স্টাফ রিপোর্টার ::
দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি বেহাল। ইট বেরিয়ে আছে। সৃষ্টি হয়েছে বড়ো বড়ো গর্ত। ছিন্নভিন্ন সড়ক যাতায়াতে নাভিশ্বাস উঠে। ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যাসহ এবারের বন্যায় আরো নষ্ট করে দিয়ে গেছে জনগুরুত্বপূর্ণ ও সরকারিভাবে গুরুত্বপূর্ণ জেলা সমাজসেবা ও পাসপোর্ট অফিসের সড়কটি। পুরো রাস্তাটিই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি নিয়ে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় গত রবিবার আলোচনা হয়েছে। অবিলম্বে জনস্বার্থে রাস্তাটি দ্রুত সংস্কার করার দাবি জানিয়েছেন সরকারি কর্মকর্তারা।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদ কার্যালয়ের পিছনের গেইট থেকে বাংলাদেশ এগ্রিকালচার করপোরেশন (বিএডিসি) সারগোডাউন পর্যন্ত ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যরে প্রায় ৩০০ গজ রাস্তা রয়েছে। একসময় কেবল বিএডিসি সার ও বীজবাহী ট্রাক পরিবহন হতো সড়ক দিয়ে। কার্যালয় তৈরির সময় বিএডিসি নিজেদের যোগাযোগের জন্য জায়গা অধিগ্রহণ করে সড়কটি নির্মাণ করে। নির্মাণের পর আর কখনো সড়কটি সংস্কার হয়নি। প্রতিনিয়ত সড়কটিতে যানবাহন ও জনচলাচল বেড়েছে। প্রায় ৬ বছর আগে এই সড়কের শেষ প্রান্তে সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, দুই বছর আগে ৬ তলাবিশিষ্ট জেলা সমাজসেবা ভবন এবং ত্রাণভা-ার নির্মিত হয়েছে। প্রতিদিনই এই সড়কে শত শত গাড়ি ও হাজারো মানুষ জরুরি প্রয়োজনে যাতায়াত করেন। বিশেষ করে সমাজসেবা ভবনে প্রতিদিন শতাধিক প্রতিবন্ধী, জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীরা থেরাপি নিতে আসেন সমাজসেবা ভবনের নিচতলায় অবস্থিত প্রতিবন্ধী থেরাপি সেন্টারে। কিন্তু ভাঙাচোরা রাস্তায় যানবাহন নিয়ে এসে তারা উল্টো অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ বিষয়টি গত বছর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক, জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা ও জেলা সমাজসেবা অফিসার উন্নয়ন সমন্বয়সভায় বিষয়টি উত্থাপন করেন। রাস্তাটি বিএডিসির মালিকানাধীন থাকায় পৌরসভা, এলজিইডি, সড়ক বিভাগের সংশ্লিষ্টরা সংস্কার করার সুযোগ নেই বলে জানান। তখন সভার সভাপতি সাবেক জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী জেলা পরিষদের সংশ্লিষ্টদের জনস্বার্থে সড়কটি সংস্কার করার অনুরোধ জানালে কর্তৃপক্ষ সভায় সড়কটি সংস্কার করার আশ^াস দেন। এরপরেই জেলা পরিষদ তার কার্যালয়ের সামন থেকে পিছনের গেইট পর্যন্ত প্রায় ১০০ গজ রাস্তা সংস্কার করে। কিন্তু পিছনের গেইট থেকে পাসপোর্ট অফিস পর্যন্ত সড়কটি আর সংস্কার করা হয়নি।
ভুক্তভোগীরা জানান, ২০২২ সালের বন্যায় রাস্তাটির অনেক ক্ষতি হয়। এবারের বন্যায়ও সড়কটি আরো বেহাল হয়েছে। বেরিয়ে পড়ছে ইট সুরকি। তাই চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। রোগীদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে জেলা উন্নয়ন সমন্বয়সভার সদস্য সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান গত রবিবার দুপুরে উন্নয়ন সমন্বয় সভায় আবারও দুর্ভোগ দুর্দশার কথা তুলে ধরেন। এর আগে জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা ডা. তানজিল হকও একই দাবি জানান।
এই এলাকার ব্যবসায়ী জামাল আহমেদ বলেন, বিএডিসির সড়কটি নির্মাণের পর আর সংস্কার হয়নি। সরকারি চারটি অফিসে প্রতিদিন শত শত লোক ও যানবাহন আসে। সড়কটিতে বড় বড় ভাঙনের কারণে গাড়ি মেইন রোডে রেখে আসেন লোকজন। জরুরি ভিত্তিতে সড়কটি সংস্কার করা উচিত।
জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা ডা. তানজিল হক বলেন, আমাদের কার্যালয়ে প্রতিদিন প্রতিবন্ধী শিশু, নারীসহ শারীরিক আঘাতপ্রাপ্ত বয়স্ক লোকসহ নানা বয়সের লোকজন চিকিৎসা নিতে আসেন। তারা আসতে গিয়ে উল্টো আরো আঘাত পাচ্ছেন। তাই সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে আমি উন্নয়ন সমন্বয়সভায় রাস্তাটি জরুরি সংস্কারের দাবি জানিয়েছিলাম। গত রবিবারও পাসপোর্ট অফিসের উপপরিচালক একই দাবি জানিয়েছেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, রাস্তাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি গুরুত্বপূর্ণ চারটি অফিস রয়েছে। রাস্তার অবস্থা এতটাই বেহাল যে চলাফেরা কঠিন। আমরা উন্নয়ন সমন্বয় সভা থেকে সড়কটি সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্টদের বলবো।
সুনামগঞ্জ বিএডিসি’র উপপরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, সড়কটি বিএডিসির সার গোডাউনের নিজস্ব সড়ক। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সড়কটি সংস্কার করে দেওয়ার জন্য লিখেছি।