সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
আবেদ আলীর পরিবার অসচ্ছল হওয়ায় মাত্র আট বছর বয়সে জীবিকার তাগিদে পাড়ি জমিয়েছিলেন রাজধানী ঢাকায়। কখনও কুলির কাজ আবার কখনও ছোট ছোট কর্ম করতেন। দিন কেটেছে নিদারুণ কষ্টে। এরপর শেখেন গাড়ি চালানো। চাকরি নেন সরকারি কর্ম কমিশনে (পিএসসি)। দিনে দিনে জড়িয়ে পড়েন বিসিএসসহ পিএসসির প্রশ্নফাঁস চক্রের সঙ্গে। আর ফিরে তাকাতে হয়নি পেছনে। অর্জন করেছেন বিপুল স¤পদ। অর্থকড়ির সঙ্গে সমানতালে এসেছে ক্ষমতাও। চেয়েছিলেন মাদারীপুরের ডাসার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হতে। দীর্ঘদিন থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের জন্য প্রচার প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছেন।
আবেদ আলী মাদারীপুর জেলার ডাসার উপজেলার পশ্চিম বোতলা গ্রামের সৈয়দ আব্দুর রহমান মীরের সন্তান। চার ভাইবোনের মধ্যে আবেদ আলী মেজ।
রহস্যঘেরা এই গাড়িচালক গ্রামের বাড়ি এসে নেমে পড়েন ডাসার উপজেলা নির্বাচনের প্রচারণায়। কোটি টাকার গাড়িতে চড়ে চালিয়েছেন গণসংযোগও। সঙ্গে থাকছে তার ছেলে ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম। বাবা-ছেলে এলাকায় দান খয়রাতও করেছে দুই হাত ভরে।
স্থানীয় লোকজনের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, আবেদ আলী মীর বংশের ছেলে। টাকা পয়সা হওয়া মীর বাদ দিয়ে সৈয়দ বংশের পরিচয় দিতেন। পরে সবাই সৈয়দ আবেদ আলী বলে তাকে চেনেন। তবে তার উত্থানের গল্প সিনেমাকেও হার মানাবে।
সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে উঠে আসে আবেদ আলীর ভয়ংকর তথ্য। প্রায় একযুগ আগে থেকে বিপিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁসের চক্রের সঙ্গে জড়িত এই পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক এই গাড়ি চালক। এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে, তিনি তার নিজ নামে এই গ্রামে গড়ে তুলেছে বিলাসবহুল বাড়ি ও মসজিদ। অবৈধ টাকার মালিক হয়ে পরিবার নিয়ে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে রয়েছে ফ্লাটসহ একাধিক ভবন। নিজ বাড়ির পাশেই সরকারি জমি দখল করে তৈরি করেছেন গরুর ফার্ম। গৌরনদীর খাঞ্জাপুরেও রয়েছে তার একটি বাড়ি। সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা তৈরি করেছেন সান মেরিন নামে বিলাসবহুল হোটেল। এ ছাড়া পরিবারের সদস্যরা ব্যবহার করেন একাধিক দামি বিলাসবহুল গাড়ি। নামে বেনামে রয়েছে কয়েক কোটি টাকার জমি।
একজন গাড়িচালক এমন বিত্ত বৈভবের মালিক হওয়ায় তার স¤পর্কে জানার কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে।
আবেদ আলী পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক। কিন্তু এলাকার মানুষ জানতেনই না বিষয়টি। গেলো কোরবানির ঈদে দামি গাড়িতে চড়ে ১০০ জনকে এক কেজি করে মাংস দিয়েছেন। সেই ভিডিও শেয়ার করেন নিজের ফেসবুকে। আবেদ আলীর ছেলে সিয়াম শুধু একাধিক দামি গাড়ি ব্যবহার করেন। সবই দামি, ঝকঝকে। পড়েছেন ভারতের শিলং। তারপর দেশের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়াশোনা করেছেন। তিনি ডাসার উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। সম্প্রতি দেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে বিসিএসসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের তথ্য। বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (বিপিএসসি) ছয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। সেই অভিযুক্ত কর্মচারীদের একজন পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী।
তবে এসব বিষয়ে জানতে আবেদ আলীর ব্যবহৃত নম্বর ও তার ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়ামের নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি। তাদের গ্রামের বাড়িও তালাবদ্ধ।
এদিকে, সৈয়দ আবেদ আলীর ফেসবুক পেজে নিজের একটি হোটেলের তথ্য তুলে ধরেছেন তিনি নিজেই। ১৮ মে এক পোস্টে তিনি লেখেন, আমাদের নতুন হোটেল এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলাম আজ। হোটেল সান মেরিনা, কুয়াকাটা। এই হোটেলের কাজে গিয়ে কুয়াকাটার সৈকতে তিনি নামাজ পড়ছিলেন। সেই নামাজের ছবি ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম ফেসবুকে শেয়ার করেছিলেন। সেটি এখন রীতিমতো ভাইরাল।
অনুসন্ধানী সাংবাদিক ইমরান এ বিষয়ে নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, দীর্ঘ অনুসন্ধানে বিপিএসসিকেন্দ্রীক এই চক্রটিকে চিহ্নিত করেছি আমরা, যারা এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বিসিএসের প্রিলি, রিটেন, ভাইভাসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সকল সরকারি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে। সর্বশেষ ৪৬তম বিসিএসও বাদ যায়নি এদের খপ্পর থেকে। একটি দুটি তো নয়, ৩৩তম বিসিএস থেকে প্রায় ৩০টি ক্যাডার-ননক্যাডাার পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের প্রমাণ পেয়েছি আমরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, আবেদ আলীর পরিবারের সবাই ইউরোপের ভিসা করে রেখেছেন আগেই। যেকোনও সময় দেশ ছেড়ে চলে যেতে পারেন।
সৈয়দ রাকিব নামে ডাসারের এক যুবক বলেন, এলাকায় সিনেমার মতোই তার উত্থান। চলেন কোটি টাকার গাড়িতে। ছেলেকেও কিনে দিয়েছেন দামি গাড়ি। এলাকায় দান খয়রাতও করেন তিনি। উপজেলার নির্বাচন করার জন্য তিনি নিয়মিত গণসংযোগ করেছেন। তার আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার কাহিনি এবার বেরিয়ে এসেছে।
এ বিষয়ে মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ বলেন, যারা অস্বাভাবিক স¤পদ অর্জন করেছেন তাদের নিয়ে সচেতন মহলের প্রশ্ন তোলা উচিত। সরকারের উচিত এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। প্রশ্ন ফাঁস করে এরা বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণœ করার কারণেও কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত।