা বাস্তুসংস্থান হারিয়ে এখন ঘনঘন উপদ্রব করছে।
স্থানীয়রা জানান, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি ও নভেম্বরে মেঘালয় রাজ্যের গুমাঘাট থেকে সীমান্ত নদী যাদুকাটা হয়ে ৭টি বন্যহাতি বাংলাদেশ সীমান্তে নেমে এসেছিল। হাতিগুলো উত্তর বড়দল ইউনিয়নের বড়গোপ, মাহরাম, আনন্দপুর, কড়ইগড়া গ্রামের কৃষকদের বোরোজমিসহ জঙ্গলের গাছগাছালি নষ্ট করেছিল। হাতির আক্রমণ থেকে বাঁচতে গ্রামবাসী ঘরের সামনে আগুন জ্বালিয়ে রাতে অবস্থান করেন। অনেকে দেশিয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অবস্থান নেন। গত সপ্তাহ থেকে তাহিরপুরের লাউড়েরগড়ে বুনো হাতি চলে আসে। প্রায় এক ডজন হাতি এসে আখ ক্ষেত, কাঁঠাল বাগান, বীজতলাসহ ফসলের ক্ষেত নষ্ট করছে বলে স্থানীয়রা দাবি করলেও বুনো হাতির বিচরণস্থল সরকারি বনবিভাগের জমি বলে জানিয়েছে বনবিভাগ।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা হাওর এরিয়া আপলিফটমেন্ট সোসাইটির (হাউস) নির্বাহী পরিচালক সালেহিন চৌধুরী শুভ বলেন, সুনামগঞ্জ বনবিভাগ তাদের মালিকানাধীন জায়গা ধরে রাখতে পারছেনা। তাদের উদাসীনতায় বনজঙ্গল উজাড় হচ্ছে দিন দিন। নতুন বনায়নও করা হচ্ছেনা। তাই বন্যপ্রাণী বাস্তুচ্যুত হওয়ায় এখন মাঝে-মধ্যে লোকালয়ে চলে আসছে। মানুষ যেটাকে উপদ্রব বলছে সেটা আসলে উপদ্রব নয়, বরং বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল বিনষ্টের কারণেই এই সমস্যা হচ্ছে। তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশ সীমান্তেই নয় ভারত সীমান্তেও উজাড় হচ্ছে বন জঙ্গল।
সিএনআরএসের সংগঠক শাহ কামাল বলেন, সুনামগঞ্জের সীমান্ত এলাকায় এক সময় ঘন বনজঙ্গল ছিল। যেখানে শুধু হাতিই নয় নানাধরনের বন্যপ্রাণী নিরাপদে আশ্রয় নিতো। সেই আবাস্থল দিনদিন উজাড় হচ্ছে। দখল ও স্থাপনার দেখা মিলছে নতুন করে। এমনকি হাটবাজারও হচ্ছে জঙ্গল কেটে। বন্যপ্রাণী বাস্তুসংস্থান হারানোয় এখন হাতির আগমনকে উপদ্রব মনে হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ রেঞ্জ কর্মকর্তা সাদ উদ্দিন বলেন, তাহিরপুর সীমান্তের লাউড়েরগড় এলাকায় পাহাড়ি হাতির উপদ্রব যে স্থানে তা মূলত বনবিভাগেরই জায়গা। হাতি আসার খবর পেয়ে আমাদের লোকজন সরেজমিন গিয়ে স্থানীয়দের হাতির দলকে আক্রমণ না করতে নিষেধ দিয়েছে। তাদের মধ্যে সতর্কতামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছে। বনবিভাগ বন্যপ্রাণীর নিরাপদ আবাসস্থল সুরক্ষার পাশাপাশি বনায়নের কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com