স্টাফ রিপোর্টার ::
সুনামগঞ্জে দ্বিতীয় দফা বন্যার পানি নদ-নদী থেকে ধীরে নামছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন ভারতের আসামের ব্রহ্মপুত্র উপত্যাকার বন্যার পানি বাংলাদেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চল দিয়ে মেঘনায় নামার কারণে সুরমা ও কুশিয়ারার পানি মেঘনায় যেতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে সুরমা ও কুশিয়ারার পানি ধীরে নামছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুনামগঞ্জ পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি ৭.৬৯ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছিল। শুক্রবার এই সময়ে একই নদীর পানি মাত্র ১ সেন্টিমিটার কমে ৬.৬৮ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। একই সময়ে পুরাতন সুরমায় গত বৃহস্পতিবার যেখানে পানির উচ্চতা ছিল ৬.৬৩ সেখানে শুক্রবার এই সময়ে মাত্র তিন সেন্টিমিটার কমে ৬.৬০ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জের সুরমা নদী দিয়েই ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জির বৃষ্টিপাত নেমে মেঘনায় গিয়ে পড়ে।
পানি ধীরে নামার কারণ হিসেবে সুনামগঞ্জ হাওর উন্নয়ন সংসদ (হাউস)-এর নির্বাহী পরিচালক সালেহিন চৌধুরী শুভ বলেন, ভারতের আসাম রাজ্যে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় ভয়াবহ বন্যা হচ্ছে। এই বন্যার পানি দেশের উত্তর-মধ্যাঞ্চল দিয়ে মেঘনায় এসে নামছে। যার ফলে সুরমা-কুশিয়ারা বেসিনের পানি মেঘনায় যেতে পারছেনা। এ কারণেই পানি বিলম্বে নামছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, সারাদেশেই এখন বন্যা হচ্ছে। উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের বন্যার পানিও মেঘনায় নামছে। যার ফলে আমাদের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি মেঘনায় গিয়ে পতিত হতে পারছেনা। এ কারণে সুরমা ও কুশিয়ারার পানি বিলম্বে নামছে। তবে আগামী ৭ জুলাইয়ের পর অবস্থার উন্নতি হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে, বন্যার পানিতে প্লাবিত থাকায় সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়কে এখনো সরাসরি যান চলাচল বন্ধ আছে। পানি নেমে যাওয়ায় সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর, সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়ক দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। তবে এখনো তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর, সদর উপজেলার নিচু এলাকা মানুষের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাটে পানি আছে। মানুষজন নৌকা নিয়ে চলাফেরা করছেন। এতে ভোগান্তি বেড়েছে।
সুনামগঞ্জে গত ১৬ জুন থেকে বন্যা দেখা দেয়। এক পর্যায়ে পুরো জেলা বন্যাকবলতি হয়ে পড়ে। প্লাবিত হয় জেলার এক হাজার ১৮টি গ্রাম। আট লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েন। অসংখ্য ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়। মানুষের বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে আশ্রয় নেন ২৫ হাজার পরিবার। ২৩ জুনের পর থেকে নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে মানুষ বাড়িঘরে ফেরেন। মানুষ স্বস্তি ফেলার আগেই আবার বন্যা পরিস্থিতির অবনতির শঙ্কা দেখা দেয়।