সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
সংসদ সদস্যদের নিজ নিজ এলাকায় হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও তো দেশেই চিকিৎসা নেন। আপনারা মাননীয় সংসদ সদস্যরা যার যার এলাকায় স্থানীয় হাসপাতালে গিয়ে যদি নিয়মিত চেকআপ করান, চিকিৎসা নেন, তাহলে হাসপাতালের চিত্র পাল্টে যাবে। হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার মান উন্নত হবে। দেশের চিকিৎসার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরে আসবে। মানুষ চিকিৎসার জন্য আর বিদেশে যাবে না।
শনিবার (৬ জুলাই) সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, রোগী যেন উপযুক্ত চিকিৎসা পায় সেটি দেখা যেমন আমার দায়িত্ব, তেমনি ডাক্তাররাও যেন চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে সুরক্ষা পান, সেটি দেখাও আমার দায়িত্ব। রোগী ও ডাক্তার উভয়কেই সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্বটা আমার। একজন চিকিৎসকের জন্য আমি সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করতে চাই। মহিলা ডাক্তারদের রাতে ডিউটি করার সময় যেন কোনো ধরনের অসুবিধা না হয়, তার আমি জন্য কাজ করছি।
চিকিৎসকদের যেখানে পদায়ন করা হবে, সেখানে কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে একটা অনুশাসন দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যার যেখানে পোস্টিং, সেখানেই তাকে চাকরি করতে হবে। কেউ যদি যেতে না চায় বা আসতে না চায়, তাকে বলবে চাকরি ছেড়ে দিতে, এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছেন। সুতরাং যাকে যেখানে পোস্টিং দেওয়া হবে সেখানে তাকে যেতেই হবে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে গাইনি চিকিৎসকরা ঢাকায় চলে যেতে চান, এটি দুঃখজনক। সবাই যদি ঢাকায় যেতে চায় তাহলে চট্টগ্রাম চলবে কেমন করে?
দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল পরিদর্শন প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, আমি ঠিক করেছি, ঢাকায় দুইদিনের বেশি থাকব না। সারাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা আমি নিজে গিয়ে দেখব। সাংবাদিক ভাইয়েরা লিখেন, আমি না কি অভিযান চালাই। আমি অভিযান চালাই না, পরিদর্শন করি। অভিযান তো হয় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে, আসামিদের বিরুদ্ধে। আমি কার বিরুদ্ধে অভিযান চালাব? প্রত্যেকটা রোগী যেন সুচিকিৎসা পাচ্ছে কি না, ডাক্তাররা কিভাবে কাজ করছে, তারা সুরক্ষিত আছে কি না সেটা দেখার জন্য আমি পরিদর্শনে যাই।
হাসপাতালে জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি গতকাল চট্টগ্রামে এসে একটা হাসপাতালে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে আমার মন খারাপ হয়ে গেছে। একটা হাসপাতালে যদি ইমার্জেন্সি ডাক্তার না থাকে, অক্সিজেন সিলিন্ডার খালি থাকে তাহলে তারা রোগীকে কী সেবা দেবে? প্রাইভেট ক্লিনিক অবশ্যই চলবে, আমি তার বিরুদ্ধে নই। কিন্তু তাদের সব নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এমআরআই মেশিন নষ্ট, সিটি স্ক্যান নষ্ট- এটা শুনতেও আমার কাছে খারাপ লাগে। এগুলো জরুরি ভিত্তিতে ঠিক করার জন্য যা যা করা দরকার, আমি করব। কিছুদিন আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে। আমি অনেক কষ্টে সময় বের করে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে আমরা স্বাস্থ্যখাত নিয়ে প্রেজেন্টেশন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দেখিয়েছিলাম। স্বাস্থ্যখাত নিয়ে সেখানে বিস্তারিত খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। আমরা যে প্রসিডিওর, মডেল তৈরি করেছি সেটি অনুযায়ী কাজ করতে পারলে স্বাস্থ্যখাতে ভালো কিছু হবে।
মতবিনিময়ের আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী চমেক হাসপাতালের ইউরোলজি, পেডিয়াট্রিক, শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগ এবং কাজ শুরুর জন্য অপেক্ষমাণ বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের জন্য নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করেন।
সভায় বার্ন ইউনিট প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেছি। এটি যেহেতু একনেকে পাস হয়ে গেছে, আর কোনো সমস্যা নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চীন সফরে যাচ্ছেন, তিনি দেশে ফিরলে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কাজটা করানোর ইচ্ছে আছে আমার। এ মাসেই কিংবা যত দ্রুত সম্ভব এটা করানোর চেষ্টা করব। চীনের প্রতিশ্রুতি হচ্ছে, দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে তারা ভবন নির্মাণের কাজটা শেষ করবে। জনবল-যন্ত্রপাতি নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমি যেভাবে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউট একদিনে পুরোপুরি চালু করতে পেরেছিলাম, এক্ষেত্রেও আমার টার্গেট সেটিই।