সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) সারা দেশে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গণসংযোগ করার ঘোষণা দিয়েছেন কোটা আন্দোলনকারীরা। বুধবার (১০ জুলাই) থেকে সর্বাত্মক অবরোধ করা হবে বলেও তারা জানিয়েছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী নাহিদ ইসলাম জানান, বুধবারের কর্মসূচি মঙ্গলবার বিকালে অনলাইনে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হবে।
সোমবার (৮ জুলাই) রাত সাড়ে ৮টার দিকে শাহবাগ থেকে দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচির সমাপনী বক্তব্য রাখেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, সারা দেশে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে অনলাইন ও অফলাইনে গণসংযোগ করা হবে।
নাহিদ আরও বলেন, আমরা গত ৫ জুন থেকে আমরা আন্দোলন করে আসছি। আমরা স্মারকলিপি দিয়েছি, সম্ভাব্য সব প্রক্রিয়ায় আমরা আমাদের দাবি জানিয়ে এসেছি। আমরা হুট করেই রাজপথে নামিনি। আমরা আমাদের দাবি জানিয়ে দিয়েছি। এখন বল সরকারের কোর্টে।
কর্মসূচির বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা অর্ধবেলা ব্লকেড করছি। কিন্তু তাতে সীমাবদ্ধ থাকবো না। আমরা বুধবার থেকে সারা দেশে সর্বাত্মক ব্লকেড করার জন্য আগামীকাল (মঙ্গলবার) সারা দেশের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে অনলাইন ও অফলাইনে গণসংযোগ করবো। বুধবারের কর্মসূচি অনলাইনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।
আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক শারজিস আলম বলেন, যারা ছাত্র সমাজের সঙ্গে বৈষম্য করতে চায় তাদের মনে করিয়ে দিতে চাই, ছাত্র সমাজ ঘুমিয়ে পড়েনি। আমরা ছাত্র সমাজ মনে করি একাত্তরের পর ২০২৪ সালে এই রাষ্ট্রের আরেকবার সংস্কার প্রয়োজন। এ আন্দোলন ৭ দিনের নয়। একাত্তর ৭ দিনে আসেনি। আজ দেশের প্রায় ৪০টি জেলায় ব্লকেড হয়ে গেছে। কীভাবে ৬৪ জেলায় ব্লকেড করতে হয় তা আমরা দেখিয়ে দিতে চাই। আমরা আপনাদের ৩ দিনের আল্টিমেটাম দিচ্ছি। আমাদের দাবি পূরণে সময় লাগবে, কারণ তার জন্য কমিশন গঠন করতে হবে। কিন্তু তার জন্য যা ব্যবস্থা নেওয়ার এই তিন দিনের মধ্যেই নিন।
আরেক সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমরা শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা গতকাল আমাদের একটা দফা দাবি করেছি। আপনাদের আমাদের ধৈর্য্যের পরীক্ষা নেবেন না। এর পরিণাম ভালো হবে না। আপনারা দায়িত্বশীলরা সহজ বিষয়টাকে ঘোলা করছেন। আমরা আপনাদের ওপর ভরসা হারাই, আমরা আপনাদের ওপর আস্থা হারাই। আমরা ক্লাসে ফিরতে চাই। আমরা পরীক্ষায় বসতে চাই। আমাদের কোনও ক্ষতি হলে তার দায়ভার আপনাদের নিতে হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে সরাসরি নিয়োগে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি তুলে দিয়ে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ওই প্রজ্ঞাপনকে চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাত সদস্য ২০২১ সালে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। এই রিটের চূড়ান্ত শুনানিতে গত ৫ জুন সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এরপর ৯ জুন হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। গত ৪ জুলাই প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় আপাতত বহাল রাখার নির্দেশ দেন। আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে গত ২ জুলাই থেকে আন্দোলনে নামের শিক্ষার্থীরা। ৭ জুলাই থেকে তারা বিভিন্ন সড়ক অবরোধের ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করছেন।