স্টাফ রিপোর্টার ::
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে চিকিৎসা দিচ্ছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী (আয়া) ও কেয়ার বাংলাদেশ পিসিএসবি একজন কর্মী। দীর্ঘদিন ধরে এই প্রতিষ্ঠানটিতে জনবল না থাকায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এনিয়ে সচেতনমহলে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সরেজমিনে ফতেপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জনবল সংকট থাকার কারণে চিকিৎসা দিচ্ছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী (আয়া) মনি তালুকদার ও কেয়ার বাংলাদেশ পিসিএসবি (প্রাইভেট স্কিল ভাট এটেন্ডেট) মোছা. শালিমা আক্তার। এসময় কথা হয় তাদের সাথে।
পরিচ্ছন্নতা কর্মী মনি তালুকদার জানান, আমি দ্বিতীয় তলায় পরিবার নিয়ে বসবাস করছি। স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি দেখাশোনা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখার পাশাপাশি ডাক্তার ভিজিটর না থাকায় যতটুকু পারি লোকজনকে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি। আপনি কিভাবে চিকিৎসা দেন আপনারা তো আর ডাক্তার না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, অতিরিক্ত দায়িত্ব থাকা ভিজিটরের সাথে কথা বলে চিকিৎসা দেই।
একইভাবে শালিমা আক্তার জানান, বাংলাদেশে কেয়ার থেকে ডেলিভারি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তিনি। সেই প্রশিক্ষণ তিনি এখানে ভিজিটর না থাকায় কাজে লাগাচ্ছেন।
এমন পরিস্থিতিতে সচেতনমহল সুচিকিৎসা সেবা ও চিকিৎসার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অথচ এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একজন সেকমো (সাব এসিটেন্ট মেডিকেল অফিসার), ভিজিটর ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী (আয়া) পদ রয়েছে। কিন্তু আয়া ছাড়া অন্য পদগুলোতে কেউ নেই।
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রনজিত চৌধুরী রাজন ও স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০১১ সালে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের পাশেই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডে ৪৮টি গ্রামে ৫০ হাজার মানুষ বসবাস করেন। তাদের চিকিৎসার জন্য এই একমাত্র আশ্রয়স্থল এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। কিন্তু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনো চিকিৎসক না থাকায় চরম দুর্ভোগে রয়েছেন মানুষজন। সামান্য দুর্ঘটনা, কাটাছেঁড়া ও ডেলিভারির জন্য যেতে হয় উপজেলা কিংবা জেলা সদরে আর না হয় পার্শ্ববর্তী জামালগঞ্জ উপজেলা সদর হাসপাতালে আর না হয় স্থানীয় ফার্মেসি অথবা গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছে।
চিকিৎসা সেবা নিতে আসা সুপ্রভা দাস, মালতি রানী দাস, সুরবালা দাস জানান, আমরা ভাটি এলাকার মানুষ সারা বছরই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকি। বর্ষায় নৌকায় চলাচল করতে হয়। ডাক্তার, ভিজিটর না থাকায় আমাদের ভোগান্তির শেষ নেই। পরিচ্ছন্নতা কর্মী (আয়া) দিয়ে কি চিকিৎসা হয়? সুচিকিৎসা তো পাই না, ডেলিভারি করানো হয় না।
ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মনতোষ দাশ বলেন, চিকিৎসা দেয়ার জন্য ডাক্তার ও ভিজিটর না থাকে, তাহলে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবন দিয়ে কি হবে। মানুষের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে আর সুচিকিৎসার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এই দাবি করছি।
ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ জানান, প্রতিদিন বিভিন্ন গ্রামের শিশু, গর্ভবতী নারী ও বৃদ্ধ মানুষ চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। কিন্তু চিকিৎসক ও ভিজিটর না থাকায় সুচিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। একজন ভিজিটর না থাকায় এখানে ডেলিভারি যেমন হচ্ছে না তেমনি ডাক্তার না থাকায় সুচিকিৎসা পাচ্ছেন না। পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ বাদাঘাট ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা ভিজিটরের কাছে যেতে হয় গর্ভবতী মায়েদের। সেখানে তাদের কোনো দিন পাওয়া যায় আবার কোন দিন দেখা মিলে না। এতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়।
জনবল সংকটের কারনে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে জনবল দেয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান। তবে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন বলে জানান। আর পরিচ্ছন্নতাকর্মী চিকিৎসা দিচ্ছেন বিষয়টি জানা নেই।