সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
আন্দোলন-কর্মসূচি ঘিরে বিএনপিতে কোন্দল-বিভক্তি সৃষ্টি হয়েছে। ওই সময়ে নিষ্ক্রিয় থাকা নেতারা সম্প্রতি সরব হচ্ছেন। সক্রিয় নেতারা অভিযোগ করছেন-দল পুনর্গঠনের সময় নিষ্ক্রিয়রা সামনে আসছেন। এতদিন তারা আড়ালে ছিলেন। যখনই কমিটি দেওয়া শুরু হয়েছে তখন তারা তৎপর হয়েছেন। এ নিয়ে কার্যত দুই ভাগ হয়েছেন সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় নেতারা।
সক্রিয়রা ইতিমধ্যে নিষ্ক্রিয়দের তালিকা পাঠাচ্ছেন হাইকমান্ডসহ দলের দায়িত্বশীল নেতাদের কাছে। শুধু কেন্দ্র নয়, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পূর্ব আন্দোলন ঘিরেও তৃণমূলে বিরোধ তৈরি হয়েছে। যার রেশ দেখা গেছে সর্বশেষ গত সোমবার। এদিন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে সমাবেশ করেছে ফরিদপুর জেলা ও মহানগর বিএনপি।
সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবরের ও পরবর্তী টানা আন্দোলন পর্যালোচনা করে দলে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে বিএনপি। কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদে রদবদল, কমিটি বাতিল, পদোন্নতি ও পদাবনতি হয়েছে দুই দফায়। অঙ্গ সংগঠনের কমিটিও বাতিল করা হয়েছে। সম্প্রতি দেওয়া হয়েছে ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসে ঢাকাসহ চারটি গুরুত্বপূর্ণ মহানগরের কমিটি বাতিল করে দেওয়া। এসব ইউনিটে নতুন কমিটি দেওয়া নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এ নিয়ে দলের ভেতর চাপা অস্বস্তি এবং ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন পদে রদবদল নিয়ে দলে নানা প্রশ্ন উঠেছে। সক্রিয়রা বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠছে। দলে বিভক্তি তৈরির শঙ্কাও রয়েছে। সামনে কমিটি দেওয়া হবে খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে সক্রিয়দের দেখে। যারা চলমান আন্দোলনে নিজেকে প্রমাণ করতে পারবেন তারা সামনের সারিতে চলে আসবেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাবেক একজন যুগ্ম আহবায়ক গণমাধ্যমকে বলেন, মহানগরের অনেক নেতাই ২৮ অক্টোবর থেকে ৭ জানুয়ারি নির্বাচন পর্যন্ত রাজনীতির ময়দানে ছিলেন না। যার কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সামনের নেতৃত্ব আসা উচিত সক্রিয়দের হাতে। নিষ্ক্রিয়দের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া উচিত। তারা বিপদের সময় দলের সঙ্গে না থেকে প্রতারণা করছে প্রতিবার। নিষ্ক্রিয়দের নেতৃত্ব মানতে আমরা রাজি নই। আমরা নিষ্ক্রিয়দের তালিকা যথাযথ প্রমাণসহ হাইকমান্ডের কাছে পাঠিয়েছি।
আরেকজন যুগ্ম আহ্বায়ক বলেন, পদায়ন এবং নতুন কমিটির নেতৃত্ব নির্ধারণ নিয়ে দলের মধ্যে দুটি সিন্ডিকেট সক্রিয়। একটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলটির কয়েক প্রভাবশালী নেতা। অন্যদিকে আছেন তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠজন বলে কয়েক তরুণ নেতা। সিন্ডিকেটের কারণে মাঠে দলের অবস্থা করুণ।
ফরিদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সমর্থিত অংশ ফরিদপুর প্রেস ক্লাব চত্বরে মুজিব সড়কের পাশে সমাবেশ করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী। অন্যদিকে জেলা বিএনপির কয়েকজন যুগ্ম আহ্বায়ক সমর্থিত অংশ শহরের কাঠপট্টি এলাকায় অবস্থিত দলীয় কার্যালয়ের নিচে শাহ ফরিদ সড়কে অভিন্ন দাবিতে সমাবেশ করে। অবশ্য এ সমাবেশে কেন্দ্রীয় কোনো নেতাকে দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে বিএনপির সাংগঠনিক স¤পাদক শ্যামা ওবায়েদ ও কৃষকদলের সাধারণ স¤পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের মধ্যে বিভেদ প্রকট হয়। তারা একই এলাকার হওয়ায় তাদের মধ্যে আগে থেকেই দ্বন্দ্ব কোন্দল চলে আসছে। রাজনৈতিকভাবে এই দুই নেতার আলাদা বলয় অর্থাৎ পক্ষের নেতাকর্মী রয়েছেন। বাবুল ও শ্যামা ওবায়েদের অনুসারীরা গত সোমবার আলাদাভাবে সমাবেশ করেন।
শুধু ফরিদপুর জেলায়ই নয়, এমন বিভেদের ঘটনা সামনে আসছে দেশের বিভিন্ন জেলা ও মহানগরে। কর্মসূচি ঘিরে মাঠে বিভেদের চিত্র উঠে আসছে। এ নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও আলোচনা হয়েছে। হাইকমান্ড কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব দিয়েছেন জেলা সফল করে তৃণমূলের চিত্র তুলে ধরতে।
উত্তরের জেলা সিরাজগঞ্জ বিএনপির একজন নেতা বলেন, তাদের জেলার সভাপতি রুমানা মাহমুদ ও সাধারণ স¤পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চুর মোবাইল নাম্বার বন্ধ ছিল ২৮ অক্টোবরের পর থেকে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তাদের দুঃসময়ে কাছে পাননি। কমিটির অনেক নেতাই নিষ্ক্রিয় ছিলেন। এখন তারা আবারও নতুন কমিটিতে পদে থাকতে চান। তিনি জানান, রুমানা মাহমুদ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর স্ত্রী। টুকু দেশের বাইরে আছেন দীর্ঘদিন ধরে। বিদেশ থেকে তিনি সিরাজগঞ্জের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছেন। নিজের বলয়ের লোকজন দিয়ে কমিটি দিতে চান আবারও।
কয়েক দিন আগে নয়াপল্টনের বিএনপির পার্টি অফিসের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পদবঞ্চিত শতাধিক নেতাকর্মী। দ্রুত তাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান তারা। ছাত্রদলের সদ্য ঘোষিত ২৬০ সদস্য বিশিষ্ট ঢাউস কমিটির অনিয়ম ও অসঙ্গতিগুলো তুলে ধারার পাশাপাশি দীর্ঘদিন বঞ্চিত বিক্ষুব্ধ ছাত্রদল নেতৃবৃন্দ তাদের মনের ক্ষোভ ও হতাশা আবেগ এবং নির্যাতন ও ত্যাগের কথাও তুলে ধরেন। তারা গণমাধ্যমের কাছে নিষ্ক্রিয় ৪৩ জনের একটি তালিকা তুলে ধরেন। তাদের অভিযোগ-২৮ অক্টোবরের পর থেকে তাদের মাঠে দেখা যায়নি। তারপরও এই ৪৩ জন ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটির বিভিন্ন পদ পেয়েছে।
যদিও ছাত্রদলের সাধারণ স¤পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই কমিটি দেওয়া হয়েছে। এখানে ত্যাগী ও মাঠের কর্মীদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। আর চাইলেও সবাইকে পদ দেওয়া সম্ভব নয়। কমিটিতে এই সীমাবদ্ধতা তো সব সময় থাকে।
নাম প্রকাশে বিএনপির একজন যুগ্ম মহাসচিব বলেন, সব দলেই নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকে। দলের বিভেদ থাকে। কিন্তু বিএনপির এখন এসব করার সময় না। আন্দোলনে যেখানে আমরা ব্যর্থ সেখানে কোন্দলে সফল।
নব নিযুক্ত যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, এই সময়ে এসে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দুই ভাগে সমাবেশ করা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। এই দলাদলি পরিহার করতে হবে। অনেক সময় তৃণমূল নেতাকর্মীরা নানা কারণে আমাদের কথার বাইরে চলে যান। তিনি বলেন, যারা মাঠে ছিলেন; মাঠে ছিলেন না-এটার মূল্যায়ন কমিটিতে হবে। নিষ্ক্রিয় স্বাভাবিকভাবে সাইডলাইনে চলে যাবে। তবে একটা মূল্যায়ন তো থাকবে।