বিশেষ প্রতিনিধি ::
বন্যায় সুনামগঞ্জের ৮ হাজার ২১টি পুকুর খামারের মাছ ভেসে গেছে। এতে প্রায় ৭২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে চাষীদের। মাছের পাশাপাশি পুকুর খামারের অবকাঠামোরও ক্ষতি হয়েছে। বিশাল ক্ষয়-ক্ষতির কারণে চোখে অন্ধকার দেখছেন খামারিরা। ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য তারা সরকারি সহায়তা ও সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ জুন থেকে ২০ জুনের মধ্যে সুনামগঞ্জে পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণে বন্যা হয়। এতে ৮৩টি ইউনিয়ন প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন উপজেলার ১ হাজার ২২৫ হেক্টর আয়তনের প্রায় ৮ হাজার পুকুর ডুবে যায়। এসব পুকুরে ফিন ফিশ, পোনাসহ বিভিন্ন ধরনের মাছ ভেসে যায়। এর পাশাপাশি পুকুর ও খামারের অবকাঠামোগত ক্ষয়-ক্ষতিও হয়।
সূত্র মতে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ৯ ইউনিয়নের ৯৫০ পুকুর, দিরাইয়ের ১০টি ইউনিয়নের ২২০টি পুকুর, ছাতকের ১০ ইউনিয়নের ৯৮০টি পুকুর, ধর্মপাশার ৬ ইউনিয়নের ৩৪৬টি পুকুর, জগন্নাথপুরের ৯ ইউনিয়নের ৯০০টি পুকুর, বিশ্বম্ভরপুরের ৫ ইউনিয়নের ৮৬০টি পুকুর, তাহিরপুরের ৭ ইউনিয়নের ৩৪০টি পুকুর, দোয়ারাবাজারের ৯ ইউনিয়নের ১হাজার ৬০০ পুকুর, শাল্লার ৪ ইউনিয়নের ১৫০ পুকুর, জামালগঞ্জের ৬ ইউনিয়নের ৫৮০ পুকুর এবং শান্তিগঞ্জের ৮ ইউনিয়নের ১ হাজার ৯৫টি পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব পুকুরে ভেসে যাওয়া মাছ ও পোনার বাজারমূল্য ৭২ কোটি ১২ লক্ষ টাকা।
মৎস্যচাষী রফিকুল ইসলাম কালা বলেন, আমি ব্যাংক থেকে সুদে ঋণ নিয়ে দুটি পুকুরে মাছ চাষ করেছিলাম। ঈদের পরদিনই আমার দুটি পুকুর ডুবে যায়। ভেসে যায় সব মাছ। এখন কিভাবে কিস্তি পরিশোধ করবো আর পুকুর মালিকের ভাড়া পরিশোধ করবো এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
কালিপুর গ্রামের মৎস্যচাষী সুনুর আলী বলেন, আমার এখন পথে বসার অবস্থা। দুইটা পুকুরের সব মাছ ভেসে গেছে। প্রায় ১০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হইছে। এই ক্ষতি পোষাইমু কি দিয়া।
ইব্রাহিমপুর গ্রামের খামারি মুসলিম উদ্দিন বলেন, আমার ৩ পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ২২ এর বন্যায় আমার প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হইছিল। এবার পাহাড়ি ঢল দেখে কয়েকটি পুকুরের মাছ আগেই তুলে ফেলছিলাম। দুটির মাছ তুলতে পারিনি। ওই দুই পুকুরের প্রায় ২০ লক্ষ টাকার মাছ ভেসে গেছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শামসুল করিম বলেন, বন্যায় জেলার ৮৩ টি ইউনিয়নের হাজারো খামার ও চাষীদের প্রায় ৮ হাজার ২১টি পুকুর প্লাবিত হয়েছিল। মাছ ভেসে যাওয়ার সঙ্গে পুকুরের অবকাঠামোরও ক্ষতি হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত খামারি ও চাষীদের তালিকা করছি। সরকারি সহায়তা পেলে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।